৮ মার্চ, ২০২৪ ১৪:৪০

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, নারী সমাজের অবদান

সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, নারী সমাজের অবদান

সাইফুল ইসলাম (স্বপ্নীল)

ভি আই লেলিনের ভাষায়, 'নারীর সাহায্যে, তার চিন্তাশীলতা ও সচেতনতায় নব সমাজের নির্মাণ সুদৃঢ় হতে পারে।' সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীর সমান অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে কোনভাবেই সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। লেনিনের ভাষায় নারী শিক্ষিত হলে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলে ও পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করলে সভ্যতার বুনিয়াদ সুদৃঢ় হয়। 

দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, 'নারীর কাছ থেকে পুরুষের মত কাজ আশা করলে তাকে অবশ্যই সমান শিক্ষা দিতে হবে।' নারীকে সমান শিক্ষিত করলে নারী ও এর ফল দ্বিগুণ হারে দিতে পারেন। যার দৃষ্টান্ত আইসল্যান্ড, সুইডেনসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়। শিক্ষিত নারী দেশ ও দশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেন। 

নেপোলিয়ন বলেছিলেন, 'আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব।' শিক্ষিত মা শিক্ষিত উন্নত সমৃদ্ধ জাতির বুনিয়াদ করতে পারেন। শিশুর মনোজগতে চিন্তায়, মননে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব দেখা যায়। একজন শিক্ষিত মা শুধু নিজেকে উন্নত করেন না পাশাপাশি তিনি পরিবার বাচ্চাদের সুশিক্ষিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। শিক্ষিত মা নিজে আয় করার পাশাপাশি দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার বাস্তব বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।

মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ এর রূপকল্প গ্রহণ করেছে। যার চারটি স্তম্ভ রয়েছে যেগুলো হলো স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার। দেশের প্রায় অর্ধেক নারী সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম স্মার্ট নারী সমাজ গড়ে তুলতে হবে। একজন স্মার্ট মা তার বাচ্চাদের স্মার্ট নাগরিক হবার বুনিয়াদি শিক্ষা দিতে পারেন। নারীদের পিছনে ফেলে কোনভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৩-২৪ সেশনে শতকরা ৫৮ ভাগ নারী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এটি স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট নারী সমাজের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। 

বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে সপ্তম। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতিসহ অনেক রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ গর্বিত নারী। যাদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা, নিষ্ঠার উপর ভর করে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ স্মার্ট অভিলক্ষে ধাবিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান, মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে খুব সুনাম ও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে নারীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, রপ্তানি নারীর ভূমিকা অনবদ্য। 

একজন নারী মা-বউ-বোনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এটি স্মার্ট বাংলাদেশের মূল চেতনা। চিন্তা-চেতনায়, মেধা-মননে একজন দক্ষ, প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তা, নারীর সমঅধিকার ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নাগরিকই স্মার্ট নাগরিক। একজন স্মার্ট নাগরিক প্রত্যেক মানুষের সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদায় বিশ্বাসী হবেন। স্মার্ট নাগরিক দুর্নীতি মুক্ত, আইনের শাসনে বিশ্বাসী, সৎ, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক হবেন। 

স্মার্ট বাংলাদেশের নারীসমাজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করতে পারবেন। স্মার্ট নারী সমাজ কম্পিউটার সিমুলেশন, ব্লকচেইন টেকনোলজি, ফ্রিল্যান্সিং, সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম, ইন্টারনেট অব থিংস, কগনিটিভ কম্পিউটিং ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন।আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হয়ে দেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন সফট স্কিল অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে বিশ্বনাগরিক হিসেবে তৈরি করবে 

স্মার্ট নাগরিকগণই একটি স্মার্ট সমাজ গড়তে পারেন। এ সমাজে সুশাসন, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সম্মান করবে। স্মার্ট নারী সমাজ একটি সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ গড়তে পারেন। স্মার্ট নাগরিকগণ নিজের অধিকার কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। এমন একটি সমাজ গঠিত হবে যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

স্মার্ট নারী সমাজ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেন। নারী স্বাবলম্বী হলে দেশের অর্থনীতি বেগবান হয়। তার উপার্জিত অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হয়, রাষ্ট্রের ভিত মজবুত হয়। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে চাকরির পাশাপাশি নারীরা উদ্যোক্তা হয়ে দেশকে অনেক দূরে এগিয়ে নিতে পারেন। তথ্য প্রযুক্তির যুগে নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে পারছেন। যার মাধ্যমে তিনি জিডিপিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।

ব্যক্তি-গোষ্ঠী পর্যায়ে সুশাসন, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। এরিস্টটল বলেছিলেন, 'মানুষ রাজনৈতিক জীব'। একজন রাজনৈতিক নেতার আচরণ তার অনুসারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

পরিশেষে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সুশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত, সমৃদ্ধ, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সামাজিক সাম্য, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে যেখানে স্মার্ট নারী সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

লেখক : প্রভাষক, সরকারি হাজী আব্দুল বাতেন কলেজ, সন্দীপ, চট্টগ্রাম।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর