ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল অ্যাপস এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) -এর মাধ্যমে লেনদেন এখন আগের চেয়ে সহজ ও নিরাপদ...
প্রশ্ন : সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস করতে চায়, আপনাদের প্রস্তুতি কেমন? সার্বিকভাবে ক্যাশলেস লেনদেন কতটা এগিয়েছে?
-ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল অ্যাপস এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে লেনদেন এখন আগের চেয়ে সহজ ও নিরাপদ। ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস হলে বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। ক্যাশলেস লেনদেনে নগদ অর্থ বহনের ঝামেলা নেই, ছেঁড়া-ফাটা-জাল নোটের আশঙ্কা নেই। এটা স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথ প্রশস্ত করবে। সরকারের সঙ্গে একাত্মতা রেখে ইসলামী ব্যাংকও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমাদের সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহক ক্যাশলেস লেনদেন যেমন রেমিট্যান্স গ্রহণ, ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার, ই-কমার্স পেমেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস) অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারছে। প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে ক্যাশলেস লেনদেন করছে। তবে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন এখনো পুরোপুরি ক্যাশলেস হয়নি। কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ এবং বিল পরিশোধ ক্যাশলেস হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নগদ টাকা উত্তোলন ও জমা দিতে হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এমএফএসের মাধ্যমে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ক্যাশলেস লেনদেন ছিল মাত্র সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও ক্যাশলেস লেনদেন ছিল মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবু বলতে হয়, ক্যাশলেস লেনদেন অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু করা বাংলা কিউআর কোড পদ্ধতি নগদ টাকা ছাড়াই লেনদেনের সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্স, মোবাইল রিচার্জ, টিকিট কেনা, শপিং মলে কেনাকাটা, হাসপাতালের বিল পরিশোধ-সবই এখন অনেকটা ক্যাশলেস হয়ে গেছে। সরকারি বেতন-ভাতা ও প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে হচ্ছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালে মতিঝিলে ক্যাশলেস লেনদেন চালু করেছে, সেখানে আপনাদের কার্যক্রম কেমন চলছে?
-বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের যাত্রা শুরু করে। ১০টি তফসিলি ব্যাংক, তিনটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা এবং তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমকে এ কাজে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়। প্রথমে উদ্যোগ নেওয়া হয় মতিঝিল এলাকার চা-দোকান, মুদি দোকান, হোটেল, মুচিসহ ভাসমান বিক্রেতাদের কিউআর কোড সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকও মতিঝিল এলাকায় চা-দোকান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৪০০ কিউআর কোড সুবিধা দিয়েছে। গ্রাহকরা সেলফিন অ্যাপ ব্যবহার করে কিউআর কোডে লেনদেন সম্পন্ন করছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে কিউআর কোডের আওতায় আনছে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবে।
প্রশ্ন : করোনা মহামারির মধ্যে নগদ টাকায় লেনদেন অনেকটা কমে গিয়েছিল, এখন কী অবস্থা?
-করোনা মহামারিতে নগদ টাকার ব্যবহার যেমন অনেকটা কমেছিল, বর্তমানেও গ্রাহক নগদ লেনদেনের চেয়ে ক্যাশলেস লেনদেনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এর পেছনে ক্যাশলেস লেনদেনে ব্যাংকের উৎসাহ ও প্রণোদনা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল লেনদেনে ক্যাশব্যাক অফার, বিশেষ ডিসকাউন্ট, বাই-ওয়ান গেট-ওয়ান অফার ইত্যাদি কারণে ক্যাশলেস লেনদেনে গ্রাহকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নগদ টাকা বহনের আগ্রহ কমে আসছে।
প্রশ্ন : অনেক দোকানি পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিনে লেনদেনে চার্জ আরোপ করে। এটা কতটা যৌক্তিক?
-পিওএস মেশিনে লেনদেনে চার্জ আরোপের প্রচলন আছে, কারণ ব্যাংকগুলো এ সেবার জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু পিওএস মেশিন ব্যবহার করে কেনাকাটা বা তহবিল স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোনো সার্ভিস চার্জ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। গ্রাহকরা এ ধরনের অন্যায় চার্জ আরোপের বিরুদ্ধে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি এ চার্জ আরোপের নীতিমালা পরিবর্তন করে থাকে, তবে তা জনসাধারণের জন্য স্পষ্ট করে প্রচার করা উচিত। গ্রাহকদেরও উচিত এ ব্যাপারে সচেতন থাকা।
প্রশ্ন : ক্যাশলেস লেনদেন শতভাগ বাস্তবায়নে আপনার পরামর্শ কী?
-ক্যাশলেস লেনদেন শতভাগ বাস্তবায়নে এর জন্য প্রযুক্তিগত উন্নতি, গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ লেনদেনের পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। এজন্য সরকার ও ব্যাংকিং খাতের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্পূর্ণ ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলতে পারলে তা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখবে।