শিরোনাম
১৮ জুলাই, ২০২২ ১৩:৫৯

হ্যালো মি. কিসিঞ্জার আপনাকে বলছি...

গুলশাহানা ঊর্মি

হ্যালো মি. কিসিঞ্জার আপনাকে বলছি...

হেনরি কিসিঞ্জার (ফাইল ছবি)

হ্যালো মি. কিসিঞ্জার আপনাকে বলছি....। আমি দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল একটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বলছি। ইতোমধ্যে নিশ্চয় আপনি পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ার প্রচারিত বিভিন্ন খবরে প্রায়ই আমার বাংলাদেশের নাম দেখতে পান। ও সরি, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার দেশকে আপনি সম্প্রতি চিনবেন কেন? আমার দেশকে তো আপনি চিনেন সেই ১৯৭১ সাল বা তারও আগে যখন থেকে আমরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর  স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করেছি। আরেকটি ক্লু দেই তাহলে আপনি আরও সহজেই চিনতে পারবেন-আমার দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি ‘শেখ মুজিবের বাংলাদেশ’ এর  একজন নাগরিক। আমার জন্ম আমার দেশের স্বাধীনতার পর, বলতে পারেন আমি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্ম।

আপনি কী জানেন? আমার প্রজন্ম বা আমার পরবর্তী প্রজন্ম এদেশে বেড়ে ওঠে আপনার একটা তাচ্ছিল্য করে বলা একটি উপমাকে সাথে করে। কী সেই উপমা? সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে আপনি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন। আমার প্রজন্ম প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার পরেই আপনার এই উপমার সাথে পরিচিত হই। কোমল মনে একটা অসহায়ত্ব বা হাহাকার ভর করে, প্রায়ই মনে হতো ‘ইস! আমার জন্মও যদি উন্নত কোন দেশে হতো তাহলে কতোই না ভাল হতো’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো-সেই আমাদের প্রজন্মের মতোই ঠিক আস্তে আস্তে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা যেমন মাঝবয়স পেরিয়ে গেছি ঠিক আমার দেশটিও তলাবিহীন ঝুড়ি তকমা এড়িয়ে গেছে। আপনি শুনে অবাক হবেন আমাদের এখন উন্নয়নের ‘বিস্ময়’ বা ‘রোল মডেল’ বলা হয়। পত্র-পত্রিকা বা বিভিন্ন আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি নিশ্চয় ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অবগত আছেন।

আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ আমার বাংলাদেশ, মাথা পিছু আয় ২৮২৪ ডলার। জিডিপি’র আকার ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা অচিরেই ৫০০ বিলিয়ন ডলার হবে। আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশের বেশি, গড় আয়ু ৭২ বছর ৮ মাস। দারিদ্র্যের হার এখন ২০ শতাংশ। 

খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রথম অর্জন করি ১৯৯৯ সালে। এরপর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে আমার দেশ দুঃশাসনের হাতে পড়ায় কিছুটা দুর্বিপাকে পড়ে, সেই অবস্থার উত্তোরণও হয়েছে অনেক আগেই। ২০১৩ সালে এসে দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত চাল বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক অসামান্য অর্জন। অতীতের তলাবিহীন ঝুড়ি এখন শক্ত ভিত্তির উদ্বৃত্ত খাদ্যের বাংলাদেশ; ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পিয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ, আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম এবং গড় ফলনের হিসাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম। আমরা মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইলিশ মাছ উৎপাদনে ১ম ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ২য়। 
আমরা ইতোমধ্যে পারমাণবিক বিশ্বে নাম লিখিয়েছি, মহাকাশেও আমরা স্থান করে নিয়েছি। মেট্রোরেলের যুগেও আমরা প্রবেশ করেছি, নদীর তলদেশেও আমাদের টানেল নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। বিশ্বের ২য় সর্বোচ্চ খরস্রোতা নদীর উপর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমার দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন আছে বৃহৎ কিছু মেগা প্রজেক্ট। এইসব মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পর আরও বদলে যাবে আমার দেশের চিত্র। 

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমার দেশও ডিজিটাল হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। ইন্টারনেটের যুগে আমরা ফাইভ জি তে প্রবেশ করেছি। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব কাজই ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা সম্ভব। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মহামারি প্রতিরোধে আমার দেশের ভূমিকা সারাবিশ্বের কাছে ঈর্ষণীয়। করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাতেও কিন্তু আমরা যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছি।

মি. কিসিঞ্জার, আমি আপনাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। জানি আপনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ, চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তারপরও যদি সম্ভব হয় একবার এসে নিজ চোখে দেখে যাবেন প্লিজ। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশের নাম এখন বিশ্বের বুকে সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়, আমাদের উন্নয়ন ফর্মুলাকে অনেক দেশ ‘মডেল’ বলে অভিহিত করে। একবার এসে উপলব্ধি করে যাবেন যে আপনার আখ্যা ভুল ছিলো। আর এটি সম্ভব হয়েছে আমার দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যকন্যা, এই প্রজাতন্ত্রের অভিভাবক মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। সততা, দৃঢ়তা, একাগ্রতা, উদ্যোম, সাহস ও প্রচষ্টা থাকলে যে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা যায় তা তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা আমাদের দিয়েছেন সম্মানের পরিচয় ও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয়। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা’র সুদৃঢ় নেতৃত্বে আপনার দেশের মত উন্নত বিশ্বের কাতারে সিনা টানটান করে দাঁড়াব খুব শীঘ্রই, ততদিন সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন সেই কামনা করছি।

লেখক : বিসিএস তথ্য, সংযুক্তিতে-প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর