৩ জুলাই, ২০২১ ২০:২৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

শেখ কবির হোসেন :

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

মেধাবী প্রজন্ম তথা শিক্ষিত জাতি গঠনের মাধ্যমে ‘রুপকল্প ২০৪১ : উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা-দূরদর্শিতা এবং শিক্ষাবান্ধব সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ শিক্ষার্থী আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ নির্ভরতা হ্রাসসহ মেধা পাচার রোধ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা ও পেশজীবী তৈরিসহ বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রুপান্তর করার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে।   

বর্তমানে বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে।  শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ক্যাম্পাস ভাড়া প্রদান করা অনেক ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না, বৃত্তি ও টিউশন ফিসের উপর ছাড় দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।  তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা সময়মত না হওয়ায় কারণে শিক্ষার্থী সংকটও দেখা দিয়েছে।  এমতাবস্থায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।  

শিক্ষা খাতকে অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে সরকার বিপুল অংকের ভর্তুকি ও অর্থ সহায়তার দিয়ে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে জাতীয় বাজেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোন প্রকার সরকারি বরাদ্দ কিম্বা অনুদান পায় না। উপরুন্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষা সামগ্রী ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয়, জমি ক্রয় এবং ক্যাম্পাস নির্মাণ সামগ্রীর উপর সরকারি ভ্যাট ও কর হিসেবে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। চলমান বৈশ্বিক করোনা দূর্যোগের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যখন আর্থিক প্রণোদনা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তার জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে আসছে সেসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে প্রতীয়মান। যা সরকারের উচ্চশিক্ষা প্রসারের নীতির সাথে সাংঘর্ষিকও বটে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা রহিত করা হয়।  এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় ২০১০ সালে এসআরও এর মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর ধার্য করা হলে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাথে ট্রাস্ট আইনে ১৮৮২ অনুযায়ী পরিচালিত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একই আওতায় সমভাবে আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত আয় থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, ল্যাব-লাইব্রেরির উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা কার্যক্রম ইত্যাদি পরিচালনা করতে হয়।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উদ্ভূত আয় থেকে কোন প্রকার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাগণ গ্রহণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুগ্ন হয়ে পড়বে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন যেমন বাধাগ্রস্ত হবে তেমনি করের চাপে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে।  
  
উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনের মানবসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান তথা বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে দেশে থেকে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরির বিবেচনায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের জন্য সদাশয় সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ ও দাবি জানাচ্ছি। 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর