৭ মার্চ, ২০২৪ ১৩:২২

৭ মার্চ স্বাধীনতার নব সূর্যোদয়

মোহাম্মদ আবদুল খালেক (শান্ত)

৭ মার্চ স্বাধীনতার নব সূর্যোদয়

মোহাম্মদ আবদুল খালেক (শান্ত)

‘শতবর্ষের সাক্ষী-তুমি হে মহান, জন্ম তোমার ইতিহাস হবে, দেশ হবে মহীয়ান, তুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’

আজ ৭ মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যময় একটা দিন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাঙালি স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়ে গিয়েছিল, ২১৩ বছর পর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ অস্তমিত সেই সূর্য নবউদ্যমে উদিত হয়, বাঙালি পায় এক নতুন পথের দিশা, একটি মানচিত্র, একটি দেশ ও একটি পতাকা।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের একটি অংশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করলেও একটি পর্যায়ে তা পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। বাঙালি পতিত হয় ইতিহাসের ভয়াবহতম রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের যাতাকলে। প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ২৩ টি বছর। এই ২৩ বছরে বাঙালিকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। যার চুড়ান্ত পরিণতি ঘটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে।

সেদিন রাজনীতির কবি জনসমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের সামনে তার ভূবন বিখ্যাত ভাষণটি প্রদান করেন, সেদিনের সেই ভাষণ পুরো জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। ভাষণে তুলে ধরা হয় বাঙালির ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস। ১০ লাখ লোকের সামনে পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্ভীক চিত্তে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এ ভাষণই পাল্টে দিলো বাঙালির ইতিহাস, বাঙালি হয়ে উঠলো স্বাধীনতাকামী।

৭ মার্চের ভাষণের ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ জাতির পিতা ঘোষণা করলেন বাঙালি জাতির বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা।

৭ মার্চের ভাষণের শাব্দিক গুরুত্ব বহতার আরেকটি দিক হচ্ছে ভাষণটিতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রবাহ অনুসারে কথাগুলো বলা হয়েছে। প্রথমদিকে ইতিহাস, মাঝের দিকে অত্যাচার অন্যায়ের কথা আর শেষের দিকে জনগণের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বার্তা। যা ভাষণটিকে করে তুলেছে অনন্য।

এ ভাষণে বঙ্গবন্ধুর তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এখনো এ ভাষণ শুনে আবেগ তাড়িত হয় যেকোন বয়সের নারী-পুরুষ। শুধু বাঙালির জন্যই নয় বিশ্বমানবতার জন্যও অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল।

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তার এক সাক্ষাতকারে বলেন ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’

৭ মার্চের ভাষণটি প্রায় ৫০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ভাষণটিকে মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভাষণের যেমন আভ্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ এড্রেস, উইনস্টন চার্চিলের উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস, মার্টিন লুথার কিংয়ের আই হ্যাভ এ ড্রিম এর সাথে তুলনা করা হয়। যা দেশ ও জাতি হিসেবে আামাদের সম্মানীত করেছে।

তাই আসুন, আমরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে হৃদয়ে ধারণ করি। বঙ্গবন্ধুর মত আমরাও যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ট প্রতিবাদ করতে পারি। বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ হবে বলে বিশ্বাস করি। 


লেখক: সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার, ৪১তম বিসিএস

 


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর