সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

মেগা প্রকল্পগুলোতে রং সরবরাহ করেছে রেইনবো পেইন্টস

মো. কামরুল হাসান, নির্বাহী পরিচালক, রেইনবো পেইন্টস

মেগা প্রকল্পগুলোতে রং সরবরাহ করেছে রেইনবো পেইন্টস

প্রশ্ন : কীভাবে মেগা প্রকল্পগুলো পেইন্ট শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে?

উত্তর : বাংলাদেশে পেইন্ট শিল্পের বিকাশে দেশের নির্মাণ ও আবাসন খাতে ক্রমবর্ধমান উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার জন্য রং ও বাহ্যিক কোটিংয়ে চাহিদার ঊর্ধ্বগতি এ শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে। সেতু, মহাসড়ক, বন্দর এবং শিল্প অঞ্চলের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন এই পেইন্ট শিল্পকে আরও বড় করেছে। বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। এ কারণে বাড়ির উন্নতি এবং সাজসজ্জার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সবার। ফলস্বরূপ আলংকারিক রঙের চাহিদা বেড়েছে।

প্রশ্ন : কয়েক যুগ ধরে পেইন্টের বাজার কীভাবে বেড়েছে?

উত্তর : এখন দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টন পেইন্ট ব্যবহার হচ্ছে। দ্রুত নগরায়ণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। তবে কভিড-১৯ মহামারি এবং পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আবাসন ও নির্মাণ খাত উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত চার বছরে এ খাত যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পেইন্ট শিল্পে লাভের পরিমাণ গত চার বছরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। ভবিষ্যতে এ খাতের আরও বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে গড়ে একজন ব্যক্তি মাত্র ১.১ কেজি রং ব্যবহার করেন। যেখানে ভারতে ৪.২ কেজি এবং চীনে প্রায় ৯ কেজি। বাংলাদেশে পেইন্টের ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন : বিদেশি কোম্পানির আধিপত্যের সঙ্গে এ বাজারে  স্থানীয় কোম্পানির চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলুন।

উত্তর : বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) মতে, স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিসহ ৪০টি নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। এমএনসিগুলো বাড়ার কারণে অনেক স্থানীয় কোম্পানি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, উদ্ভাবন, বিশেষীকরণ, গবেষণা বা পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবের কারণে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে। আশার কথা হলো, কিছু স্থানীয় কোম্পানি এমএনসির তুলনায় গুণমান ও মানদন্ডের সমান বা তার চেয়েও ভালো মানের পেইন্ট তৈরি করে।

প্রশ্ন : পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পে রেইনবো পেইন্টস কী ভূমিকা পালন করেছে?

উত্তর :  পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য রোড মার্কিং পেইন্টের সরবরাহকারী হিসেবে রেইনবো পেইন্টস গর্বিত। এ বছর আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অংশগ্রহণ করার বিশেষাধিকার পেয়েছি। এক্ষেত্রে সফলভাবে প্রয়োজনীয় রাস্তা চিহ্নিতকরণ রং সরবরাহ করেছি। আমরা শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশই নই, ইতিহাস তৈরিতেও সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছি।

প্রশ্ন : কেন নতুন লেপ প্রযুক্তির উত্থানে ৪০ বছর সময় লেগেছে?

উত্তর : গত চার দশক ধরে রং শিল্প উদ্ভাবনী লেপ প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। একবিংশ শতাব্দীতে এ শিল্প পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব কমানোর জন্য তার কার্যক্রমকে অনেকটা পরিবর্তন করেছে। পাশাপাশি উচ্চ-কঠিন আবরণ, জলবাহিত ফর্মুলেশন, ১০০ শতাংশ ননভোলাটাইল আবরণ, বিকিরণ-নিরাময়যোগ্য আবরণ এবং পাউডার আবরণ প্রযুক্তির প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্বায়ী জৈব দ্রাবক (VOCs) ব্যবহার যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এ ধরনের অগ্রগতি এ শিল্পটিকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে।

প্রশ্ন : আপনাদের পণ্যগুলোর বিশেষত্ব কী?

উত্তর : প্রথম থেকেই আমাদের অগ্রাধিকার ছিল পণ্যের আপসহীন গুণমান। বিশেষ করে যখন স্থানীয় বাজারে বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রভাবশালী। আমাদের কৌশলের ভিত্তি হলো মানের প্রতি প্রতিশ্রুতি।

প্রশ্ন : দেশের পেইন্ট শিল্পের উন্নতিতে আপনাদের কোম্পানি কী ভূমিকা পালন করেছে?

উত্তর : বাংলাদেশের পেইন্ট শিল্পের ৭০ বছরের ইতিহাস আছে। শুরুতে স্থানীয় কোম্পানিগুলো শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে ছিল, কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে পরিস্থিতি বদলে যায়। বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। আমরা যখন যাত্রা শুরু করি তখন প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাজারের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম এমন একটি পণ্য তৈরি ও বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করা। মাত্র সাত বছরের মধ্যে আমরা এই শিল্পে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে উঠতে পেরেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য স্থানীয় বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা।

প্রশ্ন : এ শিল্পের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন-

উত্তর : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে দেশের শহুরে জনসংখ্যা ২.৮ কোটি থেকে প্রায় ৪.২ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে পেইন্ট শিল্প বছরে প্রায় ১০-১২% করে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। কভিড-১৯ মহামারি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে ঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা চ্যালেঞ্জিং।

প্রশ্ন : কী কী পণ্য নিয়ে আপনারা কাজ করছেন?

উত্তর : বর্তমানে রেইনবো পেইন্টস ৯০টিরও বেশি আলাদা পণ্য নিয়ে কাজ করছে। যার মধ্যে আলংকারিক এবং পেইন্ট থেকে শুরু করে মোটরগাড়ি, কাঠের আবরণ এবং সামুদ্রিক যানের জন্য রং রয়েছে। আমাদের এসব পণ্যের মধ্যে আমরা কিছু পণ্য তৈরি করি যা সম্পূর্ণভাবে আমদানি করা হয়। যেমন ¯েপ্র পেইন্ট, পেইন্ট ব্রাশ এবং রোলার।

প্রশ্ন : সরকার কীভাবে স্থানীয় পেইন্ট কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে?

উত্তর :  স্থানীয় কোম্পানিগুলো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের মেরুদন্ড। শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি তৈরির জন্য স্থানীয় ব্যবসাকে লালন করা জরুরি। দেশের পেইন্ট শিল্পে, স্থানীয় এবং এমএনসি একই সম্পূরক শুল্কের অধীন। আমাদের প্রত্যাশা সরকার স্থানীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেবে এবং সহায়তা করবে।

সর্বশেষ খবর