শিরোনাম
১৮ জুলাই, ২০২২ ১৭:৫৪

লালন দর্শনে শান্তির নতুন বিশ্ব বিনির্মান সম্ভব

অনলাইন ডেস্ক

লালন দর্শনে শান্তির নতুন বিশ্ব বিনির্মান সম্ভব

প্রতীকী ছবি

মানবিক গুণ না থাকলে তাকে মানুষ বলা যায় না। কেবল মানুষ হয়ে জন্মালেই যে কাউকে মানুষ বলা যায়-এমন ভাবনা দর্শনের বিচারে যুক্তিহীন। মানুষ ও মানবতাকে নিয়ে মহাত্মা লালন সাঁইয়ের যে চিন্তা-ভাবনা আর বিশ্বাস এবং বোধ তার চেতনায় ধারণ করতেই তাই উঠে এসেছে শিক্ষাবিদ, ফোকলোরিস্ট ও লালন গবেষক অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমানের ‘বেঙ্গলি পয়েট ফকির লালন শাহ: ওরাল পয়েট্রি অ্যান্ড ট্রাডিশন ইন দ্য সোস্যাল কনটেক্সট অব কনটেম্পোরেরি বাংলাদেশ’ নামক গবেষণা গ্রন্থে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় বইটি প্রকাশ করেছে।

মানবতাবাদী কবি, দার্শনিক, বাউল ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালিকে বহু রূপে চিত্রিত করা হয়েছে ড. শাহিনুর রহমানের এ গবেষণাগ্রন্থে। গবেষক তার গ্রন্থে দাবি করেছেন, সমাজ মানবতার ফেরীওয়ালা একজন লালন ফকির বিশ্বের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। অশান্তি, হানাহানির পৃথিবীতে আলোর মশাল নিয়ে এসেছেন লালন সাঁই। দিয়েছেন সাম্যের বাণী। ছড়িয়েছেন আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থান ও শান্তির অমূল্যবার্তা।

প্রথাগত সমাজ ধারণার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে নিঃস্বার্থ কর্মের জন্যই ফকির লালন তার সৃষ্টি ও কৃষ্টির মাধ্যমে বহুধা উপাধিতে উচ্চারিত হয়েছেন। কখনও তিনি লালন সাঁই, লালন শাহ্, মহাত্মা লালন ফকির, বাউল সম্রাট এমন সব সম্মানের তার ভক্ত ও সুধীজনের মাঝে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এই রহস্যময় সমাজ সংস্কারক, শিল্পী। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক সাধক, বাউল ঘরানার মরমি সাধক, বাউল, মানবতাবাদী এবং দার্শনিক। ড. রহমান তার এই গ্রন্থে বলেছেন, লালনের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে। তার জীবদ্দশায়ও এই মতভেদ বিদ্যমান ছিল।

 অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান 

ফকির লালন শাহ তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনের চেয়ে কেন মানবতাবাদী হওয়ার তাড়না অধিক গুরুত্ব পেয়েছিল তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই গ্রন্থে। ব্যাখায় বলা হয়েছে, ফকির লালন জানতেন এবং উপলব্ধি করতেন বলেই তার গানে মানুষ ও মানবতাবাদ অনেক বেশি জুড়ে ছিল এবং আছে। সময়ের সাথে সাথেই মহাত্মা লালনের এই সাম্যবাদী এবং মানবতাবাদী এই দর্শন যেন আরও শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত গোত্রের অনেক উপরে মানুষ ও মনুষ্যত্ব স্থান দিয়েছেন লালন সাঁই। প্রেম ভালোবাসা সাম্য মানবিকতা চির শান্তি কল্যাণ ও মঙ্গলের প্রধান উৎস যেন লালন দর্শন। আবহমান বাংলায় মানুষ হওয়ার জন্য মানুষের সন্ধান পেতে, মনুষ্যত্বের রূপ রস গন্ধ আস্বাদন করতে ক্ষণ জীবনের সত্য সুন্দর মানবিক পথে চলার যে নির্দেশনা সাঁইজি দিয়েছেন তা যেন বাঙালিই শান্তি ও সহাবস্থানের হাজার বছরের চর্চিত জীবন। 

লালনের সার্বজনীন জীবন শিক্ষা বিশ্বের বড় বড় খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিকসহ অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মুণি-ঋষিকে প্রভাবিত করেছে এবং করে চলেছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এসেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং মার্কিন কবি ও চিন্তক অ্যালেন গিন্সবাগের মতো মণীষীদের প্রসঙ্গ। তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন আরও বহু গুণীজন। অধ্যাপক রহমান বলেছেন, মহাত্মা লালনে সৃষ্টি যতোটা না গান, তার চেয়ে বেশি সার্বজনীন শান্তি ও মুক্তির আহবান। তার দীক্ষায় নতুন বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।

দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিক লেখক, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, চিন্তাবিদরা ফকির লালনকে নিয়ে অনেক বেশি চর্চা এবং গবেষণা করছে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে লালনের চিন্তা ও তার দর্শন নিয়ে রীতিমতো গভীরতর গবেষণা অনুসন্ধান চলছে এবং তার রচিত গান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও হচ্ছে দেশে দেশে। বাংলার লালন যেন হয়ে উঠেছেন পন্ডিত ও গবেষকদের কাছে জ্ঞানরাজ্যের এক মহাপুরুষ-বিশ্ব লালন।

অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমানের এই লালন গবেষণা গ্রন্থটি দর্শন ও সাধনা গভীর ভাবের মূল্যায়নে সহায়ক হতে পারে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ১৪৮ পৃষ্ঠার এই বইটি ২০০৯ সালে ডিজিটাল রূপান্তর হয়।

বিডি প্রতিদিন/আক্তার/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর