মধ্যবিত্ত সচেতন এক পরিবার কোভিড-১৯ নিয়ে শুরু থেকেই নিয়ম মেনে চলছে। কিন্তু বিধাতা ভাগ্যের লিখনে এত বড় মহাপ্রলয় লিখে রেখেছে তা কেউ জানত না। দেশে করোনাভাইরাস বলে কিছু আছে তা আজকাল মানুষ যেমন মনে করে না তেমনটা পরিবারের কর্তাব্যক্তিটিও ধারণা করে নিয়ম মানতে নারাজ। আর এ অবহেলাতে পরিবারে সবাই করোনাভাইরাস পজিটিভ হয় তার মাধ্যমে। চরম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি। শারীরিক অসুস্থতার সাথে সাথে পরিবারের সকলের সামনে এখন একটাই প্রশ্ন হাসপাতালের খরচ বহন করতে গিয়ে কতটা নিঃস্ব হতে হবে তাদের কে জানে।
জীবন বাঁচানোর এ লড়াই শুধু অসুস্থ ব্যক্তির একার নয়, সমগ্র পরিবারের। একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারকে শারীরিক মানসিক আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। কারণ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। রোগীর সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যখন বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া গত্যন্তর থাকে না, তখন মনে হয় এ ভাইরাসের থেকে মুক্তি মিলবে না অর্থ ছাড়া।
প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টাতে কত পরিবার ভোগান্তিতে পড়ছে তা দেখা যায় হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের সামনে। একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাসপাতালের বিল আতঙ্ক, আর অন্যদিকে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় মানুষগুলোকে। কারণ করোনাভাইরাস মহাপ্রলয়ের মতো শরীরের অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে চলে যায়। যার ফলে রোগীর ঠিকানা হয় হাসপাতালের আইসিইউ। সেখান থেকে যারা ঘরে ফিরে তাদের চলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা।সাদা চোখে মনে হয় কোভিড-১৯ কমে গেছে। কারণ মানুষ নিয়ম মানে না, টেস্ট করতে নারাজ। এছাড়া দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে কোভিড-১৯ নিয়ে জনসচেতনতা কার্যক্রমে শিথিলতা বিরূপ প্রভাব ফেলছে মানুষের মাঝে। জীবনের তাগিদে কর্মক্ষেত্রে যেতে হবে মানুষকে, এটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে সামাজিক মেলামেশা কিংবা অবাধে নিয়ম না মেনে ভ্রমণ, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা আগামী সময়ের জন্য চিন্তনীয় তা এখন থেকে ভাবতে হবে সকলকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যা নিয়ে চিকিৎসকরাও সংশয় প্রকাশ করছে ইতিমধ্যে। আরও লক্ষ্যনীয় হলো বর্তমান সময়ে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ কেবল হাসপাতালে যায় সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হলে। এ কথার অনেকটাই প্রমাণ মিলে সেখানকার হাসপাতাল বিশেষভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র দেখলে। তাই সাধারণ সর্দি-জ্বর মনে করে করোনাভাইরাসকে অবহেলা করা ভুল। সামান্য অবহেলাতে এ ভাইরাস যখন ফুসফুসকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন তা সামাল দেয়ার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থার যেমন সঙ্কট রয়েছে , তেমনিভাবে এর চিকিৎসা খরচ চালানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। যার ফলে চিকিৎসা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ।
করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে বিগত দিনের শিক্ষাকে দেশ ধারণ করতে পেরেছে কি না তা একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। আমাদের হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনাতে কোভিড-১৯ এর সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে প্রস্তুতির তেমন কোন আভাস নেই। বরং কোভিড ইউনিটকে বন্ধ করে দিতে তারা অনেক বেশি আগ্রহী। চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা থাকলেও জটিল রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় মানুষকে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয়ের নিদিষ্ট সীমারেখা নেই। এ অবস্থায় দিশেহারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে শুধু প্রাণ বাঁচতে নিজেদের ক্রমশ আর্থিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। সুতরাং কোভিড-১৯ এর চিকিৎসাকে আরও বেশি মানুষের লাগামের মাঝে আনার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার। একই সাথে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয় বিবেচনা করা উচিত। কেননা এ মহামারীতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সকলে।
লেখক: কলামিস্ট
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা