৪ মে, ২০২০ ১৭:৫৪

অনামিকা চুপ...

হাসিনা আকতার নিগার

অনামিকা চুপ...

হাসিনা আকতার নিগার

মানুষের চোখ আছে দেখার জন্য। মুখ আছে বলার জন্য। আর বিবেক আছে ন্যায় অন্যায়, সঠিক বেঠিক বিবেচনার জন্য। তবে সমাজের বিবেকটা এখন ক্ষমতাবানদের কাছে বন্ধকী সম্পত্তি। তাই সাধারণ মানুষ অন্ধ ও বধির হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। এ অবস্থায় আজম খানের গানের দুটি শব্দ ' অনামিক চুপ' খুব প্রযোজ্য মানুষের জন্য। 

সারা দুনিয়াতে করোনাভাইরাস ছাড়া আর কোনো কথা নেই। এ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে মরিয়া সবাই। প্রতিটা দেশ নিজেদের অবস্থাকে সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে। অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে।  আর লক্ষনীয় হলো স্বাস্থ্যখাতের নাজুক পরিস্থিতি। স্বাস্থ্যসেবায় দুর্বলতা কেবল বাংলাদেশ নয়, উন্নত বিশ্বেও প্রতীয়মান। তারা তাদের সে দুর্বলতাকে অস্বীকার করছে না। বরং জনগণের সামনে সমস্যা তুলে ধরছে। নিজেদের পরিকল্পনা শুধু বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। কার্যকর করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অনিয়ম দুর্নীতি তাদের কাছে অচিন্তনীয়। তবে দেশের চিত্রটা তেমন নয়।    

বাংলাদেশ উন্নত দেশ নয়। চিকিৎসাসেবার সমস্যাগুলো ছিল আগে থেকেই। তবে কোভিড ১৯ এর কারণে সে সমস্যাগুলো আরও বেশি প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতাল হচ্ছে কিন্তু সরঞ্জাম নেই। আইসিইউ, ভেন্টিলেশন সিস্টেম কেন নেই তা বুঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এ স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দকৃত টাকার অপব্যবহারের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম করোনাভাইরাসের মাঝেও চলমান। 
  
আর সে কারণে কোভিড-১৯ এর পিপিই, মাস্ক ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কথা বললে চিকিৎসকের চাকরি নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে খবর হারিয়ে যায়। কারণ ক্ষমতাবানদের কাছে অসহায় সাধারণ  মানুষ। 

করোনাভাইরাসের চিকিৎসা যারা দিবে সে চিকিৎসককে সুস্থ থাকতে হবে সবার আগে। তারাই যদি শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ না থাকে তাহলে মানুষ সেবা পাবে না। এ সত্যটা বুঝার জন্য বিবেককে জাগ্রত করা এখন খুব প্রয়োজন।

একজন চিকিৎসক একজন মানুষ। তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে সমস্যা নিয়ে কথা বলা অন্যায় নয়। বিবেক আর আবেগ থাকলে অসহায়ত্ব মেনে নেয়া যায় না। কেন চিকিৎসকরা এত বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তা খতিয়ে দেখার বদলে শোকজ নোটিশ, ওএসডি করে দেয়াটা নৈতিক শক্তির দুর্বলতার লক্ষণ।        

কোভিড-১৯ এমন এক ব্যাধি যার কোনো ওষুধ নেই। একমাত্র সুরক্ষার পদ্ধতি অবলম্বন করে চলছে মানুষ বাঁচানোর চেষ্টা। হাসপাতালগুলো এখন পর্যন্ত প্রস্তুত হতে পারেনি সেবাদানের জন্য। এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। কারণ টেস্টের কিট, সিস্টেম সব কিছুতে আছে দুর্বল ব্যবস্থাপনা৷    
  
সমস্যার শেষ নেই। এর মাঝেই সরকার প্রধান আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ পেতে। তবে দুঃখের বিষয় হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা মানতে নারাজ। তাই সাধারণ জনগণের চুপ থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ তারা এখন নিরুপায়।

লেখক : কলাম লেখক।  

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর