১৩ মে, ২০২০ ১৬:৫২

প্রেম যুক্তি মানে না আর পারুলদের থেকে শিক্ষা নেয় না নারীরা

হাসিনা আকতার নিগার

প্রেম যুক্তি মানে না আর পারুলদের থেকে শিক্ষা নেয় না নারীরা

হাসিনা আকতার নিগার

স্বপ্নের মতো সাজানো হয় না জীবন। জীবনের সাথে লড়াই করে চলা মেয়েও হোঁচট খেয়ে পড়ে। তা দেখে অবাক হবার কিছু নেই। কারণ মানুষের জীবনে কঠিন বাস্তবতার মাঝেও আবেগ, ভালোবাসা, প্রেম বিরাজ করে। মানুষ যন্ত্র নয় বলে জীবনে প্রেম আসে। সে প্রেম থেকে বিয়ে, সংসার, সন্তান হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মনের হিসেবেটা এত সহজ নয় বলে পারুলরা সমাজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিক পারুল আর প্লাবনের  বিবাহ বিচ্ছেদ, মামলা নিয়ে অনেক আলাপচারিতা চলছে। অনেকের কাছে প্রশ্ন, পারুল স্বাধীনচেতা সাংবাদিক হয়ে কেন প্লাবনকে চিনতে ভুল করলো। এর উত্তর একটাই ' প্রেম অন্ধ।' 

প্রেম আর মোহ এ দুটি শব্দকে খুব সহজে চেনা যায় না। কারণ জীবনে ভালোবাসার রূপেই প্রেম আসে। সেখানে মোহ থাকে আড়ালে। বাস্তবতার মুখোমুখি হলেই মোহ হয় প্রকাশিত। যা স্বপ্নময় জীবনকে তছনছ করে কেবল। মোহ কেটে যেতেই বিষাদের সুর বেজে উঠে। ভাংগে সংসার। সইতে হয় মানুষের গঞ্জনা। এ ক্ষেত্রে নারীদের দোষই খুঁজে বেশি সমাজ।

পারুল আর দশটা নারীর মত মোহের স্বীকার হয়েছে। প্লাবনের ভালোবাসাতে বিশ্বাসের যে ঘাটতি ছিল তা আঁচ করতে পারেনি সে। কারণ আবেগী মন পারুলকে শুধু আগামীদিনের ভালোবাসার সংসারে সাজাতে ব্যস্ত রেখেছে। তাই সাংবাদিক, শিক্ষিতা মেয়ে পারুল কেন ভুল করল তা বলাটা অন্যের কাছে সহজ। কিন্তু পারুলের পক্ষে অতীতটা এখন নির্বাক শব্দ। 

আমাদের সমাজে প্রতিদিনই পারুলের মত ঘটনা ঘটে। যা উদাহরণ হয়ে থাকে শুধু। কেউ  এর থেকে শিক্ষা নেয় না। বিয়ে যেমন একটা স্বাভাবিক বিষয় তেমনিভাবে মতের অমিল বা অন্য কারণে বিয়ে বিচ্ছেদও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ছল চাতুরী করে বিয়ে করা ও বিচ্ছেদ ঘটানো সম্পূর্ণভাবে  নীতিহীন কাজ। পারুল যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতন ও ভ্রুন হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে প্লাবনের বিরুদ্ধে। আইনত পারুল ন্যায় বিচার  পাবে কিনা তা বিচারিক বিষয় এখন। তবে প্লাবন-পারুলের তালাকটি কিভাবে সম্পন্ন করছে তা জানা যায়নি এখন অবধি। আইনি প্রক্রিয়াতে তালাক কার্যকর হবার মেয়াদ সম্পন্ন না হলে আর একটি বিয়ে করা যায় না। 
তবে তালাকের কাগজের ছবি পারুলকে পাঠিয়ে দিয়ে আরেকটি বিয়ে করতে যাওয়া প্লাবন প্রমাণ করেছে, এ সমাজে নারীরা এখনো উপেক্ষিত। একজন পুরুষ ইচ্ছে করলে তারা পৌরুষত্ব দেখিয়ে তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করতে পারে। আর ক্ষমতাবান হলে পোয়াবারো। আইনের তোয়াক্কাও করে না।  
  
দেশে নারী নির্যাতন আইনের কঠোরতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে সব শ্রেণিতে নারীরা। কেউ মুখ খুলে হয় আলোচিত। আবার কেউ নীরবে মেনে নেয় এ অবিচারকে। কারণ সামাজিকভাবে নারীকে মানিয়ে নেয়ার কথা বলে পার পেতে চায় সকলে। একজন নারী হেয় হলে পরিবার তা লুকিয়ে রাখে আত্মসম্মানের ভয়ে। যা থেকে নারীরা মেরুদণ্ড সোজা করে বাঁচার সাহস পায় না। বরং নিজের সত্যকে আড়াল করে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ায় প্রতি মুহুর্তে। তবে নিজের প্রতি অন্যায়কে মেনে নেয়াটা সমীচীন নয়। আর প্রতিবাদ করাকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না। কারণ লোকচক্ষুর ভয়ে নারীকে অবদমিত করাটা সমাজের রীতি। তবে পারুল সে পথে হাঁটবে না বলে এ বিশ্বাস আছে সকলের।  

সাংবাদিক পারুলের সাথে প্লাবনের হটকারিতা এখন আর ব্যক্তি পর্যায়ের ঘটনা নয়। তাই দেশের সাংবাদিক সমাজের আত্মমর্যাদাশীল নারী হয়ে পারুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা দেশের মানুষের। যা উদাহরণ হয়ে ভালোবাসার মোহে পা বাড়াবার আগে নারীদের সজাগ করবে।

লেখক : কলামিস্ট।  

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর