২৮ মে, ২০২১ ১০:১৪

বঙ্গতাত্ত্বিক সলিমুল্লাহ খান

মোহন রায়হান

বঙ্গতাত্ত্বিক সলিমুল্লাহ খান

মোহন রায়হান

বাংলার তত্ত্বজ্ঞানী, পন্ডিত, লেখক, কবি, বাগ্মী, অনুবাদক, চিন্তক, গবেষক, শিক্ষাবিদ আমার প্রিয় বন্ধু প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান। যাঁর জন্য আমি গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৩২৪ মোহসীন হলে যাঁর সঙ্গে বাস করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাঁর সম্পাদনায় সে সময়ের বহুল আলোচিত, পাঠক-নন্দিত সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক শ্রেষ্ঠ সাময়িকী ''প্রাক্সিস জার্নাল" বের করতাম আমরা। পরিচয়ের দিনই জানতে পেরেছিলাম, তিনিও আমাদের মতন পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের মানবীয় মুক্তির দর্শনে বিশ্বাসী। আজ পর্যন্ত দু'জন একই দর্শনে আস্থাশীল রয়েছি। সুখে দুঃখে, ভালবাসা-বেদনায় পরস্পরে ৪৫ বছর জড়িয়ে আছি অকৃত্রিমতায়।

কষ্ট এই যে, ১৯৭৯ সনে ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পেয়েও সংগঠনের নেতৃত্বের কোন্দলের বলি হয়ে যিনি এদেশকে তাঁর মেধাবী নেতৃত্ব দেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

দুঃখ এই যে, ঈর্ষার শিকার হয়ে, তাঁর মতন শিক্ষাজীবনে কখনও সেকেন্ড না হওয়া, আমাদের জেনারেশনের সবচেয়ে বেশি লেখাপড়া জানা, অসাধারণ জ্ঞানী, মেধাবী মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাননি। বঞ্চিত হয়েছে ঢাবির ছাত্ররা। লজ্জা এই যে, তাঁর তুলনায় কত তুচ্ছ লোকেরা এদেশে কত অর্থ-বিত্ত-সম্পদশালী, রাষ্ট্রের কত উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত অথচ তাঁর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের 'দিন পড়াই দিন খাই' মাষ্টারীর চাকরি আর নীতি, আদর্শ, আপসহীনতা, সততা, মেধা ছাড়া টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি-জমিজমা কিছুই নাই! লোভ-লালসা-চতুরতা-ভণ্ডামী-ধান্ধাবাজী-চাটুকারিতা-মোসাহেবি-মাথানত না করা নির্ভিক, স্পষ্টবাদী, সৎ, সহজ, সরল, সাদামাটা, অতি সাধারণ জীবনের অধিকারী ড. সলিমুল্লাহ খান। 
অভাগা দেশে অবমূল্যায়িত দুর্ভাগা, দুঃখি বন্ধু আমার এসেছিলেন সাওল হার্ট সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সেই সুবাদে সৌভাগ্য হয়েছিল, করোনা-মহামারীকালে তাঁর মনীষা-ঝলসিত দুর্লভ সান্নিধ্য লাভের। কিছু উষ্ণ সময় কাটানোর।

লেখক: কবি

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর