২৫ আগস্ট, ২০২০ ১৫:০৫

সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার প্রবণতা এক ধরনের ব্যাধি

হাসিনা আকতার নিগার

সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার প্রবণতা এক ধরনের ব্যাধি

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। এক মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যায় ইমেইল, ফেইসবুক, ভাবার, টিকটকসহ কত কী? পারিবারিক জীবনে এখন পারস্পরিক আলাপচারিতা কমে যাচ্ছে। কারণ সবাই হাতের মোবাইলে থাকে ব্যতিব্যস্ত। এমন কী কোন দাওয়াত বা অন্য কোন সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুখ্য বিষয় হয় ফেসবুকে ছবি, স্ট্যাটাস দেয়া।  যার ফলে এ সামাজিক মাধ্যম ব্যক্তি জীবনে  অনেক সময় অশান্তির কারণ হয় অকারণে।

আরিফা দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক বিমুখ ছিল। কিন্তু কৌতূহলবশে একাউন্ট খুলে এখন সংসারে অশান্তি ডেকে এনেছে। ফেসবুকে স্কুল কলেজের পুরনো বন্ধুদের পেয়ে যারপরনাই খুশি হয় সে। কাজ কর্মের ফাঁকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, চ্যাটিং নিয়ে তার স্বামীর মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সন্দেহ প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। আরিফার মতো পারিবারিক অশান্তি অনেক ঘরেই আজকাল বিদ্যমান। যা সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়।

অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হয় তরুণ-তরুণীরা। অনেকে ভুল করে বিপথে চলে যাচ্ছে। কারণ প্রযুক্তির এ বিশাল ভান্ডারে রয়েছে হাজারো অলি গলি। যা নেশার মত টানে মানুষকে। তাই বলা হয় ফেসবুক মাদকের নেশার চেয়েও খারাপ। সুতরাং তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে ডিভাইসের ব্যবহার কতটুকু করা প্রয়োজন তা নিজেকে ঠিক করতে হবে। তা না হলে ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে  ভারসাম্য রক্ষা করা অসম্ভব। 

সাম্প্রতিককালে  যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হলো, ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার প্রবণতা। মানুষ  নিজের ব্যক্তিগত বিষয়াদি স্ট্যাটাস দিয়ে উদগ্রীব থাকে লাইক শেয়ার আর কমেন্ট নিয়ে। কথায় আছে, প্রযুক্তি মানুষকে আবেগহীন করে। তাই শুধু অন্যের কাছে আকর্ষিত হবার জন্য সব কিছু সামজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা শ্রেয় নয়। অনেক সময় একটা লাইক বা কমেন্টের আশায় নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে ফেলে।

পুঁজিবাদী সমাজে তথ্য প্রযুক্তিতে নতুন নতুন পদ্ধতির  সংযোজন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ যত বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার ততবেশি আয়। কোভিড-১৯ এর ঘরবন্দি সময়ে ফেসবুক টেলিভিশন চ্যানেলের জায়গা অনেকটাই দখল করে নিয়েছিল। ফেসবুক লাইভে চ্যানেলের টকশোসহ নানা মানুষের আলাপচারিতা চলতে থাকে রাত অবধি। গণমাধ্যমের আগে সামাজিক মাধ্যমে খবর চলে আসে আজকাল। পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তে। এ এক অদ্ভূত নেশা সারা দুনিয়াতে। বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচানোর চেয়ে লাইভে আসা জরুরি হয়। লাইভে এসে স্ত্রীকে খুনের ঘটনা দেখেছে দেশের মানুষ। কে আগে পোস্ট  দিবে তা নিয়ে চলে একধরনের প্রতিযোগিতা। এর পাশাপাশি কিছু মানুষ ফেসবুক, টিকটক ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা পাবার জন্য অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে থাকে। যা সমাজে এক ধরনের  ব্যধিতে পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। নিজের প্রতিভার  বিকাশ ঘটানো অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে তার জন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার। সে সাথে বুঝতে হবে, নিজে যা করছে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। একটা লাইক বা কমেন্ট জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হতে পারে না। নিজের অবস্থান পরিবেশ মাথায় রেখে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করা প্রয়োজন। সে সাথে মনে রাখতে হবে সামাজিক মাধ্যমের বন্ধু হলো ভার্চুয়াল জগতের ব্যক্তি। এখানে ভালো-মন্দ যাচাই করার দৃষ্টিভঙ্গি সবার এক নয়। তাই নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজের অবস্থান থেকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহার সম্পর্কে।

ফেসবুক এখন নিত্য জীবনের সাথী। আর এ সাথীর টান এমনই, একটা নোটিফিকেশনের শব্দে একবার ঢুঁ মারলে পার হয় ঘণ্টা। এতে করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শারিরীক-মানসিক শক্তির ক্ষয় হয়। এছাড়া যার যত বেশি বন্ধু সে তত বেশি জনপ্রিয় হবে এ প্রবণতা থেকে অনেকই যাচাই বাছাই না করে বন্ধুত্বের সম্পর্কের তৈরি করে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে এ ফেসবুকের মাধ্যমে।

পৃথিবীতে সমতালে পথ চলতে পারাটাই নিজের মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আমাকে সবাই চিনতে হবে, জানতে হবে এ মনোবৃত্তি নিয়ে যা খুশি করা সুস্থ চিন্তা নয়। এছাড়া প্রত্যেকের স্বকীয় রুচিবোধ, চিন্তা চেতনা দিয়ে ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারলেই ভার্চুয়াল জগতে গড়ে উঠে আপন জগত। যেখানে জনপ্রিয় হওয়ার প্রতিযোগিতা থাকে না। বরং সুস্থ চিন্তার মাধ্যমে জানা যায় বিশাল এ বিশ্বকে। পারস্পরিক মতামত আদান প্রদানে যে যার ক্ষেত্রে পরিচিত হয় ও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

লেখক: কলামিস্ট

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর