বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ভবিষ্যতে বিদেশেও প্রোডাকশন প্লান্ট স্থাপন করবে ওয়ালটন

তাহসিনুল হক, চিফ বিজনেস অফিসার, ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর

ভবিষ্যতে বিদেশেও প্রোডাকশন প্লান্ট স্থাপন করবে ওয়ালটন

আগে ৯০% রেফ্রিজারেটর বাইরে থেকে আমদানি করা হতো। এখন এ ঘটনা পুরোপুরি উল্টে গেছে। ওয়ালটন বিশ্বের ৪০টি দেশে ফ্রিজ রপ্তানি করছে। এ গল্পটাই একটা দেশের ইকোনমি চেঞ্জ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

 

ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের চিফ বিজনেস অফিসার তাহসিনুল হক বলেছেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বমানের ফ্রিজ উৎপাদন করছে ওয়ালটন। অভ্যন্তরীণ বাজারের শতভাগ চাহিদা পূরণের সক্ষমতা রয়েছে ওয়ালটনের। বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে রপ্তানিও হচ্ছে ওয়ালটন ফ্রিজ। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-আমরা বিদেশেও প্রোডাক্টশন প্লান্ট স্থাপন করে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করব।

বিদেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন করা হবে। আমরা অন্য দেশেও টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করব। যেমনটি আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ইউনিক ফিচার তৈরি করেছি। তেমনটি অন্যান্য দেশেও মানুষের প্রয়োজন ও আবহাওয়া অনুসারে ফ্রিজ তৈরি করব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের কাস্টমারের কথা চিন্তা করে ওয়ালটন একটি ইউনিক ফিচার নিয়ে আসছে। সেটা হচ্ছে ৫০/৫০ ফিচার। এটা হলো ডিপ এবং নরমালের পর্শন। দুইটাই ভলিউমের ৫০%  প্লাস ৫০% থাকবে।  এ ক্ষেত্রে মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের মাছ-মাংসের প্রতি একটা ফুড হ্যাবিট রয়েছে। মানুষের কথা চিন্তা করে এই গরমে আমরা টি ক্লাস পণ্য তৈরি করছি। যেটার জন্য আমরা মাইনাস ২০ পর্যন্ত পণ্যকে প্রিজার্ব করতে পারি। এ ফিচারটি শুধু ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরেই পেয়ে থাকবেন।

তাহসিনুল হক বলেন, বাংলাদেশের  ফ্রিজ ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাংলাদেশে এখন ফ্রিজের সব যন্ত্রাংশ ওয়ালটন তৈরি করে। যন্ত্রাংশ তৈরি করে মানসম্মত ফ্রিজ তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফ্রিজ তৈরি করেছি। বর্তমানে ওয়ালটনে দেশি-বিদেশি ৮০০ মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি এক্সপার্টের মাধ্যমে আমরা এ পণ্যটি গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছি। ২০০৮ সালে প্রথমে আমরা রেফ্রিজারেটর অ্যাসেম্বলি লাইন দিয়ে শুরু করি। পরে আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং করি ওয়ান বাই ওয়ান। এরপর রেফ্রিজারেটরের হার্ট কম্প্রেসারের যন্ত্রাংশ তৈরি করেছি। আমাদের কম্প্রেসার সবচেয়ে কম নয়েজ করে। এ ছাড়া সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ করে। আমরা ফ্রিজ তৈরি করার সময় ইউরোপিয়ান টেকনোলজি ব্যবহার করছি। এজন্যই আমি বলি আমাদেরটা সেরা।

দেশি কোম্পানির রেফ্রিজারেটর তৈরির আগে ৯০% রেফ্রিজারেটর বাইরে থেকে আমদানি করা হতো। এখন এ ঘটনা পুরোপুরি উল্টে গেছে। এখন ওয়ালটন বিশ্বের ৪০টি দেশে ফ্রিজ রপ্তানি করছে। এ গল্পটাই একটা দেশের ইকোনমি চেঞ্জ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমরা গত অর্থবছরে ২ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করেছি। ২০২৬ সালে এটা ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে আশা করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেখা যায় পরিবারের স্বামী -স্ত্রী ঘরের বাইরে কাজ করছেন। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যেক দিন বাজার করা হয় না। তাই ফ্রিজ এখন বিলাসী পণ্য নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয়। আমরা বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখে এবং চাহিদা কেন্দ্র করে রেফ্রিজারেটর ফিচারগুলো সাজিয়েছি। আমাদের ৩০০ প্লাস পণ্যের ভ্যারিয়েশন রয়েছে।

এ ছাড়া আমাদের ৮০০ ইঞ্জিনিয়ার প্রতিনিয়ত ফ্রিজের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের আধুনিক ল্যাবের রিসার্চ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কীভাবে গ্রাহকদের জন্য টেকসই এবং কম দামে দেওয়া যায় সে নিয়ে গবেষণা চলছে। এটাকে আমরা সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ওয়ালটনের ফ্রিজ মানুষ কেনার আরেকটা মূল কারণ হচ্ছে এর সর্বাধুনিক ও সহজ ফিচার। আমাদের ফ্রিজ ৭৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। ইনভার্টার সিস্টেম, অত্যাধুনিক আইওটি সিস্টেম ও ফুড গ্রেড অনুসারে ফ্রিজ তৈরি হয়। আমরা ১০০% ফুড গ্রেড অনুসারে ফ্রিজ তৈরি করি। আমাদের ফ্রিজে মানুষ যেন গার্ডেন ফ্রেশ ফ্রুটস পায়। আমাদের বিক্রয়-পরবর্তী সেবার সারা বাংলাদেশে সুবিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। আশিটির বেশি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। সেখানে একটি দক্ষ জনগোষ্ঠী কাজ করছে। সেখানে দ্রুত সার্ভিস সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে।

তাহসিনুল হক বলেন, দেশের রেফ্রিজারেটরের ৭০% মার্কেট ওয়ালটনের দখলে রয়েছে। কাস্টমার চিন্তা করবে যেটা সবচেয়ে বেশি চলে সেই পণ্যের দোকানেই আগে যাওয়া উচিত। আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছি আরও কীভাবে মানসম্মত এবং রিলায়্যাবল পণ্য তৈরি করা যায়। গ্রাহক পণ্য কেনার জন্য সব সময় দামকে প্রাধান্য দেয়। গ্রাহকদের পছন্দের জন্য আমরা একটা বড় ধরনের রেঞ্জ রেখেছি। ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটা রেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া সাইজ কালারসহ প্রায় ৩০০ প্লাস পণ্য রয়েছে। আমাদের বাজারে একটা পণ্য ৭০-এর বেশি ধাপ পার হয়ে কোয়ালিটি সম্পন্ন করে আসে। গ্রাহক যা চায় তার জন্য সেরা পণ্যটি আমরা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় কাস্টমার নিঃসন্দেহে ওয়ালটন ব্র্যান্ডকেই বেছে নেবে।

তিনি আরও বলেন, একসময় রেফ্রিজারেটর পুরোপুরি আমদানিনির্ভর ছিল। সেখান থেকে এখন রপ্তানি শুরু হয়েছে। এর পেছনে পুরোপুরি নীতিসহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা, সহযোগিতামূলক নীতিমালার জন্য আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের সহযোগিতা চলমান রাখবে। সরকারি সহযোগিতা পেয়ে থাকলে সারা বিশ্বে ফ্রিজ রপ্তানি করতে পারব। রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারব। আমরা যে ধরনের ফ্রিজ তৈরি করছি তা ১৪০টি দেশের স্ট্যান্ডার্ডকে কভার করে। আমরা ইলেকট্রিক্যাল সেফটি নিশ্চিত করছি। আমাদের ফ্রিজের কুলিং কি স্ট্যান্ডারাইজ মেইনটেন করতে হয়। স্ট্রাকচারাল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করা হয়। আমরা রপ্তানিমূলক পণ্য দেশে তৈরি করছি। সেই একই স্ট্যান্ডার্ড পণ্য দেশের ক্রেতাদের জন্যও তৈরি করছি। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা বাদ নেই যেখানে আমাদের সার্ভিস সেন্টার নেই। আমরা ফোকাস হয়ে কাজ করি। আমরা কতটুকু কম সময়ে বিক্রেতার সার্ভিস প্রদান করতে পারি তা নিয়ে আমরা চেষ্টা করি। সব মিলিয়ে যে কোনো ব্র্যান্ড থেকে ওয়ালটনকে সবার আগে পছন্দ করা উচিত বলে মনে করছি।

সর্বশেষ খবর