৯ জুলাই, ২০২০ ২২:১০

আর কত শাহেদের কথা জানতে হবে জাতিকে

হাসিনা আকতার নিগার

আর কত শাহেদের কথা জানতে হবে জাতিকে

হাসিনা আকতার নিগার

সামাজিক ও গণযোগাযোগ মাধ্যমে এমন কি লোকজনের আলাপচারিতায় এখন একটাই খবর 'রিজেন্ট হাসপাতাল ও শাহেদ করিমের প্রতারণা ৷'  খবর দেখে মানুষ প্রথমে শাহেদ করিমকে চিনতে পারেনি। কিন্তু ছবিতে নজর পড়লেই বিস্মিত হচ্ছে। 

কারন টিভি চ্যানেলগুলোর টকশো'র অতি পরিচিত মুখ এই শাহেদ করিম। তার নামের সাথে উপাধিটি শারীরিক অবয়বের মতোই ভারী। টিভি স্ক্রলে নামের পাশে 'রাজনৈতিক বিশ্লেষক' লেখাটি দেখলে তাকে বোদ্ধা শ্রেণির মানুষ ভাবাই স্বাভাবিক। 
সাধারণ মানুষের কাছে টকশো এর অতিথিরা দেশের সুশীল সমাজের সদস্য হিসাবে সমাদৃত। ধারণা করা হয় এরা দেশ, রাজনীতি সমাজ নিয়ে চিন্তা করে৷ এরা দেশ ও সমাজের মুখপাত্র। তাছাড়া টকশো-তে আমন্ত্রিত কি হতে পারে প্রজ্ঞাবান না হলে।   তাই আজ যখন শাহেদ করিমের আমলনামা প্রকাশ হচ্ছে তখন মানুষের বিষম খাওয়ার যোগাড়। ভদ্রবেশী লেবাসধারী শাহেদ মানবসেবার নামে মানুষকে করেছে বিপদগ্রস্ত। কাজে কর্মে বাটপার অথচ মুখে মিথ্যা কথার ফুলঝুড়ি। 

কোভিড-১৯ কে পুঁজি করে শাহেদ  করিম একদিকে ধনী হবার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে, গণমাধ্যমে বাহবা কুড়িয়ে মহান হবার চেষ্টায়রত ছিল। কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাস, শাহেদকে করোনাভাইরাস সামাজিকভাবে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। আইনের বিচারে তার পরিনতি কি হবে তা সময় বলে দিবে। তবে এ মহামারীর সাথে শাহেদ করিম ও রিজেন্ট হাসপাতালকে মানুষ মনে রাখবে এটাই সত্যি। 
 
বাংলাদেশের দূর্নীতির ইতিহাসে যোগ হলো আরেকটি উপমা। তবে এসব দুর্নীতিবাজদের কোনও রাজনৈতিক বিশ্বাস বা মানুষের প্রতি ভালোবাসা নেই। এরা কেবল গিরগিটির মত রং বদল করে সময় ও সুযোগ বুঝে। যার প্রমাণ শাহেদ করিম। তার বিচরন ছিল সর্বক্ষেত্রে। 

এখন প্রশ্ন হলো দেশের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, কর্মকর্তাদের কাছে সে কি করে গেল। কোন খুঁটির জোরে সে কোভিড-১৯ নিয়ে প্রতারণার খেলাতে মত্ত হয়েছে। আর যারা এ সুযোগ  করে দিয়েছে তার কি জানত না শাহেদের অতীত ইতিহাস। কেউ দোষী হলে রাজনৈতিকভাবে  বিপক্ষের লোক বলে সিলগালা লাগিয়ে দিয়ে আর কতকাল পার করবে রাষ্ট্র । 

শাহেদের আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করলে সাদা চোখে যে বিষয়টা উঠে আসে তা হলো, তার গনমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ততা ও সখ্যতা। বলা হয়ে থাকে সাংবাদিকের চোখ হলো উৎসুক দৃষ্টি।  শাহেদ দীর্ঘসময় ধরে গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের সাথে বিচরণ করছে। অথচ তাকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন জাগেনি।  এ অন্ধত্ব সাংবাদিকতার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। তাই প্রশ্ন জাগে, টকশো-তে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের তকমা লাগিয়ে প্রমোট করার উদ্দেশ্য কি শুধুই ব্যক্তি স্বার্থ নাকি অন্য কিছু?

দেশের জাতীয় বা বিশেষ অনুষ্ঠানে শাহেদ করিমের মত অনেকেই আজকাল আমন্ত্রণ পায়। সেখানে সেলফি তুলে নিজের ক্ষমতা জাহির করে নানাভাবে। এসব নব্য পদবিধারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমেই চলে যায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে। আবার জাতীয় অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেতে কত ধরনের তদবির চলে তা অনেকেই জানে। 

অসৎ উদ্দেশ্যের ব্যক্তিদের কাছে এ ধরনের অনুষ্ঠান হয় লোভনীয়। কারণ ক্ষমতাসীন দল বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এর চেয়ে ভালো কোনও সুযোগ নাই। পরিতাপের বিষয় হলো দল বা সমাজের সম্মানিত ও অনেক যোগ্য ব্যক্তি সারাজীবনেও আমন্ত্রণ পায় না গণভবন বা বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানে। 

সুচতুর শাহেদ গণমাধ্যমের বর্তমান সময়ের ট্রেন্ডকে ব্যবহার করে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যায় টকশো করে। আর সে সাথে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা তাকে প্রতারণার সব রাস্তা উন্মোচন করে দিয়েছে। আজ অনেকেই শাহেদ করিমের বিষয়ে নীরব বা তাকে না চেনার ভান করছেন। কিন্তু তাদেরকেই ব্যবহার করে শাহেদ করিম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছে। 

একজন দুর্নীতিবাজ প্রতারক শাহেদের জন্ম একদিনে হয় না। কিংবা সে একা অন্যায় করে পাহাড়সম বিত্তশালী হতে পারে না। তার দুর্নীতির পিছনে থাকে বিশেষ শক্তি। আর সে শক্তিকে বধ করতে না পারলে শাহেদ করিমের মত মানুষের বিনাশ হবে না দেশ থেকে।         

শাহেদ করিমের মতো দুর্নীতিবাজরা এখন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কারণ অর্থের লোভে যারা এদের প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা কখনোই সরকার সুহৃদ ব্যক্তি নয়। তাই দীর্ঘ দিন ক্ষমতাসীন থাকা আওয়ামী লীগকে সচেতন থাকাটা জরুরী। অপরাধীরা নানা ভাবে দলে জায়গা করে নিয়েছে বা নিতে চাওয়াটা এখন স্বাভাবিক। আর তাদেরকে চিনে নিতে না পারলে তার ব্যর্থতার দায় নিতে হবে দলকেই।
      
কেবল দামী কাপড়ে মুজিব কোট পরিধান করলে বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে বুকে ধারণা করা যায় না।  কোভিড-১৯ আওয়ামী লীগকে যে সত্য উন্মোচিত করে দিচ্ছে তা অনেক শিক্ষনীয়। এ শিক্ষা উপেক্ষিত হলে জাতিকে আরও দুর্নীতিবাজ প্রতারক  শাহেদ করিমকে চিনতে হবে আগামীতে। যা সরকার ও জনগণের জন্য হবে কেবল হতাশাজনক।


লেখক: কলামিস্ট।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর