৩ জুলাই, ২০২৪ ১৯:৩২

আওয়ামী লীগে বাদলের অন্তর্ভুক্তিতে এই নেতাদের আপত্তি ছিল কেন

সেলিনা বাদল

আওয়ামী লীগে বাদলের অন্তর্ভুক্তিতে এই নেতাদের আপত্তি ছিল কেন

সেলিনা বাদল

জীবন-মৃত্যু সবই আল্লাহর হাতে, মৃত্যুর আগে কিছু সত্যি কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি! মঈন উদ্দীন খান বাদলকে বহুবার বলেছি তোমার সমাজতন্ত্র বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না। কারণ বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও মুসলিম অধ্যুষিত বাসভূমি। তাই কোনোদিন সমাজতন্ত্রকে মানবে না বাংলাদেশের মুসলমান জনগোষ্ঠী। আওয়ামী লীগই একমাত্র পার্টি যা কিনা তোমাকে স্যুট করে! শুনেছে কিন্তু কখনোই জবাব পাইনি! 

বিএনপিতে যোগ দিয়ে শাহজাহান সিরাজ সাহেব বাদলকে প্রস্তাব দিয়েছিল মন্ত্রী পরিষদে তোমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বেগম জিয়া! আমি তখনই বাদলকে বলেছি এই মন্ত্রী হবার চাইতে মৃত্যুবরণ করা অনেক সম্মানের, রাজনীতি করতে গিয়ে যদি মন্ত্রী হবার জন্য নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে হয়, তবে আমি মনে করি এই মানুষ ঠকানো রাজনীতির দরকার নাই!

আমি চট্টগ্রামে বাদল সাহেবের সাথে যখনই গিয়েছি কোনোবারই মহিউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের বাসায় না গিয়ে থাকিনি। আমি নিজ মুখে মহিউদ্দিন ভাইকে বলেছি নেত্রীর কাছে বাদলকে নিয়ে আপনি যাবেন এবং বাদল আওয়ামী লীগের একজন নেতা হওয়া খুব দরকার! বাদল নিজ মুখে কখনো কিছু বলেনি, আমি যখনই বলতাম আওয়ামী লীগের নেতা ছাড়া তোমাকে মানায় না, তখনই হেসে বলতো আরে আমিতো বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছাই পূরণের জন্য শেখ হাসিনার সাথে কাজ করছি! এবং নেত্রীকেও বলতে শুনেছি এই একই কথা!

চট্টগ্রাম দুই নেতার কাছেই আমি নিজে বলেছি (একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ ভাই) আপনারা চট্টগ্রামের স্বার্থে মঈন উদ্দীন খান বাদলকে কালো কোট পরিয়ে নিয়ে যান নেত্রীর কাছে। দুই নেতাই আমাকে উত্তর দিয়েছিল শেখ হাসিনার মতো নেত্রীর কাছে বাদলের যাওয়া ঠিক হবে না! এবং নেত্রীর বিরুদ্ধে অনেক বিদ্বেষ মূলক কথা বলেছে! একজন পৃথিবীতে নাই, আরেকজন এখনো বেঁচে আছেন! আওয়ামী লীগ পরিচালনায় বাম দলের প্রাক্তন নেতাই বেশী, তাহলে বাদলের আওয়ামী লীগে অন্তর্ভুক্ত হলে চট্টগ্রামের এই বিশিষ্ট নেতাগণের আপত্তি ছিল কেন? মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবনে কোনো সিদ্ধান্ত মঈন উদ্দীন খান বাদলকে ছাড়া নিয়েছে বলে আমার জানা নাই। মহিউদ্দিন চৌধুরী শেষ বারের মতো মেয়র, রোড মার্চ, বন্দর ঘেরাও, টানেল, সব কিছুই মঈন উদ্দীন খানের সাথে আলোচনা করেই উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মোশারফ সাহেবকে আমি বাদল এমপি হবার পর হতেই চিনেছি। কিন্তু ওনার কেন আপত্তি ছিল বাদল আওয়ামী লীগে যোগ দিলে? সেটা আমি বলতে খুব পারব না, তবে উনি আমাকে বলেছেন বাদলের জন্য আওয়ামী লীগ ঠিক নয়! 

আজকে আমার কথা হলো যে নেতাদের শেখ হাসিনার উপর এত রাগ, এত ক্ষোভ, তারা কেন নিজের পরিবারকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে এতই উদগ্রীব হলো? মঈন উদ্দীন খান বাদল আওয়ামী লীগ যোগ দিলে যদি বাদলের অসম্মান হয় তবে নিজেদের পরিবারের জন্য কেন নেত্রীর কাছে এত অনুনয়-বিনয়ের প্রয়োজন ছিল? কালুরঘাট ব্রীজ অবশ্যই হয়ে যেত, চট্টগ্রামে বন্দরে হসপিটালও হতো, হয়নি। কারণ বড় বড় নেতাগণ বাদলের হাত দিয়ে কিছু হউক সেটা কোনোভাবেই মানতে পারেনি!

চট্টগ্রাম হতে প্রতি বছর বহু রোগী ভারতে যায় চিকিৎসার জন্য। চট্টগ্রামের মানুষ কোটি কোটি টাকা দিয়ে আসে ভারতকে। তাই অনেক চেষ্টা করেছিল চট্টগ্রামের মানুষের জন্য একটা হসপিটাল করার। ওই হসপিটালও বিখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতাগণ করতে দেয়নি, যদি জাসদ নেতা কোনোভাবে বিখ্যাত হয়ে যায়! অনেক দৌড় ঝাপ করে বন্দরের নিকট হতে জমি বরাদ্দ নিয়ে নৌ বাহিনীর পড়াশোনার জন্য নেত্রীর নিকট হতে একটি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পারমিশন নিয়ে চট্টগ্রামে স্টাবলিস্ট করে যেতে পেরেছিল! আমিন জুট মিলেও অনেক কাঁঠখর পিটিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য একটা জুটের উপর পড়াশোনার জন্য ইউনিভার্সিটি করে গিয়েছিল।

৫ বছর হতে চলেছে মঈন উদ্দীন খান নাই পৃথিবীতে, কিন্তু মঈন উদ্দীন বাদলের প্ল্যান করা সব অনুমোদন হচ্ছে চট্টগ্রামে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরেও কোনো নেতাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে শুনলাম না। বরং মোসলেম উদ্দিন সাহেব বাদলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এসে মাইক নিয়ে সবাইকে জানাল যে বাদল মুক্তিযুদ্ধ করেনি! আমি হাসলাম ওনার কথা শুনে! মোসলেম উদ্দিন সাহেব নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সহমর্মিতার কারণে! আমু ভাই সুইজারল্যান্ডে বাদলকে বলেছিল বিরোধিতা করিস না। কারণ সারাজীবন আওয়ামী লীগ করছে, মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট ওই ভাবেই প্রাপ্তি ছিল মোসলেম উদ্দিন সাহেবের! মঈন উদ্দীন খান বাদলের সন্মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে এবং নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছেন। আমি ও আমার সন্তান এবং বাদলের পরিবার চির কৃতজ্ঞ মহামান্য নেত্রীর কাছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনো নেতা পিছে যদি তার কন্যার গিবত গায় তবে সেই মানুষদের নেতা থাকবার কোনো যোগ্যতা নাই। আমার কথায় আজকে অনেকেই খুব কষ্ট পাবে জানি। কিন্তু আমারও অনেক কষ্ট মনের মধ্যে রয়েছে। তাই ভাবলাম সবাই ততুগিরি করে যখন, আমি অন্তত যতটুকু সত্যি জানি লিখে যাই। 

সব মানুষের জানা দরকার কেন অনেক ভালো কাজ সমাজে হয় না। কিছু নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা মানুষের জন্যই অনেক ভালো কাজ হয় না। মানুষ মানুষের উপরের খোলসটাই দেখে বিচার করে, আসলে ভিতর আর বাইরে ভাবনা অনেক তফাৎ।

লেখক : সমাজ সেবিকা

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর