১৩ মে, ২০২০ ২১:৩২

ভিক্ষা দেয়া সংস্কৃতি আমরা লালন করি!

রহমান শেলী

ভিক্ষা দেয়া সংস্কৃতি আমরা লালন করি!

রহমান শেলী

ভিক্ষাবৃত্তি আমরা লালন করি। এক কোটি টাকার মালিক থেকে শুরু করে এক হাজার কোটি টাকার মালিক পর্যন্ত সবাই আমরা ভিক্ষা দেই। ভিক্ষা দেয়ার অনুষ্ঠান আয়োজন করি। ক্যামেরাম্যান ভাড়া করে ছবি তুলি। সোস্যাল মিডিয়াতে দেই। পত্রিকায় নিজের চেহারা ছাপাই। কিন্তু ভিক্ষুকদের কোন কর্ম - সংস্থান হয়েছে এসব ছবি দেখি না। তাদের ছবি ছাপাই না।

ভিক্ষা দেয়ার চেয়ে তাদের কর্ম - সংস্থান দিয়েছি, এই ছবি দেখতে আরও অনেক সুন্দর লাগে। তখন যে এই খবরটি দিল, আমরা সে খবর পড়ে সহজেই বলে দিতে পারি, ব্যক্তিটি কতো ব্যক্তিত্বপূর্ণ। এমনকি তার চেহারা না দেখেও বলে দিতে পারি অসাধারণ সুন্দর তার চেহারা! এমন লোকটিকে না দেখেও ভক্তি করতে মন চায় আমাদের!

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের এই সময়ে দেখেছি, মানুষ একটি মাস্ক দেয়ার জন্য পনের থেকে বিশ জন ছবি তুলেছে। এটাকে একটি সমাজচিত্র যদি বলি, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য এটা খুবই লজ্জিত বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আপনি হয়তো বিবেকহীন হয়ে এই কাজটি করলেন। কিন্তু আপনার পরবর্তী প্রজন্ম বলবে, লজ্জিত হলাম জনাব!

সাধারণত চার ধরনের ভিক্ষুক দেখা যায় সমাজে। প্রতিবন্ধী, শিশু ও মহিলা, পেশাদার এবং মৌসুমী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ নিয়ে কাজ করে। ভিক্ষুকদের নিয়ে তালিকা করাও তাদের কাজে পরে। কিন্তু এই মন্ত্রণালয় এই তালিকা নাও করতে পারে, কারণ ভিক্ষাবৃত্তি পুলিশ আইন তথা ডিএমপি আইনে অপরাধ। তাই তালিকা হয়ে গেলে আইনের আওতায় চলে আসবে। ভিক্ষুকরা বিপদে পরতে পারে তখন। সে ক্ষেত্রে নামের জায়গায় ভিক্ষুক না লিখে নিম্ন-আয়ের মানুষ লিখতে পারে। কিন্তু তাতে প্রকৃত চিত্র আমরা নাও পেতে পারি।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশ থেকে ভিক্ষুক দূর করা হবে৷ সরকার ইতিমধ্যেই ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য পরিকল্পনার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে বলে জানি। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ণ এতো সহজ হবে না হয়তো। সরকার তো চায়। কিন্তু আমরা সমাজের তথাকথিত বড়োলোক মানুষরা তা চাই কিনা ব্যাপারটা তার উপর নির্ভর করবে ভিক্ষাবৃত্তি থাকবে, নাকি চলে যাবে।

এই সমাজ পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি। অনেক কিছুই পারি। যেমন, কাজের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, বিনামূলে রিকশা বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ অথবা ছোট ছোট দোকান করে দেয়া৷বিশেষ করে কর্মমুখী কিছু করে দেয়া।

ভিক্ষা দেয়া মহৎ গুণ! কিন্তু কতোটুকু মহৎ এটি! আমরা যদি কারো খিদের জন্য মাছ ধরে রান্না করে খাইয়ে দেই, তাহলে বলবে, ভালো বন্ধু! আর যদি, মাছ ধরা শিখিয়ে দেই। তাহলে বলতে হবে, প্রকৃত বন্ধু! ভিক্ষুক জাতি হিসেবে পরিচিত দিতে না চাইলে, এখনই সবাইকে মাছ ধরা শিখাতে হবে বা শিখতে হবে।

লেখক: কথা সাহিত্যিক ও পুলিশ সুপার।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর