১৭ মার্চ, ২০২২ ১৬:৩৬
দ্য ইকোনোমিক টাইমসের নিবন্ধ

শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের অমোঘ নিয়তি

অনলাইন ডেস্ক

শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের অমোঘ নিয়তি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানে জন্মদিন ১৭ মার্চ। তার হাত ধরেই আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি চিরভাস্বর হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দ্য ইকোনোমিক টাইমসে ‘শেখ মুজিবুর রহমান: পাকিস্তানের অমোঘ নিয়তি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ভারতের সাংবাদিক দীপনঞ্জন রায় চৌধুরী। নিবন্ধটির সারসংক্ষেপ বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে মুক্ত তথা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশে তিনি ‘জাতির পিতা’ এবং বিশ্বব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে খ্যাত।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ধীরে ধীরে জনমানুষের নায়ক হয়ে ওঠেন। ১৯৫৩ সালে জন্মস্থান গোপালগঞ্জ সংসদীয় আসন থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাঙালি এবং বাংলা ভাষার জন্য ক্লান্তিহীন কর্মের কারণে তিনি কিংবদন্তি হিসেবে পরিগণিত হন।

মূলত পাকিস্তানের শোষণ ও অবিচারের প্রতিবাদ করেই তিনি মানুষের মধ্যে জায়গা করে নেন। এর জন্য তাকে অবর্ণনীয় জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। ছয় দফা, ১১ দফার কারণে আগরতলা মামলার আসামি হওয়াসহ বছরের পর বছর জেলে কাটিয়েছেন। 

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু পরাজিত নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক শাসকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেটা নস্যাতের চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো সেই ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। 

পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার সামরিক আইন জারি করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের ‘রাজনৈতিক বেসামরিক অস্থিরতা’ নিরসনে অপারেশন সার্চলাইট নামে নৃশংস সামরিক অভিযান শুরু করেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ২৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ক্র্যাকডাউন শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান বাধ্য হয়ে বাঙালিকে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। 

সেনাবাহিনী কোনো অভিযোগ ছাড়াই শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পাকিস্তান শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি কিংবা আপস করতে অস্বীকৃতি জানায়। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারতের হস্তক্ষেপের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। 

পাকিস্তান থেকে ছাড়া পেয়ে লন্ডনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কথা বলার পর শেখ মুজিব দিল্লি নামেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তাকে শুভেচ্ছা জানান। শেখ মুজিব ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। 

শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হন। যুদ্ধকে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ মানবিক দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার দার্শনিক অবস্থান মুজিববাদ হিসেবে পরিচিত। শেখ মুজিবুর রহমান জীবনভর গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদের নীতি প্রচার এবং 
এসব নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।

১৯৭৫ সালে সামরিক বাহিনীর কতিপয় বেপরোয়া সেনা কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো তাকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি শান্তিতে অবদান রাখায় জুলিও কুরি পদক পেয়েছেন। তৃতীয় বিশ্বের কাছে তিনি এশিয়ায় ‘শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতীক’। বিবিসির জরিপে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে অভিহিত করা হয়। শেখ মুজিব বাংলাদেশিদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। সারাজীবন তিনি স্বাধীন এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর