৩ মে, ২০২০ ০৮:২৩

কাল রাত্রির (কালরাত্রির!) অভিজ্ঞতা

অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়

কাল রাত্রির (কালরাত্রির!) অভিজ্ঞতা

অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়

মানুষ গৃহবন্দী হবার ফলে পশুপক্ষীদের মধ্যে যে কিছু বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে তা হয়তো অনেকেই লক্ষ্য করেছেন। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অনেকেই বলছেন যে বহু ভুলে যাওয়া পক্ষীকুলের কলকাকলী শোনা যাচ্ছে। ভাগ্যক্রমে আমাদের বাড়িটার চারপাশে এখনও সবুজের সমারোহ থাকায় আমরা সারা বছরই পক্ষীকুলের সান্নিধ্য অনুভব করি। তবে এবার যেন তার বৈচিত্র্য আরও বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে তাদের এক অদ্ভুত স্বভাব, সারারাত ধরে ডাকাডাকি। এ স্বভাব আগে লক্ষ্য করিনি। আমার পরম শ্রদ্ধেয়া বৌদি অবশ্য বলেন, যেহেতু আমি বাড়ির চারপাশে জোরালো সুরক্ষাবাতি লাগিয়েছি, ওরা মাঝে মধ্যেই রাতকে দিন মনে করে খানিকটা চেঁচিয়ে আবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঘুমিয়ে পড়ছে। হতেও পারে! একরাত আলো নিবিয়ে রেখে পরীক্ষা করতে হবে।

অবসর নেবার পর থেকে আমার ঘুমের সময়ের কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ যখন ঘুমোয় তখন আমি জেগে থাকি আর দিনের বেলা যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ি। স্বয়ং প্রিয়া বলেন, আমি নাকি দিন দিন প্যাঁচার মতো হয়ে যাচ্ছি। উক্তিটি কতটা প্রকৃতিগত আর কতটা আকৃতিগত কারণে করা তার গভীরে যাবার চেষ্টা করিনি তবে আমি সানন্দে বাকী জীবনটা আমার গৃহলক্ষ্মীর বাহন হয়ে কাটাতে রাজী আছি। 

এবার আসি কাল রাত্তিরের কথায়। মাঝরাতে হঠাৎ একটা অচেনা পাখীর ডাক শুনতে পেলাম। শুনলাম ডাকছে “ঠিইইক আছে, ঠিক আছে। ঠিইইক আছে, ঠিক আছে।” খানিকক্ষণ শুনে ভাবলাম এ বোধহয় পাখীদের সেই রাতকানা চৌকিদার যে থেকে থেকে “Aal ij vell” বলে চিৎকার করে। কিন্তু খানিক পরেই শুনি সে বলছে “সিঁধ কাটা সিঁধ কাটা।” চমকে উঠে বসে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম সত্যিই কেউ সিঁধ কাটছে কিনা। তারপর শুনি তার ডাক পাল্টে গেছে। সে ক্রমাগত বলছে “ঠিইইক আছে ঠিক আছে, ঠিইইক আছে ঠিক আছে, সিঁধ কাটা।” এইবার বুঝলাম ব্যাটা পক্ষীকুলের কোন লগ্নী সংস্থার দালাল। ঠিক আমাদের লগ্নী সংস্থাগুলি যেমন লগ্নী করার ব্যাপারে সব রকম আশ্বাস দিয়ে শেষে ছোট ছোট অক্ষরে লিখে দেয় যে লগ্নী বাজারের ওঠাপড়ার ওপর নির্ভরশীল, কাজেই লগ্নী করার আগে সব কাগজপত্র ভালো করে পড়ে নেবেন। যাই হোক, পাখীটি খানিকক্ষণ ডাকার পর থেমে গেল। হঠাৎ শুনি আশেপাশের অসংখ্য পাখী একযোগে কলরব শুরু করেছে। তারা আর থামেই না! বুঝলাম লগ্নী সংস্থাটি লালবাতি জ্বেলেছে এবং লগ্নীকারীরা তাদের পুঁজি ফেরৎ চাইছে। কিন্তু চাইলে কি হবে, সেই সংস্থা বা তার দালাল কি আর এ তল্লাটে আছে? তারা কখন কেটে পড়েছে! পাখীদের চেঁচামেচি চলতেই থাকলো। বিব্রত হয়ে কি করবো ভাবছি এমন সময়ে অকস্মাৎ একটা হেঁড়ে চেরা চেরা গলার পাখীর ডাক ভেসে এলো। পরিস্কার শুনলাম “বন্ধুগণ”। আশ্চর্য! এক লহমায় সব পাখীরা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো! কেবল কতগুলো কোকিল কুহু কুহু রবে বোঝাবার চেষ্টা করতে লাগলো যে যদিও এখন গ্রীষ্মকাল, কিন্তু বসন্তের সুসময়ের মলয় বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এরপর আজকালকার সব বুদ্ধিমান মানুষ যা করেন, আমিও তাই করলাম অর্থাৎ দুই কানে ছিপি এঁটে ঘুমিয়ে পড়লাম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর