বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ক্যাশলেস বাংলাদেশ বিনির্মাণে চালিকাশক্তি হবে মোবাইল আর্থিক সেবা

মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.), চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার, বিকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাশলেস বাংলাদেশ বিনির্মাণে চালিকাশক্তি হবে মোবাইল আর্থিক সেবা

মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-এর চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.) মনে করেন, আগামী দিনে ক্যাশলেস বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল চালিকাশক্তি হবে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)। আর সেখানে ‘বিকাশ’ থাকবে নির্ভরতা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এক যুগ আগেও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী গতানুগতিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। দেশের বৃহত্তম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ এ জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়ে তাদের দৈনন্দিন লেনদেনে দিয়েছে সচলতা, সক্ষমতা ও স্বাধীনতা। আর তারই মাধ্যমে বিকাশ পরিণত হয়েছে দেশের প্রতিটি পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে। বর্তমানে বিকাশ-এর রেজিস্টার্ড গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৭ কোটির বেশি, যার প্রতিটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাচাইকৃত।  গ্রাহকদের এ ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিজিটাল লেনদেনের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে ‘বিকাশ’।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল পেমেন্টের অগ্রগতিতে মূল চালিকাশক্তি বিকাশ-এর মতো প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, দেশজুড়ে বিস্তৃত এজেন্ট ও মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক এবং সাধারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন, মোবাইল রিচার্জ, মার্চেন্ট পেমেন্টের মতো মৌলিক সেবাগুলো গ্রাহককে ডিজিটাল পেমেন্টের সঙ্গে পরিচয়, অভ্যস্ততা ও নির্ভরতা তৈরি করতে সহায়তা করেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের ধারাবাহিকতা, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্স মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি বিকাশ দেশের ডিজিটাল আর্থিক ইকোসিস্টেম সুদৃঢ় করতেও ভূমিকা রাখে এবং গ্রাহকের আর্থিক লেনদেনে অভ্যাসগত পরিবর্তন আনে।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম মূল ভিত্তি হবে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিকাশ গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রাহকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানোর ওপর।

বিকাশ-এর এই কর্মকর্তা বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট কানেকটিভিটির প্রসারের ফলে শহরের বাইরের জনপদও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। এতে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার আরও বাড়বে। দেশে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এ খাতে পণ্য ও সেবা ডেলিভারির সময় কমে এলে ডিজিটাল কেনাকাটায় নাগরিকদের আগ্রহ ও অভ্যস্ততা আরও বাড়বে, যা ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, মানুষ ইতোমধ্যে ক্যাশবিহীন লেনদেনে কিছুটা হলেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশবিহীন করার লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বিকাশ নিজেও তার নিয়মিত বাজার-সমীক্ষার অংশ হিসেবে ডিজিটাল-লিটারেসি সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে আজকের তরুণ প্রজন্ম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়ালিটি, রোবোটিকস, বিগ ডেটা-এসব ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তারা সবার থেকে এগিয়ে। ফলে তাদের দৈনন্দিন লেনদেনে নগদ টাকার চেয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিই হবে যুগোপযোগী ও বাস্তবিক অভ্যাস। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মোবাইল আর্থিক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে এই এমএফএস অ্যাকাউন্ট নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল পেমেন্টের ইকোসিস্টেমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং এটি তাদের আর্থিক লেনদেনের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। কর্মজীবনে তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ও ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। এটি দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সর্বশেষ খবর