বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সহজ করেছে নগদ

তানভীর এ মিশুক, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নগদ লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সহজ করেছে নগদ

দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক নগদ। বিশ্বের কোথাও নগদ-এর মডেলে ডিজিটাল ব্যাংক হয়নি। নগদ ডিজিটাল ব্যাংক হাইব্রিড মানের। প্রথাগত ব্যাংক ও এমএফএস মিলে একটা ব্যাংক হচ্ছে। বিদেশে ডিজিটাল ব্যাংকের কথা চিন্তা করলে দেখবেন তারা একটা পণ্যকে হাইলাইট করে।

 

দেশে প্রথম ই-কেওয়াইসি চালু করেছে ‘নগদ’। ই-কেওয়াইসি চালু হওয়ার আগে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাত থেকে ১০ কর্মদিবস লাগত। নগদ এখন ৮ কোটি গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান। এটা হচ্ছে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটা সহজ করে দেওয়ার ফল। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত হওয়া সহজ করেছে নগদ। যেটা এখনো চলমান আছে। আমাদের এ উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, সব মোবাইল অপারেটর সহযোগিতা করেছে বলেই আজকে নগদ এ অবস্থানে আসতে পেরেছে।

তিনি আরও বলেন, ক্যাশলেস নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক কথা বলছি। ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। ক্যাশলেস বললেই মানুষ মনে করে আমি দোকানে গিয়ে কফির বিল পেমেন্ট করব। আমাদের উপমহাদেশে কোথাও পেমেন্ট জনপ্রিয় হয়নি। ২০১৯ সালে যাত্রার পরের বছর থেকে আজ পর্যন্ত সরকারি উপকারভোগীদের মাঝে অর্থ বিতরণের ৯৫ শতাংশই নগদ করেছে। এ খাতে বরাদ্দের ২০ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই ক্যাশ বিতরণ করা হতো স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে। এ ২০ হাজার কোটি টাকাই নগদ ক্যাশলেস করে দিয়েছে। ক্যাশলেস করতে হলে সরকারের এ সাপোর্টগুলো খুবই জরুরি। পাসপোর্টের ফি পেমেন্ট, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট যদি বাধ্যতামূলক করা হয়, তা হলেই ক্যাশলেস হবে। কিউআর কোড দিয়ে পেমেন্ট করে ক্যাশলেস করব বলে যতই প্রমোট করি, জীবনেও হবে না। এতে চটকদার কিছু হবে। যেমন সবজি কিনতে গেলাম, কিউআর কোড দিয়ে পেমেন্ট করেছি। বাস্তবে এটাতে কোনো কাজ হয় না। আমাদের দেশেও হয় না, বিদেশেও হয়নি। ক্যাশলেস নগদ শুরু করে দিয়েছে। তানভীর এ মিশুক বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক আসলে আরও যেসব জায়গায় ক্যাশলেস দরকার যত দ্রুত সম্ভব নগদ ডিজিটাল ব্যাংক বাস্তবায়ন শুরু করবে।

তিনি বলেন, নগদ এখন ৮ কোটির বেশি গ্রাহকের পরিবার। যার কাছাকাছিও কেউ নেই। সেকেন্ড যে প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের গ্রাহক ৭ কোটির নিচে। নগদ-এর প্রাইসটা যেহেতু সাশ্রয়ী। সো নগদকে সবাই পজিটিভলি নিয়েছে। যারা জীবনে কখনো ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করত না, তারা নগদ ব্যবহার করছে। কারণ নগদ ব্যাংকিং সেবার খরচ কমিয়ে দিয়েছে। আগে মানুষ ১ হাজার টাকা ক্যাশআউট করতে ২০ টাকা খরচ করতে ভয় পেত। নগদ এ খরচটা অর্ধেক করে দিয়েছে। ফলে মানুষ নগদে যুক্ত হয়েছে। নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ ও আমানত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করে দেবে। 

ব্যাংকিং জনপ্রিয় করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে ১২ বছর বয়স থেকে সবাইকে ব্যাংকিংয়ে যুক্ত করতে হবে। এ কারণেই এখনো বলা হয় ৫২ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে।

তানভীর এ মিশুক বলেন, ২৭-২৮ বছরে গিয়ে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পর যদি বাজে অভিজ্ঞতা হয়, তখন মনে হবে ক্যাশ লেনদেনই ভালো। কোনো ঝামেলা নেই। কারণ ব্যাংকে ১ হাজার টাকা রাখলে বার্ষিক চার্জ ২০০ টাকা কেটে নিল। তখন তো খারাপ লাগে। ক্যাশলেস করতে হলে আগে মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করতে হবে। তার পরে ক্যাশলেসের ব্যাপারটা আসবে।

নগদের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, চলতি বছরের জুন থেকেই ডিজিটাল ব্যাংকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করতে চাই। দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক নগদ। বিশ্বের কোথাও নগদ-এর মডেলে ডিজিটাল ব্যাংক হয়নি। নগদ ডিজিটাল ব্যাংক হাইব্রিড মানের। প্রথাগত ব্যাংক ও এমএফএস মিলে একটা ব্যাংক হচ্ছে। বিদেশে ডিজিটাল ব্যাংকের কথা চিন্তা করলে দেখবেন তারা একটা পণ্যকে হাইলাইট করে। আমাদের দেশে সব ধরনের প্রোডাক্ট থাকবে। জুন থেকে তিন মাস নগদ-এর কর্মীদের মধ্যে ডেমোটা পরীক্ষামূলকভাবে চালাব। যখন দেখব শতভাগ কাজ করছে, তখনই জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু চালু করব না, যাতে বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে মানুষ ফিরে যায়। গত পাঁচ বছরে নগদ যে আস্থা অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতে একটি ভালো প্রোডাক্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক। ব্যাংকের কর হচ্ছে ৪০ শতাংশ। আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে ক্যাশলেস করতে চাই। আমি মনে করি ডিজিটাল ব্যাংককে কম করে হলেও পাঁচ বছর করছাড় দেওয়া উচিত। আমরা যদি প্রতিশ্রুতি দিই কোনো লাভ নেব না, মুনাফার টাকা পুনরায় বিনিয়োগ করব। তাহলে কিন্তু সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না।

সর্বশেষ খবর