৮ অক্টোবর, ২০২০ ১১:০৬

গুজব নয় সত্যিটা বলুন...

বাণী ইয়াসমিন হাসি

গুজব নয় সত্যিটা বলুন...

বাণী ইয়াসমিন হাসি (ফাইল ছবি)

যেকোন আন্দোলন মানেই গুজবের মহোৎসব। গতকাল সারাদিন ফেসবুকজুড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নামে একটা ভুয়া চিঠি এবং ফটোশপ করা কয়েকটা পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হলো। আমার প্রশ্ন হলো এগুলো কার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে আসে?

ডাকসু নির্বাচনের আগেও একটা ভুয়া প্রেসরিলিজ ভাইরাল করা হয়েছিলো। তখনও আপত্তি করেছিলাম। বলেছিলাম এসব করে বরং নূরকেই হাইলাইট করা হচ্ছে। হয়েছিলোও তাই। শেষপর্যন্ত নূরই ডাকসুর ভিপি হলো।

বেগম খালেদা জিয়ার নাতনী জাইমা রহমানকে নিয়ে দুইদিন পর পর ভুয়া ভিডিও বানানো হয়। ফেক নিউজ করানো হয়। সেইসব ভিডিও এবং নিউজ লিংক ওয়ালে ওয়ালে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন পেজ খুলে এগুলো আবার বুস্টও করা হয়। দেখি আর ঘেন্না লাগে। এত সস্তা মানসিকতা; এগুলো যে ফেক সেটা দুধের শিশুও বোঝে। কার বুদ্ধিতে, কার মদদে এসব ফালতু কাজ করা হয়?

দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী যে সেন্টিমেন্ট সেটাকে আমি শ্রদ্ধা করি, ধারণ করি, সমর্থন করি। সরকার বিরোধিতা নাকি ন্যায়বিচার? সব পজিটিভ ব্যাপারগুলোই তিতা বানিয়ে ফেলে একটা বিশেষ গোষ্ঠী। যেকোন ভালো উদ্যোগকেই এরা নিজেদের এজেন্ডা সেটিংয়ে নিয়ে যায় তারা। এতে তাদের লাভের হিসেব মিললেও একটা ভালো সম্ভাবনা শেষপর্যন্ত মাঠে মারা যায়। 

ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা যে ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে দেশবাসী ইতিমধ্যেই তাদেরকে বয়কট করেছে। একটা শুভ উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য তাদেরকে ধিক্কার জানিয়েছে। ফটোশপ করা পোস্টার ভাইরাল করে বরং তাদের পাপটাকে হালকা করা হলো।

র‌্যাব সদস্যদের সাথে কালপ্রিট দেলোয়ারের একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। চাপে পড়ে র‌্যাব ১১ এই ছবিটার একটা ব্যাখাও দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, মৃত্যুভয়ে ভীত দেলোয়ারকে স্বাভাবিক করতে এবং দেলোয়ারের আস্থা অর্জনের জন্য তারা এই সেলফি তুলেছে। আচ্ছা এবার আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেন তো। র‌্যাবের মোবাইলে তোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় কিভাবে? আমাদের পরিমিতিবোধের এত অভাব!

প্রতিদিন ইনবক্সে ডজনে ডজনে লিংক পাই। কেউ কেউ আবার লিংকের সাথে লিখে পাঠায়- ভাইরাল করুন। আমি এমন ম্যাসেজ দাতাদের নাম দিয়েছি ভাইরাল ভাইবোন। এই ভাইরাল ভাইবোনেরা বুঝে আবার কখনো বা না বুঝেই গুজব ছড়ায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এদের অধিকাংশই নিজেদের টাইমলাইনে এগুলো শেয়ার করে না। কোনকিছু পোস্ট বা শেয়ার করার আগে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হোন। কারো ফাঁদে পা দেবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনের যুগে অনেক সময়ই আপনার টাইমলাইন আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় হয়ে ওঠে। তাই আগে যাচাই করুন তারপর শেয়ার করুন।

আমি অনেক বড় বড় মানুষদেরকেও দেখেছি নিজের টাইমলাইনে ভুয়া লিংক শেয়ার করতে। অনেক মন্ত্রী এমপিও না বুঝেই এমন নিউজ লিংক শেয়ার করেন পরবর্তীতে সেটা গুজব হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আমাদের অধিকাংশ লোকজনের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। নিজের সংক্রান্ত যেকোন পজিটিভ নিউজ হলেই হলো। সত্য কি মিথ্যা একবারও যাচাই করেন না। নিজে এবং নিজের অনুসারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে শেয়ার করা শুরু করে দেন। দুই একটা উদাহরণ দিই। 

১. প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে ওমুক ওমুক...

২. মন্ত্রীসভায় রদবদল; আসছে নতুন মুখ। আলোচনায় যারা...

৩. সবচেয়ে সফল মন্ত্রী যারা ... ( ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রীর চামচাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন লিংক শেয়ার করেন; যেখানে তার মন্ত্রীই এক নম্বরে থাকেন)

এমন ডজন ডজন কাহিনী রয়েছে। মেধাহীন, কমিটমেন্টহীন একপাল লোভী শঠ নেতা তৈরি হচ্ছে। এরাই বিভিন্ন চেয়ারগুলো দখল করছে। একটা অমানবিক ‌,অসহিষ্ণু, লোভী, পরশ্রীকাতর জাতিরাষ্ট্রের সব ধাপ পার করছি আমরা।

লেখক : সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর