৩ মে, ২০২০ ০৫:৪১

'খালাম্মা কয়ডা ভাত দেবেন?' সন্ধ্যার পর এই আওয়াজ যেন শুনতে না হয়

ড. মো. আওলাদ হোসেন

'খালাম্মা কয়ডা ভাত দেবেন?' সন্ধ্যার পর এই আওয়াজ যেন শুনতে না হয়

রমজান মাস। বৈশ্বিক সংকট ‘করোনা সংক্রমন’এর ঢেউ বাংলাদেশেও পড়েছে। ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় ঢেউ ছোট হলেও আমাদের মত দেশে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। চলমান সংকট নিয়ন্ত্রনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে দৈনিক ১৮-২০ ঘন্টা নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা’র লাগাম টেনে ধরেছেন। করোনা’র সংক্রমন জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারেনি।

করোনা প্রতিরোধে ‘লক ডাউন’ চলছে। গত ২০ মার্চ থেকে ঘরবন্দী। আমার বাসা পাঁচ তলায়। বাসার দুই দিকে রাস্তা। রাস্তার যে কোন চিৎকার বা আওয়াজ ঘরে বসে অনায়াসেই শুনতে পাই। ইদানিং প্রতিদিন দুপুরে ও ইফতারের পর অনেক বছরের পুরানো আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। “খালাম্মা, চাইড্ডা ভাত দিবেন? তিনডা বাচ্চা নিয়া দুইদিন যাবত খাইনা। অনেক কষ্টে আছি।” করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত  ভাসমান মানুষ, রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, দুস্থদের খাদ্য সহযোগীতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মহনগর (উত্তর, দক্ষিন) এর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ জনকে যথেষ্ট পরিমান ত্রান দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্রান ভান্ডার থেকে প্রতি ওয়ার্ডে আরও ১২০০ লোকের জন্য ত্রান দেওয়া হয়েছে। আমার জানামতে, এছাড়াও আমার এলাকা ও আশেপাশের ওয়ার্ড সমূহে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ নিজস্ব অর্থায়নে রাতের অন্ধকারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে বাড়ী বাড়ী খাদ্যদ্রব্য পৌছে দিয়েছেন। এরপরও ঢাকা মহানগরে ‘ভাতের জন্য ক্ষুধায় মানুষের কান্নার’ আওয়াজ শুনতে চাইনা।

অর্থনীতিবিদগন বলেছেন, করোনা’র মহামারী বা এই ধরনের সংকটের পর সাধারনতঃ যে কোন দেশে প্রথমেই দেখা দেয় খাদ্য সংকট। ডব্লিউএফপি অনুমান করে বলেছে: করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে, ফলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। সরকার বিরোধী সুযোগ সন্ধানীরা দেশে বিশৃংখলা ও রাজনৈতিক অসন্তোষ সৃষ্টি করতে এমনি পরিস্থিতির জন্য ওঁত পেতে থাকে। 

আমার মনে পরে, আমি তখন ৭ম শ্রেনীর ছাত্র, বঙ্গবন্ধুর সরকার ক্ষমতায়, খাদ্যসংকট হয়েছিল। শুনেছি সরকারী সিদ্ধান্ত থাকা সত্বেও সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু কুচক্রী কীটনাশক আমদানীতে বিলম্ব করিয়েছিল, ধান গাছ পোকায় নষ্ট করেছিল, উৎপাদন কম হয়েছিল, সম্ভাব্য সংকট নিরসনে সরকার খাদ্য আমদানী করেছিল। কিন্তু দেশীয় সুযোগসন্ধানীরা আন্তর্জাতিক সহযোগীতায় খাদ্যের জাহাজ বিভিন্ন বন্দর ঘুরিয়ে বাংলাদেশে পৌছুতে বিলম্ব করিয়েছিল। ফলে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কৃত্রিম চাউল সংকট দেখা দিয়েছিল। আমার মা কয়েকদিন আটা ও আলু এক সাথে মিশিয়ে ‘জাউ’এর মত কি একটা রান্না করেছেন। মাঝে মাঝে শুধু আলু সিদ্ধ খাওয়াতেন। সেই সময়ে এই ‘ ভাত’ চেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের চীৎকার শুনেছি।

সেই সুযোগ সন্ধানীদের ঘৃন্য ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে শাহাদত বরন করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। ইতিহাস পাল্টে যায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা শ্মশানে পরিনত হয়। ‘ভাত’ এর ক্ষুধায় অনাহারী মানুষের চিৎকার শুনেছি দীর্ঘদিন। 

২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর পুনরায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার কর্মসুচী হাতে নেওয়া হয়। দীর্ঘ বারো বছর দেশ গড়ার কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন শেখ হাসিনা। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। মুজিব বর্ষ শেষে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সেবামুলক কর্মসুচী বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় বাজেট প্রনয়নে, সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভাসমান মানুষ, রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, দুস্থদের উন্নয়নের বিষয়, গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি বর্ননা করার জন্য এই লেখা লিখতে বসি নাই। কিন্তু, বাস্তবতা পর্যবেক্ষন করার জন্য অনুরোধ করছি। ২০১৪, ২০১৮ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটির আয়োজিত অসংখ্য উঠান বৈঠকে অত্যন্ত আস্থার সাথে মানুষকে বলেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে, বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্ব পরিমন্ডলে মর্যাদাশীল করতে বিরামহীন পরিশ্রম করছেন শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার।

দেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে অদম্য গতিতে। পদ্মা সেতু, কর্নফুলী নদীর নীচে টানেল, ঢাকা খুলনা এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা চট্টগ্রাম ফোর লেন, ঢাকা ময়মনসিংহ ফোর লেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ কিছু সমাপ্ত হয়েছে, কিছু সমাপ্তির পথে। অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ ঘাটতি শূন্যের কোঠায়। বড়লোকের সুরম্য অট্টালিকার পাশাপাশি দিনমজুরের বস্তিও বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদ্যুৎ রপ্তানীর লক্ষ্যে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার করবার বেড়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে অবিশ্বাস্য। একটি দেশ বা পরিবারের শিশুদের চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যায়, সেই দেশ বা পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবস্থা। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র এভাবেই উপস্থাপন করেছি। আমরা বলেছি, আগে গ্রামের মেঠো পথে, শহর এলাকার অলি-গলিতে দেখা যেত একজন মা একটি ছেঁড়া শাড়ী পরে বাড়ী বাড়ী ঘুরছে একমুঠো চালের জন্য। গায়ে ব্লাউজ নেই, পায়ে স্যান্ডেল নেই। পিছনে পিছনে দুই/তিনটা বাচ্চা হাঁটছে। কেহ খালি গায়ে, কেহ বা উলঙ্গ। এমন চিত্র এখন আর বাংলাদেশের গ্রাম বা শহরে নেই। তবে জিরো পয়েন্ট এর ট্রাফিক সিগনালে গাড়ী থামলেই দেখা যায় হাস্যোজ্জল চেহারা নিয়ে বাচ্চারা গাড়ীর গ্লাসে চোখ লাগিয়ে, গাড়ীর ভিতরে বসা সাহেব বা বেগম সাহেবের চোখে চোখ রেখে বলে, “স্যার, ১০টা টাকা দেন না, ভাত খামু”। টাকা দিলে দৌড়িয়ে গিয়ে সড়কদ্বীপে বসে থাকা মায়ের কাছে জমা দেয়। টাকা না দিলেও, ঐ বাচ্চার চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠে না। কারন, পেটে ক্ষুধা নেই। চঞ্চল হরিনের বাচ্চার মত লাফিয়ে লাফিয়ে খেলাচ্ছলে দৌড়ে চলে যায় অন্য গাড়ীর কাছে, বা দুষ্টামী করতে থাকে অন্য বাচ্চাদের সাথে। ওরা অভাবের তাড়নায় ভিক্ষা করছে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, ওদের হাড়িতে ভাতের অভাব নেই। সঞ্চয় আছে বেশ। ভিক্ষাবৃত্তিতে কম পরিশ্রমে অধিক আয়। এটা ওদের পেশা। ঐ বাচ্চাদের গায়ে কাপড় রয়েছে, যদিও ময়লা। কানে লাগিয়েছে ঝুমকা। ওদের মায়েদের পরনে শাড়ীটা ছেঁড়া নয়। ছায়া-ব্লাউজ সহ শাড়ী পরিধান করেছে। কাওরানবাজার ট্রাফিক সিগনালে লক্ষ্য করা যায় পেশাদার ভিক্ষুকের পাশাপাশি, অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে বিভিন্ন ফল বা ছোট ছোট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ফেরী করছে। ওদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেতন স্কেল বৃদ্ধি করেছেন,  বিভিন্ন পেশাজীবিসহ সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুনেরও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। দুইটি ঈদ বোনাসের সাথে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য ‘বৈশাখী বোনাস’ ও দেওয়া হচ্ছে। উপসচিব পদ মর্য্যাদার কর্মকর্তাদের গাড়ী কেনার জন্য বিনা সুদে ব্যাংক লোন দেওয়া হয়েছে। 

দিনমজুরের দৈনিক আয় ৫০০-৭০০টাকা। এরপরও প্রয়োজনে  দিনমজুর পাওয়া যায় না। ধান কাটার মৌসুমে কৃষাণ পাওয়া যায় না। তাই সরকার ভর্তুকি দিয়ে ধান কাটা ও সংগ্রহ করার কাজ যান্ত্রিকীকরন করেছে। করোনা সংকটে এই যান্ত্রিকীকরন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০০ কোটি টাকা প্রনোদনা বরাদ্দ করেছেন।

রিক্সাওয়ালার দৈনিক আয় ১০০০-১২০০টাকা। দৈনন্দিন বাজার-সওদা করে ফিরার পথে বয়স্ক বাবা-মা’র জন্য আধা কেজি আঙ্গুর কিনেন, ছেলে-মেয়ের জন্য এক কেজি আপেল বা কমলা নিয়ে, স্ত্রীর পছন্দনীয় কিছু একটা কিনে আনতেও ভুলেন না। এরপর কিছু সঞ্চয়ও করেন, নিয়মিত। সুখের সংসার। রিক্সাওয়ালা, দিনমজুরেরা ক্রয় করে তাই, আঙ্গর, বেদানা, নাশপাতি, আপেল, কমলা এখন দামী দোকানের কাঁচের শো-কেইচ থেকে বেরিয়ে বস্তির মোড়ে বা মহল্লার গলির মাথায় ভ্যানগাড়ীতে শোভা পাচ্ছে। দৈনিক ভালই বিক্রয় হচ্ছে মনে হয়, না হয় প্রতিদিন এই বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসছে কেন?

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যা নিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি স্বাধীন ভুখন্ঠ নিয়ে পেয়েছি আমরা। এ জমিতে যে পরিমান ফসল ফলানো হতো, তাতে আমাদের খাদ্য সংকুলান হতো না। আমদানীর উপর নির্ভর করতে হতো। বর্তমানে সেই একই জমিতে জনসংখ্যা ১৮ কোটিতে দাড়িয়েছে। বিডিএস এর তথ্য অনুযায়ী ২৭% কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, কল-কারখানা, ইত্যাদি। তারপরও শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা ও মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন করেছে। চাল, আলু, সবজি রপ্তানীও হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা এখন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবরূপ নেওয়ার দোড়গোড়ায়। 

এমনি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে করোনা কোভিড-১৯ ভাইরাসের এর সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা ভাইরাস মহামারিকে বৈশ্বিক সংকট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংস্থাটির মতে করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট বিশ্ব সংকট, সংক্রমণ ও মৃত্যু ছাড়াও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করবে। এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। 

আমরা সংকটকাল অতিক্রম করছি। আগামীদিনগুলো কেমন হবে, একমাত্র আল্লাহই জানেন। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি গত ১ সপ্তাহ ধরে একইরকম আছে। পাঁচশো’র আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। পরীক্ষাও হচ্ছে ৫ হাজারের আশেপাশে। মৃত্যুর সংখ্যা ওঠানামা করলেও একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। যা বলা হয়, তাতে করোনা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হচ্ছে না। আবার নিম্নগামিতার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আতঙ্কের এবং উদ্বেগের। কারণ এটা থেকে একটা জিনিস প্রমাণ হয় যে, করোনা পরিস্থিতির সর্বোচ্চ চূড়ায় বাংলাদেশ এখনও পৌঁছেনি বা বাংলাদেশে এখনও করোনার পিক টাইম আসেনি।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের  ৫৩তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। করোনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আগামী ৭ দিন  বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৬০তম দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে করোনা সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তৃতি হয়েছে কিনা বা করোনার সংক্রমণ চূড়ান্ত অবস্থা বা পিকে পৌঁছেছে কিনা।

শুক্রবার (১ মে) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিন অনুযায়ী করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮২৩৮ জন। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশী হতে পারে। কারন, সারাদেশ থেকে টেষ্ট করার আবেদন জানিয়ে যত সংখ্যক টেলিফোন কল আসে, সেই সকল টেষ্ট করার সক্ষমতা আমাদের নেই। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৮০০জন। দুঃখজনক হলেও, মৃত্যু সংখ্যা ১৭৪ জন। আমার এলাকা ৫৩ ওয়ার্ডের জুড়াইনে সরকারী হিসাবে ২৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। পাশের এলাকা যাত্রাবাড়ীতে ৭৭ জন। জুড়াইনের ২৪ জন সকলেই বাড়িতেই কোয়ারেনটাইন। অর্থ্যাৎ ২৪ পরিবারই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। এর মধ্যে তিনজন দোকানদার। ওনারা করোনা’র লক্ষন দেখার আগেরদিন পর্যন্ত দোকানদারী করেছেন। এই দোকানদাররা কতজন কাষ্টমারকে করোনা আক্রান্ত করেছেন, ক্রমেই বের হবে। চারজন একই কারখানার শ্রমিক। যদিও কারাখানাটি লকডাউন করা হয়েছে। এমনি পরিস্থিতি সারা ঢাকা শহরে। 

করোনা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়নি। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে প্রবাসীরা যখন দেশে ফিরছিলেন, তখনই উচিত ছিল নিয়ন্ত্রন করা। ২৫ ফেব্রুয়ারী জাপান থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন, জাপান আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজি মাহফুজুল হক লাল। পরদিনই হন্তদন্ত হয়ে আমার বাসায় আসলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, দেশে হচ্ছেটা কি? দেশেতো মহামারী লেগে যাবে”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন, কি হয়েছে? উনি বললেন, “আমি সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা আসলাম। টোকিও ও সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে অনেক কড়াকড়ি। আমার পাসপোর্টটাও কেহ হাত দিয়ে স্পর্শ করলো না। সকলেই করোনা নিয়ন্ত্রনে নিরাপত্তাবলয় থেকে কাজ করছে। যাত্রীদের পরীক্ষা করছে। অথচ ঢাকায় হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্টে কেহ কিছু জিজ্ঞাসাও করলেন না। উপযাচক হয়ে আমি ইমিগ্রেশন অফিসারকে মাস্ক কেন পরেননি জিজ্ঞাসা করাতে, তিনি উত্তরে বললেন,  এটা চায়নার সমস্যা। আমাদের কিচ্ছু হবে না। চায়নার ফ্লাইট আসলে মাস্ক পরবো”। আমি স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে ফোন করে বিস্তারিত বললাম। তিনি বললেন,”অভিযোগ ঠিক না। এয়ারপোর্টে সব ব্যবস্থা নেওয়া আছে।” এই হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় “সব ঠিক আছে” রিপোর্টের অবস্থা।
 
যাই হোক প্রবাসীরা দেশে ঢুকে পরেছে। কেহ অসুস্থ হয়েছে, কেহ সুস্থ আছে। এই অ‌সুস্থরা হাসপাতালের যাওয়ার আগ পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে যে সংখ্যক লোককে সংক্রমিত করেছে এবং এই সংক্রমিতদের দ্বারা আরও যতজন সংক্রমিত হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত এই সকল রোগীকে শনাক্ত করে হাসপাতাল বা ঘরবন্দী করতে পারলেই, করোনা নিয়ন্ত্রনে আসবে। 

করোনা মোকাবিলায় লকডাউন বহাল রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই মূহুর্তে জীবিকার চেয়ে জীবন গুরুত্বপূর্ণ। জীবন বাচলে, জীবিকার ব্যবস্থা হবে, আল্লাহই করে দিবেন। করোনা মোকাবিলায় লকডাউন কার্যকর করা জরুরী।

ডব্লিউএফপি বলেছে, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে। বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। এই অনুমান নির্ভর করে ইতোমধ্যেই ভারত, রাশিয়া সহ বেশ কিছু দেশ খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশে এই সংকট মোকাবিলায় দুশ্চিন্তার কোন কারন নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত দক্ষ নেতা রয়েছেন। বাংলাদেশের উর্বর মাটি, অসংখ্য জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিল, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করায় অভিজ্ঞ কৃষক ও বিজ্ঞ কৃষিবিদগন আমাদের গর্ব। সর্বোপরি মহান আল্লাহ আমাদের উপর সহায় রয়েছেন। প্রতিবছরেই বাম্পার ফলনে প্রকৃতি আমাদের সহায়ক হিসাবে কাজ করে। বোরো ধান কাটার মওসুম চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে  কৃষিমন্ত্রনালয় পরিবার বোরো ধান সংগ্রহের কাজে কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে। কৃষান সংকট মোকাবিলা করতে মাঠে নেমে ধান কাটায় অংশ নিয়েছে ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ। কৃষি মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানালেন, “ধানের ফলন ভাল হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ লাখ টন অতিরিক্ত ধান কৃষকের ঘরে উঠবে।

কিন্তু লক্ষনীয় হলো যে, করোনা মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৈনিক ১৮-২০ ঘন্টা পরিশ্রম করছেন, দেশের ৬৪ জেলায় করোনা মোকাবিলায় কর্মরত প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডাক্তার, নার্স, জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম সকলের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রন করছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন বিভিন্ন জেলার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বহীনতা এবং প্রস্তুতিহীনতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। করোনা মোকাবেলায় যে তাঁরা কার্যত কিছুই করেননি এবং সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে লোক দেখানো কিছু আয়োজন করেই দায় সারতে চেয়েছেন- এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই জানালেন মহানগর হাসপাতালের ছবি তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে এন-৯৫ মাস্ক বলে যে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে তা আসল এন-৯৫ মাস্ক নয়, শুধু প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটাও জানালেন যে, যারা এগুলো সাপ্লাই দিচ্ছে, তাঁরা সঠিকভাবে সাপ্লাই দিচ্ছে কিনা তা যাচাইবাছাই করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধান নির্বাহী এবং সরকার প্রধান। তাঁর এরকম একটি বক্তব্যের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সব জায়গায় চিঠি পাঠিয়ে খোঁজ নেয়া,  কোথায় কোথায় এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা জানতে চাওয়া। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উল্টো পথে চললো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আধা ঘন্টার মধ্যে সিএমএইচডি-এর পরিচালক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন অসত্য তথ্য দিয়েছেন। পরের দিন একইভাবে ঐ একই ব্যক্তি মিডিয়ার সামনে এসে আবারও আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাফাই গাইলেন।

করোনা প্রতিরোধে লক ডাউন চলছে, সরকারী ছুটি চলছে। ডিএমপি ঘোষনা করেছে, ঢাকার লোক বাইরে যেতে পারবেন না, বাইরের লোক ঢাকায় আসতে পারবেন না। বিকেএমইএ, বিজিএমইএর নেতাদের নির্দেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলা হলো, কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর বা কর্তৃপক্ষ  কিছুই জানে না। আরও অবাক ব্যাপার হলো, সরকারী আদেশে গনপরিবহন চলাচল বন্ধ, এই শ্রমিকগুলি চাকুরী বাঁচাতে কিভাবে ঢাকা আসবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে কি না, সেব্যাপারে বিকেএমইএ, বিজিএমইএর নেতারা চিন্তাও করলেন না। অথচ ঐ মিটিংএ উপস্থিত বিকেএমইএ,  বিজিএমইএর নেতাদের সকলেই এমপি, মন্ত্রী বা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দেশে করোনাভাইরাসের সন্ত্রাসের মাঝে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি কেন খোলা হচ্ছে সেটা করোনা মোকাবেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি হয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় একদম কিছুই জানেন না।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক, অত্যন্ত জনপ্রিয় কলাম লেখক পীর হাবিবুর রহমান সাহেব উনার একটি কলামে লিখেছেন, “একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর কোনো ভরসা নেই। শেখ হাসিনা কথা বললে জনগণ সাহস মনোবল, শক্তি, আশা খুঁজে পায়। একমাত্র তিনিই পরম বিশ্বাস ও ভরসার জায়গা”।

করোনা সঙ্কটের সময় মন্ত্রনালয়েও সমন্বয়ের অভাব। ধর্ম মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে ইসলামী ফাউন্ডেশন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে মসজিদে তারাবী নামাজের জামাতে ১২ জনের বেশি জমায়েত না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ডিএমপি ইফতারির দোকান বসার অনুমতি দিয়েছেন। ইফতারি কেনার জন্য হুড়োহুড়ি, চায়ের দোকান খোলা, সেখানে কী সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব মানার দরকার আছে কি না সেটা কেউ জানেন না।

ইসলামী ফাউন্ডেশন এর নির্দেশনা থাকা সত্বেও, গাজীপুরের মেয়র মসজিদে নামাজ পড়া উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন! ধর্ম মন্ত্রনালয়ের চাপে, পরবর্তীতে আবার তিনি সে ঘোষণা ফিরিয়েও নিয়েছেন, যদিও অনেক মুসল্লিই জানেন না।

ধান কাটার জন্য যখন কৃষকদেরকে সংগঠিত করা এবং ধান কাটার জন্য যেন মানুষ যেতে পারে সেই ব্যবস্থার জন্য কৃষিমন্ত্রীর উদ্যোগ সচিবালয়ের আমলাদের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়েছিল বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। 

করোনাভাইরাসের এই দুঃসময় কবে শেষ হবে, সেটা কেউ জানে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে দৈনিক ১৮-২০ ঘন্টা নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা’র লাগাম টেনে ধরেছেন। করোনা প্রতিরোধে ‘লকডাউন’ এর কারনে দুস্থদের সরকারীভাবে এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা, দেশপ্রেমিক বিত্তবানরা যথেষ্ট পরিমান খাদ্য ও ত্রানসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। নিম্মবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, যারা ক্ষুধার্ত থাকলেও হাত পেতে চাইতে পারেন না, তাদের জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাবারের ব্যবস্থা করছেন। রেশন কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেশের ৫ কোটি মানুষকে খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। করোনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বা বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়হীনতা ও মালিকদের অতিলোভে গার্মেন্টস ও কল-কারখানা খোলার কারনে, অথবা হাইব্রিড আওয়ামীলীগ বা কাউয়াদের ব্যর্থতার কারনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রম করা সত্বেও, আল্লাহ না করুন, যদি আমরা করোনা যুদ্ধে হেরে যাই, তবে তার ভয়াবহতা একবার ভাবুন। আমেরিকা, ইউরোপে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্বেও করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেই পরিস্থিতি হলে আমাদের দেশের কি অবস্থা হবে? 

“বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে” : ডব্লিউএফপি এর অনুমান যদি সত্যি হয়, যদি কৃষিতে উৎপাদন কম হয় এবং ভারত, রাশিয়া সহ বেশ কিছু দেশ খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তখন আমাদেরকে নিজস্ব কৃষির উপর ১০০% নির্ভর করতে হবে। যদি কৃষক ও কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়হীনতার কারনে লক্ষমাত্রা অর্জিত না হয় বা কৃষিমন্ত্রনালয়ের চেষ্টা থাকা সত্বেও ১৯৭৪ এর মত সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের কারনে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য আমাদের সকলকেই খেসারত দিতে হবে। 

সুতরাং এমপি, মন্ত্রী, সরকারী সকল উর্ধতন কর্মকর্তা, দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাজের সকল সচেতন নাগরিকের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, দেশ ও দেশের মানুষকে টিকিয়ে রাখা এবং নিজ পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে, সকলেই সজাগ সচেতন ও আন্তরিক হই। সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সমন্বয় করে কাজ করি। করোনা’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। ‘খালাম্মা কয়ডা ভাত দেবেন? বাচ্চাগুলা নিয়া কষ্টে আছি”- সন্ধ্যার পর এই আওয়াজ শুনতে চাইনা, “। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘করোনা যুদ্ধে’ আমরা জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর