২১ মে, ২০২০ ১৬:৫৪

আর কত কি দেখতে হবে কে জানে!

হাসিনা আকতার নিগার

আর কত কি দেখতে হবে কে জানে!

হাসিনা আকতার নিগার

চারদিকে করোনাভাইরাস ছাড়া কোন আলাপ নেই। জীবন, রাজনীতি, অর্থনীতি সব কিছুতে ভগ্নদশা সুস্পষ্ট।  নিরব নিশ্চুপতায় কোভিড-১৯ হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে। আর মানুষ লকডাউনকে তোয়াক্কা না করে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনে। অদ্ভুত এক পরিবেশে অজানা এক শঙ্কায় ভুগছে মানুষ। দেশের চিকিৎসা ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। সরকারের টাকাকে এ মহামারীর কালেও লুটপাট করছে  কিছু অসাধু ব্যক্তি। এসব দেখে ক্লান্ত জনগণ। কিন্তু এ দেখার শেষ কোথায় তা কেউ জানে না।   

কোভিড-১৯ অনেক সত্যকে উন্মোচন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর প্রচেষ্টা হলো দেশের মানুষকে ভালো রাখা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, এ প্রচেষ্টাকে নষ্ট করছে কিছু মানুষ জনগণের হক মেরে দিয়ে। যার প্রতিফলন হয় যখন সরকার প্রধান ত্রাণ চুরির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দেয়ার পরেও এসব মানুষের অপকর্ম থামে না। দরিদ্র মানুষের এককালীন ২৫০০ টাকা বা ওএমএসের তালিকায় প্রভাবশালীদের নয়ছয়ের সাক্ষী এখন দেশের সাধারণ মানুষ। নেতাদের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে স্বচ্ছতা আশা করা অসম্ভব। কারণ তারা তাদের খুশিমত তালিকা তৈরি করে। আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তা যাচাইবাছাই করার কোন পদ্ধতি নেই মাঠ পর্যায়ে। সুতরাং সরকারের সাহায্য সঠিক ব্যক্তিরা শতভাগ পাচ্ছে না এটাই সত্য।    
 
এ মহামারির অবসান হবে কবে তা অনিশ্চিত। লকডাউনের শিথিলতাতে মানুষ কাজ আর নিত্য প্রয়োজনে ঘরের বাইরে এখন। অভাবের কারণে মৃত্যু করোনার চেয়েও  ভয়ঙ্কর। সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে শিল্প কারখানা চালু করেছে। তবে সীমিত আকারে এখন আর কিছু নেই। জনবহুল দেশে সীমিত শব্দটি আসলে যুক্তিযুক্ত নয়। 

মুসলমানদের কাছে ঈদ বিশেষ উৎসব। তবে এ বছরের ঈদ অন্য সময়ের মত হবে না, তা মানুষ মানতে পারছে না। বিধি নিষেধ না মেনে ছুটছে গ্রামের দিকে। করোনাভাইরাসের বাহক যে মানব শরীর এ কথাটা সবার জানা। তা সত্ত্বেও গণপরিবহন বন্ধ রেখে থামানো যাচ্ছে না মানুষকে। 

যে বাঁচার সে বাঁচবে আর মরার হলে মরবে- এ ধরনের মানসিকতা যেন দেশের সবার মাঝে। তাই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে দেশ যাচ্ছে। তার ইঙ্গিত বহন করে ঈদ মার্কেট। সামাজিক দূরত্ব শুধু কথার কথা। তার আরেক প্রমাণ হলো কোভিড-১৯ এর কারণে মৃত্যু হলেও সত্য গোপন করা। একজনের করোনাতে মৃত্যু হলে পরিবারকে সামাজিক ভাবে হয়রানি হতে হয়। আবার লকডাউনের ভয়েও সত্য বলে না। তাই এখন ভিন্ন কারণে মানুষের মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে। মৃত্যু নিয়ে এসব বির্তকের কারণ হলো টেস্টের স্বল্পতা। অন্যদিকে ভিন্ন রোগের কারণে মৃত্যু হলেও লাশ দাফন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে করোনাভাইরাস সন্দেহে। চিকিৎসা খাতের দুর্বলতার ফলে টেস্টের রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। আর সে কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষ।
 
কোভিড-১৯ এর দুর্যোগ সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। এ স্থবিরতার মানুষকে এক নতুন পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে সঠিক নিয়ম মেনে জীবনযাপন ছাড়া বিকল্প কিছু থাকবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ কতটা স্বচ্ছতা নিয়ে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় চলবে তা দেখার অপেক্ষা পালা এখন। কারণ নিয়ম আর ন্যায় নীতি বোধ অনেকটাই বিসর্জিত শব্দ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায়।

লেখক : কলামিস্ট।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর