রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করাই লক্ষ্য

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি

উবায়দুল্লাহ বাদল

মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করাই লক্ষ্য

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হলো বাসস্থান বা আবাসন ব্যবস্থা। একজন মানুষের সুন্দর ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো বাসস্থানও প্রয়োজন। এ জন্য দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নিজের জন্য নিশ্চিত করতে চায় একটি মানসম্মত নিরাপদ বাসস্থান বা আবাসন ব্যবস্থা। দেশের মানুষের এই চাহিদা শতভাগ পূরণ করতে বর্তমান সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। দিন দিনই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের আবাসন খাত। এই খাতের এগিয়ে যাওয়া, চ্যালেঞ্জ ও আগামীতে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে সচিবালয়ে নিজ দফতরে খোলামেলা কথা বলেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি। বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আবাসন খাতের এগিয়ে যাওয়াকে কীভাবে দেখছেন?

শরীফ আহমেদ এমপি : খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো বাসস্থান মহান সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। এ অধিকার বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মানসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আবাসন খাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দেশে আশ্রয়হীন, গৃহহীন, ভবঘুরে ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা যেমন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে তেমনি সচ্ছল মানুষের আবাসন ব্যবস্থায় এসেছে গুণগত পরিবর্তন।

উন্নত নির্মাণসামগ্রী ও প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত নির্মাণশৈলীর প্রয়োগ, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। আবাসন খাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়েছে। এই পরিবর্তন সন্তোষজনক, আশাব্যঞ্জক ও প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি এ খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী বলে মনে করেন?

শরীফ আহমেদ এমপি : আবাসন একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও এ খাতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিজমির সুরক্ষা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হয়। অন্যদিকে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য পর্যাপ্ত ভূমির প্রয়োজন। ফলে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা আমাদের জন্য অপরিহার্য যা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণসামগ্রীর ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি সম্ভাবনাময় আবাসন খাতের জন্য আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আশা করি সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার এবং বর্তমান সরকারের লক্ষ্য- সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এ খাত আগামীতে আরও কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

শরীফ আহমেদ এমপি : জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা [SDG] এর লক্ষ্যমাত্রা ১১ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এই লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের মানুষের মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা  করতে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি, বেসরকারি, ছিন্নমূল সব নাগরিকের জন্য আবাসনের সুব্যবস্থা করার নিমিত্ত অধীনস্থ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মোট ১০৫টি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উত্তরা ১৮ নং সেক্টরে ‘এ’ ব্লকে ৬ হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭৩টি ভবনের ৬ হাজার ১৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি ভবনে ৪ হাজার ২৫৫টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ গ্রহীতা বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছে। হাতিরঝিল এলাকায় ২টি ১৬তলা বিশিষ্ট ভবনে ১১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণও শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার গুলশান, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ও ধানমন্ডি এলাকার ৯টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৯টি ভবনে ১৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেনশিয়াল পার্কে পিপিপির ভিত্তিতে ২৫ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার প্লট উন্নয়ন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বস্তিতে বসবাসকারী ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে মিরপুরে সেকশন-১১ এ বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক বসবাসের জন্য ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি টঙ্গীর দত্তপাড়ায় বস্তিবাসীদের জন্য ১২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ফ্ল্যাট নির্মাণ ও প্লট উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প চলমান। আবাসন খাতে কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা সমর্থ হব।

সর্বশেষ খবর