৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:৩৮

বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পর্যটন খাতে সরকারের প্রয়াস এবং নানাবিধ উদ্যোগ

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পর্যটন খাতে সরকারের প্রয়াস এবং নানাবিধ  উদ্যোগ

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। ধীরগতিতে হলেও এ শিল্পের উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের সরকারের নানা উদ্যোগের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে পর্যটন শিল্পের এ অগ্রগতি। Travel and Tourism Council (WTTC)-এর ২০১৮ সালের বার্ষিক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের জাতীয় আয়ে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ছিল ৪২৭.৫ বিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ২.২ শতাংশ এবং মোট আয় ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। এ সেক্টর থেকে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ছিল এক হাজার ১৭৮টি, যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ১.৮ শতাংশ। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশে শুধু এ খাতে প্রত্যক্ষভাবেই ৫০ লাখ লোক কাজ করবে।

এ লক্ষ্যে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোতে প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। 

সম্প্রতি সরকারের একটি অন্যতম পর্যটনভিত্তিক উদ্যোগ হিসাবে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুরের মেঘনার চরে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড।

নির্মাণ শুরু হতে যাওয়া এ পর্যটন প্রকল্পে থাকবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জাদুঘর, পানির ওপর ভাসমান কটেজ, চার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কার, ট্র্যাডিশনাল কটেজ, স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট, পাঁচতারকা হোটেল, থিম পার্ক, রিভার ক্রুজ, স্পিডবোট, হেলিকপ্টার, কনভেনশন হল, থিয়েটার, মিউজিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো সেন্টার, মার্কেট, জিমনেসিয়াম, ইনডোর এবং আউটডোর গেমস, ক্রিকেট অ্যারোনা, সুইমিং ক্লাব, ওয়াটার রাইড, হসপিটাল, পার্টি সেন্টার, হলি কর্নার, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্টাফ রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, এগ্রি ট্যুরিজম, গ্রিন এনার্জি, পর্যটন ডিপ্লোমা কোর্স স্কুল প্রভৃতি। ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের ভ্রমণের ব্যবস্থা ও ২০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা থাকবে। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

এছাড়াও সরকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানি সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরায়েং ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শ্যামলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, ঝিলংঝা সৈকতের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ, চকোরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের গমনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আধুনিকায়ন ইত্যাদি। এছাড়া আরও চারটি নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার। এসব বাস্তবায়িত হলে আগামীতে দেশের পর্যটন খাত আরও চাঙা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও পিপিপির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে যাতায়াত করার জন্য রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। এ লাইন আরও সংস্কার করা হচ্ছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজারে আরও দুটি মোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিমান-নৌবাহিনীর উদ্যোগে সেখানে একটি বড় গেস্ট হাউস নির্মিত হচ্ছে। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সেগুলোকে সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ খাতে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে। রামু ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একে কেন্দ্র করেও আশপাশে নানা অবকাঠামো গড়ে উঠছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে শাহপরীর দ্বীপের চার পাশে বেড়িবাঁধ নির্মিত হচ্ছে। এটিকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার থেকে শ্যামলাপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে উঠেছে বিশাল চর। এখানে থেকে যেমন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে দেখা যায়, তেমনি সাগর ও নদীর পানির মিলনস্থলের পার্থক্য বোঝা যায় পরিষ্কারভাবে। এগুলো পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে সেখানেও একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

টেকনাফ এলাকায় তৈরি হচ্ছে ইকো ট্যুরিজম পার্ক। নাফ নদের মাঝে একটি চরকে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন এলাকা হিসেবে। মহেশখালীকে পাওয়ার হাব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শুধু মহেশখালীতেই বিনিয়োগ হচ্ছে লাখো কোটি টাকা। সোনাদিয়া দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এটি দেখতে অনেক পর্যটক সেখানে যান। এ কারণে একে আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। জানা যায়, কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য সাতটি প্রকল্প নির্ধারিত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ প্রকল্প। খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যারা টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যাবেন তাদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনকে ঘিরে একটি স্টাডি প্রকল্পও নেওয়া হবে। এরকম নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। পিপিপির আওতায় প্রকল্পগুলো প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। পর্যটন সুবিধাদি বাড়ানোর জন্য চলমান কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- চট্টগ্রামের পারকিতে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন, পর্যটনবর্ষ উপলক্ষে দেশের কতিপয় আকর্ষণীয় এলাকায় পর্যটন সুবিধার উন্নয়ন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবন নির্মাণ, জাতীয় ট্রেনিং অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সোনামসজিদ পর্যটন মোটেলের সংস্কার প্রকল্প অন্যতম।

এসব উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ অন্যতম। এর ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে পর্যটন নগর কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতিবছরে এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হলো সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এসব স্থানে প্রায় ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 
বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ বিশেষ করে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা পর্যটন বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। কারণ এতে বিনিয়োগ করছে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত কোম্পানি সিয়াম সিয়াম ইন্টারন্যাশনাল। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ২৭১ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি ১২ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান জোগাবে। এ নাফ ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নের প্রকল্প ব্যয় ১৭০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নাফ ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে।

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম পর্যটননির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং সমুদ্রতীরে এ পর্যটন অঞ্চল গড়ে উঠছে। পরিকল্পিত এ আধুনিক পর্যটন পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে বেশকিছু কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে ১২টি কোম্পানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে বেজার নির্বাহী বোর্ড। কোম্পানিগুলো পার্কের মধ্যে তারকা হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করবে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে।

বেজার তথ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এক হাজার ৪৭ একর আয়তনের এ পার্কে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রেখে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়া ১২ কোম্পানি ১১৬ একর জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করবে। এতে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

তাছাড়াও জেলাভিত্তিক পর্যটন কমিটি গঠন করেছে বর্তমান সরকার পর্যটনকে আরও আধুনিকভাবে সাজানোর জন্য। প্রত্যেক জেলাতে পর্যটনের অফিস খোলা হয়েছে। এদের কাজ হলো প্রত্যেক জেলার পর্যটন সম্ভাব্য স্পটগুলো চিহ্নিত করে আরও আধুনিকায়ন করা। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে নতুনভাবে আরও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরকার পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের লক্ষ্যে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে।

মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যটন উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হবে। ২০১৬-২০২১ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৮ তিন অর্থবছরে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য স্থানগুলোর পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

বর্তমান বছরগুলোয় সরকারসহ বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যটনকে অর্থনৈতিক একটি কার্যকর খাত হিসেবে রূপান্তরে সচেষ্ট হয়েছে। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পর্যটনের ওপর উচ্চশিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাসহ বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে জনশক্তি তৈরিতে কাজ করছে। দক্ষ পর্যটনকর্মী গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশন পরিচালিত ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ঢাকা অফিসের বাইরে বরিশাল ও কক্সবাজারে দুটি নতুন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে ট্যুর অপারেটর আইন, পর্যটন করপোরেশন আইন।

বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় পর্যটন শিল্পের সংযোজন শুধু আর্থিক সুফলতা বয়ে আনবে না, সেই সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ে এর সুফল ছড়িয়ে দেবে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। এজন্য প্রয়োজন সরকারের উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটন শিল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। 

লেখক: চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর