সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে ঘরে ঘরে নতুন টিভি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বকাপে ঘরে ঘরে নতুন টিভি

► বিভিন্ন জরিপ বলছে, চলতি বছর দেশে টিভির বাজার প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে এ বাজার বেড়ে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

► টেলিভিশন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাদা-কালো, রঙিন ও এলইডি টিভির যুগ পেরিয়ে এ বিনোদন বাক্সটি এখন স্মার্ট টিভির যুগে ঢুকে গেছে। এলইডির পাশাপাশি এখন ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ও গুগল টিভি।

► টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশি-বিদেশি এ ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন প্যাকেজে বাজারে ছেড়েছে নতুন প্রযুক্তির নতুন টিভি।

 

একসময় টেলিভিশন মানেই ছিল চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাটক, সিনেমা, গান ও খবর দেখা। এখন সময় বদলে গেছে। চ্যানেলের বাইরে অ্যান্ড্রয়েড বা গুগল টিভির ইউটিউবে গিয়ে ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্সের সৌজন্যে হলিউড, বলিউডে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র মুহূর্তেই দেখার সুযোগ মিলছে। বিশ্বের বিভিন্ন শহরের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপসহ বড় বড় ইভেন্টের খেলা সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে টিভি স্ক্রিনের বড়পর্দায়। এবারও সুদূর যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রিয় খেলোয়াড়দের চার-ছক্কা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশের দর্শক। খেলাপ্রিয় এ দর্শকদের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছে দেশি-বিদেশি টেলিভিশন ব্র্যান্ডগুলো।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম স্টেডিয়াম মার্কেটে কথা হয় আবদুল হালিমের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। যাত্রাবাড়ীতে বসবাসরত ওই ক্রেতা জানান, তার দুই ছেলে ক্রিকেটপাগল। খেলা দেখতে নতুন স্মার্ট টিভি কেনার বায়না ধরেছে। তাই স্টেডিয়াম মার্কেটে এসেছেন দেখেশুনে সাশ্রয়ী মূল্যে একটি ভালো টিভি কিনে নিতে। হালিমের মতো আরও কয়েকজন ক্রেতাকে দেখা গেল নতুন টিভির দরদাম করতে।

টিভি কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে টিভি কেবল বিনোদনের উৎস হিসেবেই নয়, বরং শিক্ষা গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে। যদিও মোবাইল সহজলভ্য হওয়ায় অনেকে মনে করেন টিভির ব্যবহার কমে গেছে; কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো মেগা ইভেন্টে টেলিভিশনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের দর্শক বিশ্বকাপ বা বড় কোনো ইভেন্ট একসঙ্গে পারিবারিকভাবে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে দেখতে পছন্দ করে। পরিবারের সদস্যরা মিলে হইহুল্লোড় করে একসঙ্গে বড়পর্দায় বিশ্বকাপ খেলা উপভোগ করার জন্য টেলিভিশনের কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি এখনো। সে কারণে বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্টে টিভির চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টেলিভিশন সেট বিক্রি হয়। বিভিন্ন জরিপ বলছে, চলতি বছর দেশে টিভির বাজার প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে টিভির বাজার বেড়ে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। টেলিভিশন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় সাদা-কালো টেলিভিশন ছিল। তারপর রঙিন এলো। এরপর এলইডি। সেই সাদা-কালো, রঙিন ও এলইডি টিভির যুগ পেরিয়ে এ বিনোদন বাক্সটি এখন স্মার্ট টিভির যুগে ঢুকে গেছে। এলইডির পাশাপাশি এখন ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ও গুগল টিভি। নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের বাজার দখল করা দেশি-বিদেশি টিভি ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে-সনি, এলজি, কনকা, র‌্যাংগ্স, ওয়ালটন, যমুনা, মিনিস্টার, ভিশন, স্যামসাং প্রভৃতি। গুণগতমান ও মূল্যের ওপর নির্ভর করে দেশি-বিদেশি দুই ধরনের টিভির চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশি-বিদেশি এ ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন প্যাকেজে বাজারে ছেড়েছে নতুন প্রযুক্তির নতুন টিভি।

 

টিভিতে নতুন প্রযুক্তি

র‌্যাংগ্স ইলেকট্রনিক্স বিশ্বখ্যাত সনি ব্রাভিয়ার নতুন প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে এসেছে। পর্দায় প্রক্সিমিটি অ্যালার্ট প্রদান করে টিভি তার ব্যবহারকারীকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে টিভির এন্টারটেইনমেন্ট উপভোগ নিশ্চিত করে। নতুন সিরিজ সনি ব্রাভিয়া ক্যামোতে রয়েছে অটো পাওয়ার সেভিং মোড, যাতে স্ক্রিন ব্রাইটনেস কমিয়ে পাওয়ার খরচ অপ্টিমাইজ করে। ছবি ও সাউন্ড অটো অ্যাডজাস্ট ফিচার এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অবস্থান জানতে পারে এবং ব্যবহারকারী যে কোনো জায়গা থেকে সেরা ছবি ও সাউন্ড কোয়ালিটি উপভোগ করতে পারবেন। এমনকি এটি স্ক্রিন সেভার চালু বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিভি বন্ধ করতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে র‌্যাংগ্স গুগল টিভি এবং ইয়াসুকা টিভি। স্মার্ট টেলিভিশনের এ যুগে রিমোট টেপার ঝামেলা এড়াতে এক ধাপ এগিয়ে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে এলজি টিভি। কেবল এলজি টেলিভিশনেই আছে লেটেস্ট টেকনোলজির এলজি ম্যাজিক রিমোট, যা কাজ করে হাতের মোশনে। এর ফলে এ টিভির সব স্মার্ট ফিচার আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে দর্শকের কাছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে কনকা টিভিতে যুক্ত করা হয়েছে জিরো এক্স র‌্যাডিয়েশন। যেহেতু ক্রিকেট দীর্ঘ সময়ের খেলা, ফলে টিভির মনিটরে দীর্ঘক্ষণ চোখ রাখলে অনেক সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে। তাই কনকা টিভিতে ‘জিরো এক্স র‌্যাডিয়েশন টেকনোলজি’ যুক্ত করায় দীর্ঘ সময় টিভি দেখলেও চোখের কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া এ ব্র্যান্ডের টিভিতে আছে ট্রু কালার প্রযুক্তি। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড এলিভেন উইথ ভয়েস কন্ট্রোল এবং কার্নেল ভার্সন একসঙ্গে বাংলাদেশে প্রথম চালু করেছে কনকা। ফলে কনকা টিভিতে একসঙ্গে ৮ হাজারের বেশি অ্যাপস স্টোরেজ করা সম্ভব।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাথায় রেখে দেশি ব্র্যান্ড মিনিস্টার টিভিতেও যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এ টিভিতে রয়েছে ৪ক ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল ডিসপ্লে, যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত। তাই আলাদা কম্পিউটার ব্যবহার করার দরকার নেই। করপোরেট অফিস বা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের পরিবর্তে এ ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং এলইডি টিভি ব্যবহৃত হচ্ছে। নান্দনিকতা এবং গুণগত মান অক্ষুণœ রেখে মিনিস্টারের রয়েছে ফ্রেমলেস স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড টেলিভিশন। এ ছাড়া বাজারে খুব শিগগির আসছে মিনিস্টারের কিউএলইডি টেলিভিশন।

দর্শককে সঠিক বিনোদন উপভোগের সুযোগ করে দিতে ভিশন টিভি যুক্ত করেছে অত্যাধুনিক নানান প্রযুক্তি। বড় স্ক্রিনে টিভি দেখার জন্য মডেলভেদে ভিশন নিশ্চিত করে ‘এ প্লাস প্যানেল’, ‘এইচডিআর’, ‘এইচডিআর টেন’ ও ‘ডলবি ভিশন’। পাশাপাশি রয়েছে ‘গুগল সার্টিফায়েড’ এবং ফার ফিল্ড ভয়েস কন্ট্রোল সিস্টেম-সংবলিত টিভি। আসন্ন বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ক্রিকেটপ্রেমীদের খেলা দেখার আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ভিশনের তিনটি টিভি থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দেরটি।

টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যমুনা গ্রুপ এরই মধ্যে বাজারে নিজেদের পরিচয় তৈরি করে নিয়েছে। এ টিভির আকর্ষণীয় ন্যারো বেজেল ডিজাইন, আল্ট্রা-হাই-ডেফিনেশন ডিসপ্লে, ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড টিভি দেখার মুহূর্তগুলো আরও রাঙিয়ে তুলবে। যমুনা এলইডি টিভির হাই কোয়ালিটি রেজ্যুলেশন, কন্ট্রাস্ট রেশিও এবং সুপার ব্রাইটনেস স্ক্রিন টিভি দেখার মুহূর্ত করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।

আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের উত্তেজনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে স্যামসাং নিয়ে এসেছে নতুন টেলিভিশন সিরিজ। সম্প্রতি উন্মোচিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘সি-সিরিজ’-এর টেলিভিশনগুলো ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সি-সিরিজটিকে নিও কিউএলইডি, কিউএলইডি ও ইউএইচডি এ তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি নতুন এই সি-সিরিজে থাকছে স্মার্ট কানেকটিভিটির মাধ্যমে প্রাইভেসি প্রটেকশন। ৪ক ভিডিও, দুর্দান্ত সাউন্ড ডেলিভারি, বাউন্ডলেস স্ক্রিন ও চমৎকার স্লিম ডিজাইনের এ টেলিভিশনগুলো নিশ্চিত করবে ছবি দেখার এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।

সর্বশেষ খবর