মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশি পণ্যে ভোক্তার চাহিদা পূরণ করছে আর এফ এল গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশি পণ্যে ভোক্তার চাহিদা পূরণ করছে আর এফ এল গ্রুপ

আর. এন. পাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আর এফ এল গ্রুপ

আর. এন. পাল বলেন, সরকার সব সময় চিন্তা করে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। দেশি শিল্পের সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরের বাজেটেও নানা রকম নীতিসহায়তা ঘোষণা করেছে। ফলে অনেক ব্র্যান্ডেড কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। আগে তারা বিদেশ থেকে আমদানি করত। শিল্পবান্ধব বাজেটের সুবিধা নিয়ে আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়িয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারি।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর. এন. পাল বলেছেন, দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোয়ালিটিতে এক নম্বর রেফ্রিজারেটর ব্র্যান্ড ভিশন। গ্রাহকের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। গত তিন চার বছর ধরে আমরা যত রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করেছি তার পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা। ভোক্তার চাহিদা পূরণে ভবিষ্যতে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াব। 

আর. এন. পাল বলেন, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরাই প্রথম দেশের বাজারে গ্লাসডোর রেফ্রিজারেটর নিয়ে এসেছি। চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন মডেলের এবং ক্যাপাসিটির রেফ্রিজারেটর বাজারজাত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আরেকটা বড় কাজ করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর কেনার আগে মধ্যবিত্ত মানুষ বিদ্যুৎ খরচের কথা চিন্তা করেন। সেই দিক বিবেচনা করে আমরা অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ খরচের রেফ্রিজারেটর বাজারে এনেছি। 

তিনি বলেন, আমাদের সামনে যত চ্যালেঞ্জ আসবে, সম্ভাবনাও আসবে তত। একটা সময় রেফ্রিজারেটর আমদানি করা হতো। আমরা চিন্তা করেছি, আমদানি নির্ভরতা কমানোর। দেশে পণ্য উৎপাদন করে খরচ কমানোর। যাতে আমদানি কমানোর পাশাপাশি কম দামে পণ্য দেওয়া যায়। এ জন্য অবশ্য সরকারও আমাদের অনেক নীতি সহায়তা দিচ্ছে। আর আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহককে মানসম্পন্ন পণ্য দেওয়ার। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত ও চীনও নতুন পণ্য আমদানি করে। আমাদের দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে আমরা রেফ্রিজারেটর রপ্তানি করছি। রপ্তানিতে ভালো সুবিধা পেলে আগামীতে আমরা প্রতিযোগী দেশগুলোতে রেফ্রিজারেটর রপ্তানি করতে পারব। তখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে আরএফএল-এর ভিশন পণ্যের মার্কেট শেয়ার বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে। নিত্যনতুন পণ্য আনতে পারব। রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টে আরও বেশি টাকা খরচ করতে পারব।

আর. এন. পাল বলেন, আমি মনে করি আগে দেশের মানুষের বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতি যে ভালোবাসা ছিল, আস্তে আস্তে সেটা কেটে যাচ্ছে। ভিশনসহ অন্যান্য দেশি ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। এমনকি দেশের মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মুখেও দেশি পণ্যের প্রশংসা শোনা যায়। তবে এখনো যাদের পয়সার অভাব নাই, বিদেশি পণ্যের প্রতি দুর্বল, তারা দেশি পণ্যের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হলে আমাদের অনুপ্রেরণা বাড়বে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও বেশি সমৃদ্ধিশালী করতে পারব।  তিনি আরও বলেন, আজকে ডলারের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য অনেকটা দায়ী রেডিমেড পণ্য আমদানি। বাংলাদেশে রেডিমেড পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে আরএফএল গ্রুপ। একটি রেডিমেড পণ্যও আমদানি হতে দেব না। যে রেডিমেড পণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে, তারই বিকল্প পণ্য আমরা উৎপাদনের চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে আমরা শতভাগ পণ্য দেশে তৈরি করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আর. এন. পাল বলেন, সরকার সব সময় চিন্তা করে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। দেশি শিল্পের সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরের বাজেটেও নানা রকম নীতিসহায়তা ঘোষণা করেছে। ফলে অনেক ব্র্যান্ডেড কোম্পানির পণ্য বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। আগে তারা বিদেশ থেকে আমদানি করত। শিল্পবান্ধব বাজেটের সুবিধা নিয়ে আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়িয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আর্থিক যে অসচ্ছলতা সৃষ্টি হয়েছে, এতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ রয়েছে। চায়না প্লাস-১ বাজার যেটা চলছে, এতে পুরো পৃথিবী বলছে, অর্থনীতি চীন কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ১৮ কোটি মানুষের সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাহলেই আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।

আর. এন. পাল বলেন,  ইলেকট্রিক পণ্যে যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমস্যার পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু সমস্যা যেটুকু দেখা দেয়, সেটা সমাধানের জন্য মার্কেটে আমাদের বিশাল টিম রয়েছে। তারা দ্রুত সেবা প্রদান করছে। যে কোনো সময় ভোক্তা অনলাইন সিস্টেমে ফোন করে পণ্যের আইডি নম্বর দিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সার্ভিস টিমে নম্বর পৌঁছে দিচ্ছি। তারা বাসায় গিয়ে সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছে। এতে ভোক্তা অনেক খুশি হচ্ছেন।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমরা উৎপাদন ক্ষেত্রে অনেক সক্ষমতা এনেছি। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরেও রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হবে না। বিভিন্ন দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যে সব সুবিধা ভোগ করছি, সেসব সুবিধা না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। যদি দেশে কোনো প্রতিবন্ধকতায় (হরতালসহ সব ধরনের অরাজকতা, সরকারের বিভিন্ন দফতরে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ হলে)  কোনো সমস্যা হবে না। এলডিসি উত্তরণের পরও আমাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি চলমান থাকবে।

 

সর্বশেষ খবর