মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে পরিচালনা করা যায় ওয়ালটন ফ্রিজ

ওয়ালটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন আইওটি-নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে পরিচালনা করা যায় ওয়ালটন ফ্রিজ

তোফায়েল আহমেদ, চিফ বিজনেস অফিসার, ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর

ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের চিফ বিজনেস অফিসার তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, একসময় ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যই ছিল আমদানি-নির্ভর। দেড় দশক আগে ওয়ালটন দেশে ফ্রিজের উৎপাদন শুরু করে। এর মাধ্যমে দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প উৎপাদন খাতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। ওয়ালটনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য দিয়ে আমদানিকারক দেশ থেকে প্রথমে উৎপাদনকারী এবং এরপর বাংলাদেশ রপ্তানিকারী দেশে পরিণত হয়। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে ফ্রিজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখের মতো। এ চাহিদার সিংহভাগই ওয়ালটন পূরণ করে আসছে। বাংলাদেশের ফ্রিজ বাজারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ওয়ালটনের দখলে। গ্রাহকদের এই আস্থা-ভালোবাসা নিয়ে আমরা অর্জন করেছি সুপারব্র্যান্ডের স্বীকৃতি। নবমবারের মতো ফ্রিজে দেশসেরা ব্র্যান্ড হয়েছি।

তিনি বলেন, ফ্রিজে নতুন নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ঘটাতে আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগ প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমরা বিশ্বের প্রথম নাইন-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল মোডের ফ্রিজ উন্মোচন করেছি। একই সঙ্গে আমাদের রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উৎপাদনকৃত ফোর-ডোর রেফ্রিজারেটর। জায়ান্টটেক সিরিজের এসব ফ্রিজের মধ্য দিয়ে হাই-টেক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বিপণনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে জায়ান্টটেক সিরিজের এসব ফ্রিজ পরিচালনা করার পাশাপাশি স্মার্ট কন্ট্রোল, ইউটিউব ব্রাউজিং, অনলাইন গ্রোসারি শপিং, অফলাইন ভিডিও ও অডিও, কাউন্টডাউন ক্লক, অনলাইন রেসিপি, ক্লক, ক্যালেন্ডার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সেলফি ক্যামেরা, ওয়েদার আপডেট ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ফিচার পাচ্ছেন। রয়েছে টারবো ও ইকো ফিচারসমৃদ্ধ ডুয়ো কুলিং সেটিংস। এসব ফ্রিজের এমএসও (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করে। ওয়ালটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফ্রিজ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করেছে। ভবিষ্যতে গ্রাহকদের জন্য আমরা আরও চমকপ্রদ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের ফ্রিজ নিয়ে আসছি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের যাত্রার শুরুটাই ছিল চ্যালেঞ্জে ভরপুর। বাংলাদেশি ব্র্যান্ড এটাই ছিল আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ। সবকিছুকে ছাপিয়ে আমাদের সম্মানিত উদ্যোক্তা-পরিচালক মহোদয়গণ যে সাহস দেখিয়েছেন এটাই ছিল আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচি এবং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আমরা ফ্রিজের ডিজাইন ও ফিচার আপডেট করে আসছি। আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের আবহাওয়ার ধরন অনুযায়ী এবং কনজ্যুমার বিহেভিয়ার অনুযায়ী প্রোডাক্ট ডেভেলপ করছি। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তি, থ্রিডি এমএসও, ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ, ওভার ভোল্টেজ প্রোটেকশন টেকনোলোজি, ইনোভেটিভ সব ফিচার এবং প্রোডাক্ট ভ্যারিয়েন্ট এটার বড় প্রমাণ। ফ্রিজ উৎপাদন শিল্পে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদার পুরোটাই ওয়ালটনের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। ওয়ালটন বরাবরই চেয়েছে ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে এ খাতকে রপ্তানিমুখী সেক্টরে পরিণত করতে। আমাদের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সে  লক্ষ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি। ফ্রিজ শিল্পে বিপুল বৈশ্বিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান গড়তে কাজ করছি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছি।

তিনি বলেন, দেশের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অ্যাডভান্স টেকনোলজির পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। দেশের ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে ওয়ালটন সে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের নাম্বার ওয়ান রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালক মহোদয়গণের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা-দিকনির্দেশনা, গুণগত মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিশ্বমানের পণ্য তৈরি এবং গ্রাহকদের আস্থা-ভালোবাসার ফলে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড হিসেবে সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ঠেলে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন করে করারোপ করা হয়নি। পূর্বের সুবিধাগুলো বহাল রাখা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে আংশিক ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। সরকারের দেওয়া নীতিসহায়তা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এখন রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের সর্বাধুনিক রেফ্রিজারেটর এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। লাক্সারি সেগমেন্টের পণ্যও এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেফ্রিজারেটর রপ্তানি হচ্ছে। সুতরাং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তৈরিকৃত রেফ্রিজারেটর আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এই বিষয়টিতে আমাদের এখন দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। এর পাশাপাশি দেশের বাজারে এখনো কমার্শিয়াল ফ্রিজে আমদানি-নির্ভরতা রয়েছে। অথচ কমার্শিয়াল ফ্রিজেও আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের ফ্রিজ, ফ্রিজারের পাশাপাশি কমার্শিয়াল ফ্রিজ, বেভারেজ কুলার সবগুলোকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে বিবেচনা করে নীতিনির্ধারণ করলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

সর্বশেষ খবর