২২ আগস্ট, ২০২০ ০০:৩৬

গ্রিক সাম্রাজ্যের বাঁকা চাঁদের দ্বীপে

নাজমুন নাহার

গ্রিক সাম্রাজ্যের বাঁকা চাঁদের দ্বীপে

নাজমুন নাহার

গ্রিক সাম্রাজ্যের সান্তরিনি দ্বীপে এজিয়ান সমুদ্রের মধ্যখানে চাঁদের মতো বাঁকা এই দ্বীপটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ। ভলকানিক মাউন্টেনের উপর গড়ে উঠেছে এই দ্বীপটি। পুরো দ্বীপটির প্রতিটি ঘরবাড়ি সাদা আর নীল রঙের, আর এটিই এই দ্বীপের বৈশিষ্ট্য। এই সুন্দর দ্বীপটির পূর্বের ইতিহাস খুবই কষ্টের, কয়েক হাজার বছর আগে সমুদ্রের জ্বালামুখ থেকে আসা আগ্নেয়গিরির বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল পূর্বের জনবসতি এবং দ্বীপের বিশাল অংশ, আর তারই ধ্বংসাবশেষ হিসেবে রয়ে গেছে বাঁকা চাঁদের মত একটি খণ্ড। যা আজকের সান্তরিনি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত।

এজিয়ান সমুদ্রের সাইক্ল্যাডিজ দ্বীপের মধ্যে সান্তরিনি অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতাব্দীতে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। তারপর বিধ্বস্ত হওয়া সেই নগরে ঠিক বাঁকা চাঁদের যে একটি খণ্ড রয়ে গিয়েছিল যার প্রাকৃতিক দৃশ্য রূপায়িত হয় পৃথিবীর এই অপূর্ব সুন্দর আজকের এই সান্তরিনি দ্বীপ।

একটি গড়ে উঠেছে অপরূপ ভাবে। একদিন আমি এর পর্বত চূড়া থেকে সমুদ্রের কোলে উদীয়মান সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে গ্রীক সাম্রাজ্যের এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম এই নগরীর হাজার বছরের সেই ইতিহাসে।

এই দ্বীপের আনাচে-কানাচে রয়েছে কালো, লাল এবং সাদা লাভা নুড়ি দ্বারা তৈরি দেওয়াল, রাস্তা। এখানে প্রত্যেকটি স্থানে ওইয়ার হোয়াইট ওয়াশড, কিউবিফর্ম বাড়িগুলো একটি ডুবো জলছবির মত আঁকড়ে আছে সমুদ্রের তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের বিধ্বস্ত হওয়া সেই ইতিহাস।

এই দ্বীপের প্রতিটি মানুষের গায়ে সাদা সাদা জামা কাপড়, প্রত্যেকটা ঘরবাড়ি, হোটেল, রেস্টুরেন্টের গায়ে গায়ে সাদা আর নীল রং জুড়ে রয়েছে। ২০০৭ সালে আমি সুইডেন থেকে গিয়েছিলাম গ্রিসের এই মনকাড়া অপূর্ব দ্বীপে কাছ থেকে দেখার জন্য।

হাজার হাজার বছর পূর্বে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ দ্বারা বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। ভূ-তাত্ত্বিক বিস্ময়কর রূপ আজকের এই দ্বীপটির। সান্তরিনি বিশ্বের প্রাকৃতিক আশ্চর্যের এক বিশাল আয়োজন।

এর দুর্লভ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ক্যাল্ডেরা, অসাধারণ আগ্নেয় জলাশয় এবং চন্দ্র ভূদৃশ্য এক আকস্মিক রূপের ভেতর আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম আনমনে।

এই দ্বীপের উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্য দেখতে আমি ভুলিনি। আমার দেখা পৃথিবীর অনেকগুলো দ্বীপের মধ্যে একটি অসাধারণ দ্বীপ যা আমাকে এখনো বারবার টেনে নিয়ে যায়। এর জীবন চিত্র ও প্রাকৃতিক রূপ যেন সাদা সাদা স্বর্গপুরীতে রূপায়িত করেছে দ্বীপটিকে।

সান্তরিনির প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ এটির সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে চিত্রিত করে। এটির  আকর্ষণীয় যাদুঘরগুলোর ও পাঁচটি স্টুপেন্ডাস ক্যাসল রয়েছে যা মুগ্ধ করার মতো। এই দ্বীপের মজাদার দুর্দান্ত সুস্বাদু খাবারগুলো আমাকে বইয়ের পাতায় পড়া গ্রিক রাজ্যের রাজাদের বিলাসী খাদ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই খাবারগুলোর স্বাদ এখনো আমার জিভে লেগে আছে।

শুধু তাই নয়, সান্তরিনির আদর্শ জলবায়ু, এর উজ্জ্বল সূর্য আমাকে মনমুগ্ধ করে রেখেছিল। এই দ্বীপের ওয়া নামক একটি গ্রামে আমি বিশ্বের সেরা সূর্যাস্ত দেখেছি।
 
এই দ্বীপের চিত্তাকর্ষক সমুদ্রের চন্দ্র রাতের বিছানা, ঘোড়ায় চলাচল, প্রকৃতির ট্রেলগুলো গ্রিক সাম্রাজ্যের এই দ্বীপে কাটানো মুহূর্তগুলোকে অনন্যভাবে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে আমার বিশ্ব ভ্রমণের স্মৃতিতে।

এই অসাধারণ দ্বীপটির কানায়-কানায় রয়েছে প্রচুর আকর্ষণ এবং ক্রিয়াকলাপ, নির্মলতা এবং বিনোদনের সংমিশ্রণ এবং একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা। যা এখনো বহু বছর পরেও আমি যখন চোখ বন্ধ করি তখন আমার আত্মাকে অসাধারণ অনুভূতি দিয়ে যায় বারবার। যে স্থানটি এক কথায় রোমান্টিক এবং অবিস্মরণীয় প্রাকৃতিক জাদুতে নিমজ্জিত। বারবার মনে হয় যদি আবার দেখা হয় কোন দিন এই দ্বীপ শহরের প্রতিটি স্থানের সাথে, তবে মন্দ হবে না দ্বিতীয়বার আবার তাকে নতুন করে দেখে নিতে।

লেখক : বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী, ১৪০ দেশ ভ্রমণকারী।
 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর