১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ১৯:০৫

নির্বাচনে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান

নির্বাচনে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান

তারমানে এবার জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ একাই লড়বে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি ছাড়া এককভাবে লড়ার কারো ক্ষমতা নেই। তার পরিষ্কার মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগ একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, যা হলো আওয়ামী লীগের নেতাদের এবার নিজেদের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। এতে দল বা প্রতীকগত কোনো প্রতিযোগিতা হবে না। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতি এলাকায় বিভিন্ন স্থানীয় অনুকূল বা প্রতিকূল প্রতীক দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে, যাতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়।

সরকার খুবই পরিকল্পিত ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু সরকারের সবচেয়ে অনুকূল যে, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে লড়ার মতো কোনো যোদ্ধা নেই। আমি লড়তে চাই। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির সকল প্রার্থী হতাশ হবেন না। দল ও দেশের জন্য সর্বপরি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য অবশ্যই আপনাদের নির্বাচনে আসতে হবে।

জামায়াত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত নেতার মাথা কবজা করে নিয়েছে। সেখান থেকে তারেক রহমানকে মুক্ত করা আপাদত আর সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। দলকে বাঁচাতে, দেশমাতা খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে ও মুক্ত করতে এবং শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী রাজনীতি ও ভারতের সর্বগ্রাসী বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। 

চরম বাস্তবতা হলো - সকল বিরোধীদল মিলেও নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে সরকার সবাইকে সন্ত্রাসী বানায়ে ফেলবে এবং আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও তাতে সায় দেবে। আমরা সবাই কলঙ্কিত হয়ে যাব। দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে, সমৃদ্ধি  ও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে, যার পূর্ণ সুযোগ ভারত নেবে। ভারত ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না করার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছে। ভারত পরিষ্কার বলে দিয়েছে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ আছে। অতএব বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে অন্য কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। তার মানে বিএনপি বা বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি নির্বাচনে না যায়, তাহলে ভারতের ইচ্ছায় এবং কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে নেবে। অথচ যদি বিএনপি ও সমমনাদলগুলো একজোটে নির্বাচনে যেত তাহলে নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাদ না হলে নির্বাচনের দিন থেকেই চূড়ান্ত ও চরম আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে পারা যেত। 

কিন্তু আজকে নির্বাচন বয়কট করে এবং নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা দেশ ও জাতির সঙ্গে বেঈমানী করতে যাচ্ছি। জনগণ একদিন আমাদের কুলাঙ্গার বলে গালি দেবে। তাই যেভাবে হোক আপনাদের নির্বাচনে যেতে হবে। 

তাই আজকে বিএনপির সকল শক্তিশালী প্রার্থীর কাছে আমার দ্ব্যর্থ আহ্বান থাকবে :
১। আপনারা কেউ তৃণমূল বা অন্য কোনো দলে যোগদান করবেন না।
২। যার যার নির্বাচনী এলাকায় ২ বা ৩ জন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। তার মধ্যে যাদের মনোনয়ন বৈধ হবে তারা সবাই নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে তাহলে শেষ পর্যায়ে একজনকে বিজয়ী করে আনবেন। যদি এভাবে সারা বাংলাদেশে বিজয়ী হতে পারেন তাহলে নির্বাচনের পরপরই নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন এবং একটি সংসদীয় দল তৈরি করবেন। 
৩। সবার নির্বাচনের মূল ইশতেহার হবে 
(১)  দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সকল সাজা ও মামলা প্রত্যাহার।
(২) বিএনপির সকল নেতাকর্মীর মুক্তি, সকল মামলা ও সাজা প্রত্যাহার। 
(৩) তারেক রহমানের সকল সাজা ও মামলা প্রত্যাহার। 
(৪) মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামিক চেতনার পক্ষে বিএনপিকে পূর্ণ সংস্কার।
(৫) বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রকাশ্য সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রচলন। 
(৬) ভারতসহ কোনো বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরীতা নয় বরং পূর্ণ সহযোগিতার ও বন্ধুতের নিশ্চয়তা।
(৭) বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও প্রকাশ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। 
(৮) আইনের শাসন ও পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় পূর্ণ জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।  
(৯)  রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা। 
(১০)  বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার পূর্ণ স্বীকৃতি, মূল্যায়ন এবং রাষ্ট্রীয় সকল কাজে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ (স) ওপর স্থান ও বিশ্বাস এবং  স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহিদ জিয়ার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। 
(১১) দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা। 

উপরের আলোচিত অবস্থার পরিপেক্ষিতে যদি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তাহলে তারা সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থী হতে পারেন। যারা সংসদ সদস্য ছিলেন না তারা ১% ভোটারের সমর্থন সংগ্রহ করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যান। হিরো আলম যদি পারে তাহলে আপনারা পারবেন না কেন? দল ও দেশের প্রয়োজনে আপনাদের নির্বাচনে আসা উচিত। নির্বাচনের পরে আবার বিএনপিতে চলে আসবেন। আইন বা সংবিধান কোনো বাধা হবে না। স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচনের পরে যে কাউকে সমর্থন দিতে পারা যায় বা যে কোনো দলে যেতে পারা যায়। এতে কোনো বাধা নেই। 

সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে আপনাদের সাথী বা নেতাকর্মী দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আপাতত পুলিশের হামলা, মামলা থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তারা মুক্ত মানুষ হিসেবে নির্ভয়ে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারবে। তাছাড়া যারা জেলে আটক আছে তাদের আপনাদের নির্বাচনে প্রয়োজন বলে জেল থেকে বের করে নিয়ে আনতে পারবেন। 

আসুন বিএনপিকে বাঁচাই - দেশকে বাঁচাই। দেশমাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। যার যার আসন থেকে লড়াই করার জন্য নির্বাচন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। অপরাজনীতিকে ঝেটিয়ে বিদায় করেন। জয় আপনাদের হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন।

লেখক : মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য
 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর