১১ মে, ২০২০ ১৯:১৭

করোনায় মানবতার দৃষ্টান্তে শীর্ষে বাংলাদেশ

এম এস দোহা

করোনায় মানবতার দৃষ্টান্তে শীর্ষে বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

করোনা যুদ্ধে মানবতার দৃষ্টান্তের শীর্ষে বাংলাদেশ। মানবতাপ্রেমী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের খোরশেদ এখন আলোচনায়। চলছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হৈ চৈ। আবার লকডাউন উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাযায় লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণের বিষয়টিও ছিল টপ অপ দ্যা করোনা ওয়ার্ল্ড। ধর্মীয় রীতি-নীতি ও সামাজিকতা পালনে করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে সমাবেত হয় জনগণ।

সোস্যাল মিড়িয়ায় তুলোধুনো করা হয় হুজুরদের। প্রশাসন সরাইল ও আশুগঞ্জের প্রায় ৩৫ হাজার লোককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখে। ১৪ দিন পর দেখা গেল সবকিছু স্বাভাবিক। কোন আক্রান্ত নেই। এটাও ছিল বাংলাদেশের জন্য করোনাকালীন সময়ে আরেকটি আলোচিত বিষয়। যা বিশ্ববাসীর কাছে নতুন এক বাংলাদেশের পরিচিতি পায়।

উল্লেখ্য, করোনা আমাদের করেছে মনুষ্যত্বহীন। হাঁচি, কাশির ভয়ে আমরা পারিবারিক ও সমাজিকভাবে এখন বিচ্ছিন্ন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে মনে হয়, করোনা আক্রান্ত হওয়াটাই বড় ধরনের অপরাধ! চলমান অসংখ্য মানবিক ও দুঃখজনক ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধির পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ব্যাথিত। ধর্মীয় আলেমরা মর্মাহত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মৃত্যুর পর করোনা রোগীর দেহে উপসর্গ থাকে না। কিন্তু তারপরও স্বাভাবিক ও করোনা আক্রান্তের মরদেহ নিয়ে হচ্ছে অসংখ্য অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

অপ্রিয় হলেও সত্য, করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য রোগীদের আশেপাশে যেতে নারাজ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। হাঁচি কাশি দেয়া ভোটারের টেলিফোন ধরতেও ভয়পান তারা।

ধন্যবাদ প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি করোনা রোগীদের খোঁজ খবর নিতে স্বশরীরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এর সাথে বিশ্ববাসী বাহবা কুড়ান নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মাকসুদুল আলম খোরশেদ। মানবিক দুসাহসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি আমাদের জনপ্রতিনিধিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক অবক্ষয় উপেক্ষা করে স্থাপন করেছেন মানবিক দৃষ্টান্ত।

চোখের সামনে মৃতদেহ পড়ে থাকলেও ধরছে না পরিবারের লোকজন। প্রতিবেশীরাও রেখেছেন দরজা বন্ধ করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকা সেই মৃতদেহের পাশে ‘আশীর্বাদ’ খোরশেদ। সঙ্গে আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঝুঁকি জেনেই ধরেন মৃতদেহ। তারপর নিয়ে যান কবরস্থান ও শ্মশানে হিন্দুদের কেউ তাকে বলছেন ভগবানের দূত, আর মুসলিমরা বলছেন ফেরেশতা। এ কারণে দেশ-বিদেশে তার নাম প্রবলভাবে হচ্ছে আলোচিত। ২৭এপ্রিল পর্যন্ত হিন্দুধর্মের ৬টি মুখাগ্নিসহ ৩৫টি লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। স্থানীয়দের কেউ তাকে উপাধি দিয়েছেন ‘করোনাবীর, কেউ বলেন ‘করোনাযোদ্ধা’।

উল্লেখ্য, মানবিক দিক বিবেচনা করে বিষয়টি মাথায় আসে খোরশেদের। কারণ মানুষের বিপদের দিনেই পাশে থাকা জরুরি। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তিনি এ কাজে ব্রত হন।

খোরশেদ বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অনুরোধ মাস্ক ও গ্লাভস পরে যে কোনো করোনা রোগীর সেবা করুন। ভয়ের কোন কারণ নেই। দয়া করে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের মৃত্যুর পর তাদের সম্মান রক্ষা করুন। হিন্দু-মুসলিম কোনো ধর্ম নিয়ে নয়। মানুষের প্রতি মানবতা নিয়ে এগিয়ে আসুন।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্মশানে করোনা আক্রান্ত হিন্দু ব্যক্তির লাশের সৎকারের ছবি ডাচ রাজনীতিবিদ জোরাম জারন ভ্যান ক্লাভেরনের নজর কাড়ে। এই রাজনীতিবীদ ২০১০ সালের ১ জুন থেকে ২০১৪ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের একজন পার্লামেন্ট মেম্বার ছিলেন।

মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের জন্য বিশ্বব্যাপী তিনি সুপরিচিত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তিনি একটি ইসলাম বিরোধী বই লেখা অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিনি ‍নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে নারায়ণগঞ্জ শ্মশানঘাটে খোরশেদের তত্বাবধানে করোনা আক্রান্ত এই হিন্দুর মরদেহ সৎকারের ছবি শেয়ার করে স্ট্যাটাস দেন। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়।

এই এমপি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ছবিগুলো বাংলাদেশ থেকে তোলা। যেখানে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে একজন হিন্দু ভাই মারা যান। তার সম্প্রদায়ের কিংবা পরিবারের কেউই ভয়ে অংশগ্রহণ করেনি সৎকার কাজে।

খোরশেদের নেতৃত্বে একদল মুসলমান লাশটির সৎকারে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিয়ে তা সম্পন্ন করেছিলেন। এটি ইসলামের সম্প্রীতি ও শিক্ষার সত্য লক্ষণ। কিছু দিন আগে আমি ভারতের অনুরূপ সংবাদ পড়েছি। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানি না। আমি জানি এটি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তারা এতো ধনী নয়। তবে তাদের হৃদয় সমুদ্রের মতো। যারা প্রায় মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী দিয়েছেন আশ্রয়। আমি এই দেশকে এবং এর জনগণকে সালাম জানাতে চাই। ভারত কি তাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে?’

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর