সেই টং ঘরটির কথা মনে আছে?
ওই যে, ৬০ ফুট রাস্তার মাথায়
ছোট্ট পাকুড় গাছটির তলায়
বুড়ো দাদুর টং ঘর!
ওপারে পার্টি অফিস, সরু গলি
নিয়ন আলোর স্ট্রিট লাইট
সব আছে। শুধু নেই বুড়ো দাদু।
যেমনটি তুমি নেই।
গেল পূর্ণিমায় গত হয়েছেন দাদু
কি কাকতাল!
ওই পূর্ণিমায় তুমিও হারিয়েছো চিরতরে।
টং ঘরটিতে গিয়েছিলাম আজ
দাদুর নাতি দেখেই চিনে ফেললো,
"অনেকদিন বাদে এলেন। দিদি ভাই কোথায়?"
বলিনি কিছু। শুধু হেসেছি।
তুমি নেই বুঝেছিল।
তাই মিথ্যা স্বান্তনা দেয়নি, "ব্লাড সুগার কি আছে? না, আগের মতোই মিষ্টি হবে?"
শুনে হেসেছিলাম।
সেদিন গরম পানিতে কাপ ধুঁয়ে
চা দিতে বলেছিলাম দাদুকে।
খেপেছিলে তুমি, "ঈশ! কত পরিস্কার আমার!"
চুপেছিলাম পাল্টা উত্তরে ব্যথা পাবে ভেবে।
মিষ্টি হাসিতে বলেছিলে, "টং দোকানের চা খাবেন, আর কাপে গন্ধ থাকবে না?"
চিনে মাটির কাপে ধোঁয়া উঠা চা পেতেই
ছোঁ মেরে চুমুক দিয়ে বললে, "নিন, সব ব্যাকটেরিয়া শুষে নিলাম আমার ঠোটে। আর ভয় নেই।"
হেসে ফেলি তোমার আদর মেশানো কথায়।
কপট রেগে বলেছিলে "এমন আলগাপনা, আদিখ্যেতা ভালো লাগেনা! এমন ভাব দেখালে আসবেন না। এমন আপনাকে চাই না।"
চুপ মেরেছিলাম।
"চলুন, আজ হুড তুলে রিকশায় ঘুরবো। বৃষ্টিতে ভিজবো। আপনার কাঁধে মাথা রেখে গুনগুন করে গান গাইবো-
'এমনও দিনে তারে বলা যায়..."
চা খাওয়া ভুলে অবাক আমি তাকিয়েছিলাম।
"আজ কোনো দুষ্টুমি নয়। চুপ করে থাকবেন।"
শুধু মাথা নেড়েছিলাম আমি।
সেদিন ছিল শরতের মেঘে ভাসা রাত।
বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল, তবে ক্ষীণ!
ঈশ্বর তোমার মনোবাসনা পূরণ করেছিলেন।
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে রিকশায় ঘুরেছিলাম দুজনা...
বৃষ্টিস্নাত এলোকেশী তোমায় মনে হয়েছিল,
সপ্ত আকাশ থেকে নেমে এসে আমার স্বপ্ন পূরণ করছো।
বৃষ্টির পুরোটা সময় চুপেছিলাম, আর মন্ত্রনেশায় শুনেছিলাম কিন্নরী কণ্ঠের গান, "বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছু্ঁয়ো না...
জানো, আজ চিনের মাটির কাপে চা খেয়েছি।
বৃষ্টিতে ভিজেছি হুড খোলা রিকশায়,
গুন গুন করেছি, "বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়োনা...
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন