১৬ জুলাই, ২০২৪ ২১:২৯

আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধি

আনিসুর রহমান মিঠু

আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধি

আনিসুর রহমান মিঠু

ছাত্রলীগের সোনালী অতিত, গৌরবের ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধ , ধাপে ধাপে নানা অর্জন, পাশাপাশি ছাত্রলীগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত আমাদের (সংশ্লিষ্ট )সকলের। আমরা আসলে দেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা ছেড়ে দিয়েছি, কারণ এতো বছর রাজনীতি করার পর এখন মনে হচ্ছে আমি বা আমার মতো, যারা কোন এমপি-মন্ত্রীর উত্তরাধিকার না, আমরা আসলে দেশ নিয়ে ভাবার কেউ না।

এতো বছর একটানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কোথাও কোন বাধা নেই, প্রতিবন্ধকতা নেই। অথচ ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রছাত্রীদের চিন্তায়, মগজে, হৃদয়ে ছাত্রদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতে না শিখিয়ে, শুধু মিছিলে বা ছাত্রনেতারা যে এমপির ছায়ায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা সেই নেতার কর্মসূচিতে ছাত্রদের শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে গেছেন, ভালোবাসার বদলে ভয় দেখিয়ে মিছিল বড় করে গেছেন!

ছাত্রলীগের বহুনেতা কর্মী নিজেরাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, অবদান ও ত্যাগ সম্বন্ধে কিছুই জানে না, দেশ কেন কিভাবে জন্ম নিলো- কিছুই জানে না, তবে পদ-পদবী পেয়েছে বড় বড়। এরা কোন না কোন নেতার লাঠিয়াল, পোষা সাপ কিংবা দাবার গুটি। নেতা যখন বলেন হুক্কা হুয়া, এরা শুধু বলে কেয়া হুয়া, কেয়া হুয়া। এতোটুকুই এদের কাজ। এর বেশি এরা জানেও না বুঝেও না। কিছু টাকা কামাই করা ছাড়া কোন চিন্তা এদের নাই।

ছাত্রলীগের বিশাল বিশাল মিছিল দেখে আমরা যারা পুরানো ছাত্রলীগ কর্মী, তারা মনে মনে খুশী হই আর ভাবী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এরা যে হুক্কা হুয়া নেতার কেয়া হুয়া কর্মী তা বুঝিনি আগে। ১৫ বছরে লক্ষ লক্ষ কর্মীর অস্থিমজ্জায়, চিন্তা চেতনায়, হৃদয়ে বিশ্বাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ স্থাপন করা সম্ভব ছিলো। আমরা কমিটির আকার যতোই বড় করেছি ততোই আদর্শহীন কেয়া হুয়া কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব আছে জানতাম না, অথচ ভিপি পদে ছাত্রলীগের পরাজয় ইতিমধ্যেই দেখেছি। এবার দেখছি আমাদের বিরুদ্ধে উত্তাল মিছিলে!  এ মিছিলে যারা আজ অংশ নিচ্ছে হয়তো গতকালও এরা ছাত্রলীগের মিছিলে ছিলো, হয়তো এরা কমিটিতেও আছে। সংকটের সমাধান হলে আবারো এদের ছাত্রলীগের মিছিলেই দেখা যাবে।

আমাদের কেন্দ্রীয় মহান নেতাদের ভেবে দেখা উচিত ১৫ বছরে আমরা কি করলাম, কেন করলাম, কোথায় ভুল ছিলো, এখনো ভুল সংশোধনে উপায় আছে কিনা। তবে এতোটুকুই বলতে পারি রাজনৈতিক চিন্তা চেতানায় পরিপক্ক এবং দেশপ্রেমিক ও জনদরদী নতুন রাজনৈতিক কর্মী তৈরী হওয়া বা নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখার মতো ছাত্রনেতা আপাতত তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। 

কারণ এমপি-মন্ত্রীর ছেলেমেয়ে বা আত্মীয় কোটায় কেউ না কেউ বিভিন্ন উচ্চাসনে বসবেন এবং তারাই যোগ্য- এটা বর্তমান প্রজন্ম ভালোভাবেই বুঝে গেছেন। নতুন ছাত্ররা বুঝে গেছেন ভবিষ্যতে কোন নেতার ছেলে কিভাবে কোন এলাকার অভিভাবক হবেন, কে কোন এলাকার নীতি নির্ধারক হবেন, কার সুপুত্র কোথায় রাজনীতি পরিচালনা করবেন। তাই তারা রাজনৈতিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়েই দিয়েছেন।

তাছাড়া পর্যায়ক্রমিক ভাবে উপরের কমিটির লোকেরা টাকা নিয়ে নিচের কমিটি অনুমোদন করেন, এ সত্য ওপেন সিক্রেট। জেলা সম্মেলন ছাড়াই কমিটি হয়। নতুন সম্মেলনের সময়ে যে সাবেক ছাত্রনেতাদের দাওয়াত করে আনার ঐতিহ্য আছে, কেন্দ্রীয় বর্তমান নেতারা হয়তো জানেনও না।

ছাত্রনেতারা জয় বাংলার প্রতি মমতা তৈরি করতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ছাত্রদের মনে সম্মান তৈরি করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধের করুণ ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ সম্বন্ধে তারা বক্তব্যেও কিছু বলেন না। রাষ্ট্রীয় ভাবেও আমাদের সরকারের ও দলের বিভিন্ন উদাসীনতা রয়েছে, শুধু ছাত্রলীগকে দায়ী করাও অন্যায় হবে। আমাদের উচিত নিজেদের মধ্যে গোপনীয়তা বজায় রেখে আত্মসমালোচনা করা। জনগণকে গুরুত্ব না দেয়া কোনভাবেই ভালো রাজনৈতিক কৌশল নয়।

মানুষ এখন আর সাহসী সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্নও দেখে না। সাংবাদিক হিসেবে যাদের মানুষ চিনেন তাদের কাজ হচ্ছে ষন্ডাপান্ডা শ্রেণির নেতাদের ড্রইং রুমে বসে লেজ নারানো, তাদের ইচ্ছা মতো সংবাদ তৈরি করা। এর ব্যতিক্রম যেসব সাংবাদিক আছেন তাদের ঝুকিপূর্ণ জীবনের কথাও নবীন ছাত্ররা জানেন। তাই সে জীবনও তারা চান না। 

ছাত্রলীগের ছেলেরাই আগে সাংবাদিক হতো বা হতে চাইতো। এরা মার খেয়ে ঝুঁকি নিয়ে লেখালেখি করতো। এখন সংবাদকর্মী হওয়ার নেশা আছে এমন ছাত্রও দেখি না।

তবে এ অবস্থার জন্য বর্তমান ছাত্রলীগ বা ছাত্রদের কোনভাবেই দায়ী করা যায় না। আমরা ওদের কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলতে নিষেধ করি। আমরা এদের নষ্ট হয়ে গড়ে উঠতে অনুপ্রেরণা দেই। আমরা এদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছি মিথ্যাবাদীরা, চোরেরা, চামচারা, দুর্নীতিপরায়ণরা সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তারাও তেমনটি হয়ে উঠতে চায়। রাজনীতির গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করা উচিত রাজনীতি সচেতন দেশপ্রেমিক মানুষদের।

বিডি-প্রতিদিন/শআ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর