ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেছেন, দুই দশক ধরে দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আগে বেসরকারি খাতে আস্থার সংকট ছিল কিন্তু এখন মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। আমি যখন এমবিবিএস পাস করলাম তখন দেখলাম সেবার জন্য রোগীকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হতো। এক জায়গায় ডাক্তার দেখানো, টেস্ট, হাসপাতাল, ফার্মেসি বিভিন্ন জায়গায়। এজন্য রোগী নিয়ে স্বজনদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তখন এক ছাতার নিচে সব স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
ল্যাবএইডের যাত্রা শুরুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, সব স্বাস্থ্যসেবা এবং দক্ষ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে ল্যাবএইডের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন দেশে-বিদেশে এ মডেল অনুসরণ করে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৩২ বছর ধরে দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। প্রথম দিকে আর্থিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমি ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান নই। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। ব্যাংকে গেলাম ঋণের জন্য, সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরতে হলো। ১৯৮৪ সালে বাবা অবসরে গেলে তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৮৫ হাজার টাকা আমাকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। তবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী, চারপাশের মানুষের সহযোগিতা সব সময় পেয়েছি। ঢাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরে দেখলাম অন্য জায়গায়ও রোগী অনেক, তাদের প্রয়োজন আছে। তখন ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। যেখানে শূন্যতা দেখি, আমি সেখানে এগিয়ে যাই। ১৯৯৭ সালে মায়ের বুকের ব্যথার চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। এনজিওগ্রাম করানো, পাঁচজন মানুষের থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগী সেখানে চিকিৎসার জন্য যেত। এরপর ফিরে এসে কার্ডিয়াক হাসপাতাল করি। এখন কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ২০ হাজার টাকায় এনজিওগ্রাম করতে পারছেন দেশের রোগীরা।
বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১০ হাজার হাসপাতাল আছে। এক হাসপাতাল দিয়ে সারা দেশের তুলনা চলে না। ভারতে ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর হসপিটাল অ্যান্ড হেলথকেয়ার (এনএবিএইচ) পদ্ধতি চালু করেছে। বেসরকারি হাসপাতাল চালুর দুই বছরের মধ্যে এনএবিএইচের অনুমোদন নিতে হয়। দুই বছর পরপর অডিট হয়। এ অনুমোদন নিতে হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসার মানসংক্রান্ত অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। আমাদের দেশে অতিদ্রুত এটি চালু করতে হবে। নয়তো হাসপাতাল, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বদনাম চলতে থাকবে। পুলিশি তৎপরতা দিয়ে কখনো সমাধান হবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতায় এ অডিট পদ্ধতি চালু করলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকবে না। দেশে চিকিৎসার মান নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা থাকায় অনেক রোগী বিদেশে চলে যাচ্ছে। রোগীরা যাচ্ছে তাদের চিকিৎসা খরচ নিয়ে, তাদের স্বজনরা যাচ্ছে। এতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।