২৮ জুন, ২০২১ ১৪:১৬

লকডাউন নিয়ে ট্রল নয়, নিজে সচেতন হোন

হাসিনা আকতার নিগার

লকডাউন নিয়ে ট্রল নয়, নিজে সচেতন হোন

সারা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে করোনাভাইরাস। বারবার ফিরে আসছে নানারূপে, নানা নামে। প্রাকৃতিক আবহাওয়া ভেদে এটা বাড়ছে বা কমছে তা বলা মুশকিল। প্রতিটি দেশ বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছে। তবে একটাই প্রত্যাশা, 'পৃথিবী সুস্থ হলে আবার স্বাভাবিক জীবনে আসবে মানুষ।' কিন্তু কবে হবে পৃথিবী সুস্থ হবে তা অনিশ্চিত। করোনাভাইরাস যদি প্রকৃতির সৃষ্ট হয়, তবে মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে, 'কেন এমন ব্যাধি পৃথিবীতে এসেছে?' মানুষ মানুষে হানাহানি, দ্বন্দ্ব, সংঘাতসহ মতবিরোধ বাড়ছে। সে সাথে অন্যায়, দুর্নীতি, অমানবিক আচরণ চলমান। এসব কর্মের জন্য মানুষের মাঝে নেই কোন অনুতাপ বা পরিতাপ। তবে এসব অন্যায় অবিচার  প্রকৃতি মেনে নিতে পারে না। সৃষ্ট জগতে প্রত্যেকটি কর্মের অন্তরালে একটা কারণ থাকে। আর সে কারণকে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বুঝতে অক্ষম হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃতিই তার তাণ্ডবলীলা দিয়ে বিপর্যস্ত করে স্বাভাবিক জীবনকে। প্রকৃতির বিচারকে কেউ থামতে পারে না। সুতরাং নিজের বিবেকবোধ দিয়ে মানুষকে সংশোধিত হবে। অন্যায়ের পথ থেকে ফিরতে হবে। কু রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবেই মানুষকে  এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ পাবার পথ হয়তো প্রকৃতিই দেখিয়ে দিবে তার সমহিমায়। মানব জাতির ইতিহাসে এমন মহামারী দুর্যোগ নতুন কোনো ঘটনা নয়। সে ইতিহাসকে স্মরণ করে নিজেদেরকেই বাঁচার পথ খুঁজতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে। 

করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতা তেমনভাবে নেই বললে চলে। এমনকি বেশিরভাগ মানুষ মনে করে করোনা বলে কিছু নেই। বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরা এ রোগকে পাত্তা দিতে নারাজ। কারণ লকডাউন তাদের জীবনে আতঙ্কের নাম। নানা প্রতিকূলতায় দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল এটা কাগজে কলমের কথা। তার কারণ হলো, 'টেস্ট কম, রোগ কম।' দেশের মানুষ অসুস্থ হলেই সবাই যে টেস্ট  করছে তা কিন্তু নয়। আবার দেখা যায় ঘরোয়া টোটকা পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যায় অনেকে। তবে তার কারণে অন্যরা অসুস্থ হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে না।

পাশ্ববর্তী দেশে ভারত নতুন ভাইরাসে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলেও  আমাদের দেশে সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এমনকি শুধু লোক দেখানো লকডাউন দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে এবারের রোজার ঈদে। বিকল্প পন্থায় মানুষ ঈদ পালন করতে গ্রামে গিয়েছে সকল বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে। বিগতে বছরে গ্রামের দিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কম ছিল। কিন্তু এবার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগ বেড়েছে সে সাথে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। দুঃখজনক হলো  ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য অঞ্চলে করোনার চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা নাই। গত এক বছরে স্বাস্থ্যখাতে কেবল দুর্নীতির ইতিহাস রচিত  হয়েছে। উন্নত হয়নি চিকিৎসা ব্যবস্থা।

১৬ কোটি ৯১ লাখ মানুষের টিকার ব্যবস্থা করা সহজ বিষয় নয়। সময়মতো সবাই টিকা পাবে তার নিশ্চয়তা নিয়ে দোদুল্যমান চিন্তা আছে সকলের মনে।এমন পরিস্থিতিতে সরকার  ঘোষিত লকডাউন বা শাটডাউন নিয়ে হেয়ালিপনা, ট্রল করার সময় এখন নয়। দরকার  সচেতনতা। করোনাভাইরাস কোন রাজনৈতিক মিছিল সমাবেশের মত ইস্যু নয় এটাও মনে রাখা  উচিত ছিল সরকার ও  প্রশাসনের। মানুষের মনে বিগত দিনের লকডাউন নিয়ে গুরুত্বহীনতা তৈরি হয়েছে তা লক্ষ্য করে লকডাউন ঘোষণার সময় কাল বিবেচনা করলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। কঠোর লকডাউন হবে বলে মানুষের জিনিসপত্র কেনাকাটায় যে অস্থিরতা বাজারে দেখা গিয়েছে তার দায় কে নেবে তা ভাবার দরকার ছিল। আগামী ২৮ জুন থেকে কঠোর লকডাউন হচ্ছে না  জেনে মানুষ 'কঠোর, 'সীমিত ' - এ শব্দগুলো নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। যা অনুচিত। তবে সরকার লকডাউনের তারিখ পেছানোর ঘোষণা দেওয়ার কারণ হিসেবে অর্থবছরের বিষয়টিকে সামনে এনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে জনমনে। রোগ যদি বাড়তে থাকে তবে অর্থবছরের কর্মকাণ্ডের জন্য থমকে যাবে না। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায় তা ভারতের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। 

আসলে  প্রশাসনিকভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতন হওয়ার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কালক্ষেপণ না করে নিজেকে সচেতন হতে হবে। সামনে আসছে ঈদুল আজহা। মানুষ গরু-ছাগলের হাট আর গ্রামে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবার আগে। গ্রাম, পাড়া মহল্লায় নিজ উদ্যোগে নিজেদের জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবার থেকে আপনজনদের বুঝাতে হবে একসাথে উৎসব করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া। শহর গ্রামে ছোটাছুটি না করে যার যার ঘরে অবস্থান করতে হবে। 

এ রোগ যার ঘরে হানা দিয়েছে সে বুঝে এর আঘাত কী করে বিনাশ করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে। তাই দেশে করোনা নাই বলে যারা সব স্বাস্থ্যবিধিকে তুচ্ছজ্ঞান করছে তাদের সচেতন হতে হবে সবার আগে। তাহলেই লকডাউন কঠোর বা সীমিত যাই হোক তা কোন মাথাব্যাথার কারণ হবে না। সে সাথে মনে রাখতে হবে টিকার আপাতত বিকল্প হিসেবে মাস্ক পরা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলে অভ্যস্ত হতে হবে সবাইকে।

লেখক : কলামিস্ট 


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর