বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্যাশলেসে বদলে যাচ্ছে লেনদেন

► ডিজিটালাইজেশন যাত্রায় ক্যাশলেস লেনদেন ► সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় বেড়েছে ব্যবহার ► ২০২৭ সালের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ৭৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাশলেসে বদলে যাচ্ছে লেনদেন

আগামী সাড়ে তিন বছরের মধ্যে নগদ টাকার ব্যবহার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। অর্থাৎ ২০২৭ সালের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ৭৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। যদিও এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা রকম উদ্যোগ রয়েছে। তফসিলি ব্যাংক ছাড়াও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিগুলো জনপ্রিয় করেছে অ্যাপভিত্তিক ক্যাশলেস লেনদেন এবং কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন। ক্যাশলেস লেনদেন আগের চেয়ে অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে। নগদ অর্থ বহন ও পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেক পরিশোধ সময়সাপেক্ষ ও জটিল। ক্যাশলেস পদ্ধতিতে লেনদেনের জন্য সে ঝামেলা নেই। নেই ভাংতি ও খুচরা টাকার ঝামেলাও। থাকছে না ছেঁড়া-ফাটা-জাল নোটের আশঙ্কা। নগদ টাকা লেনদেনের বেশ কিছু বিকল্প আছে, সেটা আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মহামারি কভিড-১৯-এর সময়। তখন ঘরে বসে প্রয়োজনীয় লেনদেন করার বিকল্প উপায়গুলো আমাদের ব্যবহার করতে হয়েছে। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা, ঋণ ও ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো। এতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল আর্থিক সেবা ও ই-কমার্সে কেনাকাটায় ব্যবহার হয়েছে। ক্যাশলেস লেনদেনের প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতেও। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও এমএফএস লেনদেনগুলো উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অর্থ আদানপ্রদান, বিল পরিশোধ ছাড়াও এখন স্কুল টিউশন ফি পরিশোধ করা হচ্ছে ব্যাংক ও এমএফএস অ্যাপের মাধ্যমে। ই-কমার্স লেনদেনে অ্যাপের পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ লেনদেন করছে ক্যাশলেস মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটিএম, পিওএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও বাংলা কিউআর ব্যবহার করে মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯০৬ কোটি টাকা লেনদনে করে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশের ব্যাংক খাতের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে (আরটিজিএস ছাড়া) মোট ২৭ লাখ ৫১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে মোট লেনদেন ছিল ২৩ লাখ ৯০ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় এ সময়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার লেনদেন বেশি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লেনদেনে প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। চেক ক্লিয়ারিং, ইএফটি, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের হিসাব আমলে নেওয়া হয়েছে। ই-কমার্স ব্যবসা এবং বিদেশি ভ্রমণ বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কার্ডের লেনদেন বেড়েছে, মহামারির মধ্যে এটি আরও গতি পেয়েছে। ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যার পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘খরচ, সময় ও ঝুঁকি বিবেচনায় এখন অনলাইনভিত্তিক লেনদেনই সবচেয়ে নিরাপদ। যে কারণে কার্ড, অ্যাপসহ অনলাইন লেনদেন বাড়াতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক থেকেও বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে সহজে লেনদেন সকল পর্যায়ে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের দিক থেকেও এখন ভালো সাড়া মিলছে। যে কারণে দ্রুত এ ধরনের লেনদেন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ক্যাশলেস লেনদেন স্মার্ট বাংলাদেশের পথ প্রশস্ত করছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের সব ফিন্যানশিয়াল ট্রানজেকশন ক্যাশলেস হয়ে যাবে, নগদ অর্থে লেনদেন হবে না। এর মাধ্যমে নগদ অর্থের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। উন্নতির ধারাবাহিকতায় এমন পরিবেশের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটালাইজেশনের জন্য নেওয়া অসংখ্য পদক্ষেপ বিভিন্ন পর্যায়ের সাফল্যের মুখ দেখেছে। ব্যাংকের শাখা, সেলস টিম ও কল সেন্টারে মানবসম্পদ যুক্ত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের নিবন্ধন, বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার (এটিএম, সিডিএম ও কল সেন্টার), ই-স্টেটমেন্ট সাবস্ক্রিপশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় আসা কমাতে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন ও তহবিল স্থানান্তরের সীমা বাড়ানোর জন্য অনেক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করা গ্রাহক ও ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বহুগুণ বেড়েছে। এ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিময় (আইডিটিপি), বাংলা কিউআর ও মাইক্রো-মার্চেন্টের মতো উদ্যোগগুলোও এগোচ্ছে। ক্রমাগত ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে উদ্যোগগুলো আরও এগিয়ে যাবে এবং দেশের ডিজিটালাইজেশন যাত্রাকে আরও অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর