সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

পণ্য উৎপাদনে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ন্যাশনাল পলিমার

মো. মাহমুদুল ইসলাম শামীম, নির্বাহী পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং), এনপলি গ্রুপ

পণ্য উৎপাদনে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ন্যাশনাল পলিমার

প্রশ্ন : পিভিসি পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রাহক আস্থা ধরে রেখেছে। এ অর্জনে কী অনুপ্রেরণা কাজ করেছে?

উত্তর : ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল পলিমার একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার মাধ্যমে দেশ গড়ার দায়িত্ব নিতেই এ যাত্রা। আমি ২৯ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত আছি। এনপলি গ্রুপ শুরু থেকেই নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে ইউপিভিসি পাইপ ও ফিটিংস উৎপাদন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় লোহার তৈরি পাইপ ও ফিটিংস ব্যবহার করা হতো। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রজেক্ট ও বিল্ডিংগুলোতে  পিভিসি পাইপ ও ফিটিংসের ব্যবহার বাড়তে থাকে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজেও পিভিসি পাইপ অ্যান্ড ফিটিংসের ব্যবহার শুরু হয়। ন্যাশনাল পলিমারের জন্য এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল। মূলত আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অংশ নেওয়ার জন্য এবং দেশে আন্তর্জাতিক মানের ইউপিভিসি পাইপ অ্যান্ড ফিটিংসের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল পলিমার এ ব্যবসা শুরু করে, যা এখনো সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : নির্মাণসামগ্রীর ক্রমবর্ধমান বাজারের চাহিদার কতটুকু পূরণ করতে পারছেন আপনারা?

উত্তর : দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ার ফলে বাংলাদেশে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের চাহিদা প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা পূরণে আমরা বিভিন্ন ধরনের ইউপিভিসি পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস, সিপিভিসি, এইচডিপি, পিভিসি ডোর অ্যান্ড শিট, ওয়াটার ট্যাংক অ্যান্ড ট্যাপ, প্লাস্টিক হাউজহোল্ড ও ফার্নিচার পণ্য তৈরি করি। এ মুহূর্তে আমরা বাজারের মোট চাহিদার ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে পারছি।

প্রশ্ন : বাজারে এখন অনেক প্রতিযোগী কোম্পানি পিভিসি পণ্য উৎপাদন করছে। কাঁচামালের দাম বাড়ছে। মান ও দামের সমন্বয় করছেন কীভাবে?

উত্তর : বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসকে শিল্পপণ্য বলা হয়। এগুলো ভবনের ভিতরে বা মাটির তলায় দীর্ঘদিনের জন্য বসানো হয়। এখানে মান নিশ্চিত করাটাই মূল বিষয়। এ খাতে বিজ্ঞাপন ও প্রচার ছাড়াই আমাদের পরিবেশক, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বার এবং ব্যবহারকারীদের আমরা  জানাতে পেরেছি যে, ন্যাশনাল পলিমার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে। আমরা মনে করি শুধু চটকদার বিজ্ঞাপন দিলেই গ্রাহকের আস্থা অর্জন হয় না বরং বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি পণ্যের মান নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিযোগতিমূলক বাজারে পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে সহনশীল দামেই আমরা গ্রাহকদের  সেরা পণ্যটি দিতে পারছি।

প্রশ্ন : পণ্যের গুণগত মান রক্ষায় কী ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কী ধরনের সনদ রয়েছে আপনাদের পণ্যের?

উত্তর : ন্যাশনাল পলিমারের পণ্য উৎপাদনে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি  ব্যবহার করা হয়। কারখানার নিজস্ব ল্যাবে হাইড্রোস্টাটিক প্রেশার টেস্ট, ইমপ্যাক্ট স্ট্রেন্থ টেস্টসহ অন্যান্য সব ধরনের টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বুয়েট ও বিএসটিআই টেস্টে উত্তীর্ণ আমাদের পণ্য। এ ছাড়া আমাদের পণ্য ভারত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানসহ বৈশ্বিক মান নির্ধারণী সনদ প্রাপ্ত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ISO 9001: 2015, 14001: 2015, 45001: 2018 (certified by AJA Europe Ltd.) এবং IS 4985: 2021 & IS 13592: 2013 (certified by the Bureau of Indian Standards.) এসব সনদ প্রাপ্তির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিশ্চিন্তে আমাদের পণ্যের ওপর আস্থা রাখছে। উল্লেখ্য, ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপ কিছুদিন আগেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়-এর কাছ থেকে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে (প্লাস্টিক) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২১-এর প্রথম পুরস্কার পেয়েছে।

উত্তর : কাঠের গুঁড়া ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি মজবুত WPC (Wood Plastic Composite) ডোর ও শিট গ্রাহক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপ। পরিবেশবান্ধব এ পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়াও তিন স্তরবিশিষ্ট পানির ট্যাংক ‘স্রোত সেফ’ আমরা বাজারে নিয়ে এসেছি, যা পানির গুণগত মান রক্ষায় বাজারে প্রচলিত যে কোনো ট্যাংকের চেয়ে এগিয়ে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে পিভিসি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। এ খাতে ন্যাশনাল পলিমার এগিয়েছে কতটুকু?

উত্তর : ইউপিভিসি পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস, পিভিসি ডোর অ্যান্ড শিট, ওয়াটার ট্যাংক অ্যান্ড ট্যাপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্লাস্টিক হাউসহোল্ড ও ফার্নিচার পণ্য সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিদেশে রপ্তানি করছি আমরা। ভারত, ভুটান, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ফ্রান্স, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরগুলোতে রপ্তানির গন্তব্য আরও বড় হবে।

প্রশ্ন : প্রতিবেশী ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশি পিভিসি ও প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এ বাজারে আপনাদের অংশগ্রহণ নিয়ে জানান।

উত্তর : আগরতলা, আসাম, মেঘালয়, মণিপুরসহ সেভেন সিস্টার্স-এর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই ন্যাশনাল পলিমারের পণ্যের উল্লেখযোগ্য বাজার তৈরি হয়েছে। এর একমাত্র কারণ হলো ন্যাশনাল পলিমার পণ্যের গুণগত মান। এটা অত্যন্ত আনন্দের খবর যে, এ বাজারে ভারতের নিজস্ব পণ্যের চেয়ে আমাদের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

প্রশ্ন : পরিবর্তিত বিশ্বরাজনীতি ও আমদানি- রপ্তানির জটিলতার মধ্যে ব্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন।

উত্তর : ডলার সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির ফলে কাঁচামাল আমদনিতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা আমাদেরও  ভুগিয়েছে। তবে সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে আমাদের বেলায় তা খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেনি। সংকটের মধ্যেও আমাদের বিক্রয়কর্মীরা তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন এবং কারখানাও পুরোদমে চালু আছে। সব মিলিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগান আমরা কার্যকরভাবে পূরণ করতে পারছি।

প্রশ্ন : ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপকে এগিয়ে নিতে কাদের ভূমিকা এগিয়ে রাখবেন?

উত্তর : এনপলি গ্রুপের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য বাজারজাতকরণে আমাদের পরিবেশকগণ এবং সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট ও প্ল্যাম্বারদের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা এনপলির পণ্যকে দেশ ও দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পেরেছি। এ যাত্রায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সেই সঙ্গে আমাদের কারখানা ও বিক্রয়কর্মীদের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কর্মক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ এবং অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।

সর্বশেষ খবর