১৮ জুন, ২০২০ ১২:৫৮

কেউ কেউ সুখী হবার চেষ্টাটাই একটা অসুখ, যার কোনো ওষুধ নেই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

কেউ কেউ সুখী হবার চেষ্টাটাই একটা অসুখ, যার কোনো ওষুধ নেই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

জীবনে বড় হতে কি লাগে? টাকা, সম্পদ, ভোগ বিলাস, লোভ, চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি, টাকা পাচার, শক্তি, ক্ষমতা? না কোনোটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকে হয়তো হাসছেন, আরে লোকটা বলছে কি? এ যুগে এমন কথা কি চলে? না লোকটা বোধ হয় প্রাচীনমনাই থেকে গেলেন। আমি অবশ্য এটা বিশ্বাস করি না। ভালো কিছু করে ত্যাগের মনোভাব ধরে রাখাই আধুনিকতা আর খারাপ কাজ করে ভোগ করাই হচ্ছে প্রাচীনতা। খুব সাধারণ একটা দৃষ্টান্ত দিচ্ছি, আগে রাজারা রাজ্য শাসন করতেন, প্রজাদের নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। সব রাজারা যে এমনটি করতেন তা নয় তবে বেশিভাগ রাজাদের মধ্যেই এই মনোভাব প্রচলিত ছিল। এই রাজারা প্রজাদের টাকা থাকুক বা না থাকুক টাকা আদায় করেই ছাড়তেন। আর সেটা প্রজারা দিতে না পারলে তাদের জীবনে নেমে আসতো অমানবিক আঘাত, নির্যাতন, অপমান।

সেই প্রাচীন আমলের রাজাদের কাজগুলোকে কি আপনি ভালো ভাবছেন? আমার তো মনে হয় না। সাধারণ মানুষের দয়ার দানে তাদের তাদের চলতে হতো। কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে ত্যাগ করতো প্রজারা আর তার সুফল ভোগ করতো রাজারা। কে মহান? ভেবে দেখুন? তাহলে অশুভ চিন্তা হচ্ছে প্রাচীনতা আর শুভচিন্তা হচ্ছে আধুনিকতা। 

দুর্নীতি করতে করতে আপনার অনেক টাকা হয়েছে, সম্পদ হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার বললেন, আপনার ক্যান্সার হয়েছে আর বাচঁবেন না। টাকা দিলে বাঘের দুধও মিলে কিন্তু মৃত্যুকে কি আপনি কিনতে পারবেন? কখনো না। তার মানে টাকা কোথাও কোথাও মূল্যহীন। কখনো কখনো মানুষ মূল্যহীন। একজন খুব বড় মাপের অধ্যাপক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। কেউ তার দায় দায়িত্ব নিতে চাইলো না। চেনা মানুষেরাও অচেনা হয়ে গেলো। হয়তো মানুষটা বেওয়ারিশ লাশ হতে পারতো। শেষে উনার বিদেশ প্রবাসী ছেলের সাথে কয়েকবার যোগাযোগের পর তাকে ফোন পাওয়া গেলো। সেও তো নিজের ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশে চলে গেছে। অনেকটা উদাস হয়ে সে বললো উনার কবরের ব্যবস্থা করেন আর ভিডিওটা আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন। এই তো জীবন। এই তো মানুষ। যেখানে অনেক সময় সম্পর্ক মূল্যহীন।

কি হবে বড়াই করে, কোনো লাভ তো নেই। কি হবে এতো অর্থ, সম্পদ জমা করে। সব যে মায়া, সব যে মোহ। টলস্টয়ের কতটুকু জমি চাই এ দেখানো হয়েছে একটা মানুষ সম্পদ অর্জনের জন্য দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে। যতই দৌড়াই ততই তার লোভ বাড়ে। লোভের যেন শেষ হয়না। কিন্তু কি লাভ সারাজীবন এভাবে অর্থ আর সম্পদের পিছনে দৌড়ে। শেষ পর্যন্ত বেলা শেষে মানুষের জীবনে জোটে সাড়ে তিন হাত মাটি। এতটুকুই তার জন্য বরাদ্দ। কমও নয়, বেশিও নয়। হয়তো এ জন্য তিনি ভেবেছেন- সবাই পৃথিবী পরিবর্তন করার চিন্তা করে, কিন্তু কেউ নিজের মনের পরিবর্তন করতে চায় না। মনের পরিবর্তনটায় যে বেশি দরকার তা আমরা বুঝিনা, বোঝার চেষ্টা করিনা। হয়তো এটা জীবনের একটা ডামি লজিক যার কোনো মূল্য নেই। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন "সম্পদের সুষম বন্টন হলে পৃথিবীতে কখনো দুর্ভিক্ষ হতো না।" কথাটা খুব সত্যি। সব জায়গায় ভারসাম্যহীনতা, অসামঞ্জস্যতা, অনিশ্চয়তা। এটার একটা সমাধান দরকার। মানুষের টাকা আর সম্পদের একটা সীমা থাকা দরকার, একটা সীমান্ত দরকার। অর্থের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধের চর্চা বেশি দরকার। কেউ কেউ সুখী হতে পারে না, সবাইকে নিয়ে সুখী হতে হয়। কেউ কেউ সুখী হবার চেষ্টাটাই একটা অসুখ, যার কোনো ওষুধ নেই।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর