logo
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২৫ ০০:০০
শিশুর ঘন ঘন সর্দি-ঠান্ডায় করণীয়
কোনো খাবার থেকে অ্যালার্জি হলে সেই খাবার না খাওয়ানো। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টে হাতমুখ ও পা ধুয়ে দেওয়া। ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই ঠান্ডা বা সর্দির সময় শিশুকে যথেষ্ট বিশ্রাম বা ঘুম পারিয়ে রাখলে ভালো

শিশুর ঘন ঘন সর্দি-ঠান্ডায় করণীয়

সারা বছর ঠান্ডা ও সর্দি হওয়া সবচেয়ে বেশি হওয়া রোগগুলোর একটি। ঠান্ডা লাগা বা সর্দির বেশকিছু সাধারণ উপসর্গ থাকে যেগুলো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের একইরকম। ঘন ঘন সর্দি ও ঠান্ডা লাগার কারণ কিন্তু  অ্যালার্জি। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেও এ সমস্যা হয়। এ ছাড়াও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, আবহাওয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকেও এ সমস্যা হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের। এক.  সিজনাল রাইনাইটিস ও দুই. পেরেনিয়াল রাইনাইটিস। সিজনাল রাইনাইটিসেই শিশুর আক্রান্ত হওয়ার কারণ ধুলো, ফুলের রেণু। পেরেনিয়াল রাইনাইটিস ঘরে জমে থাকা ধুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ফাংগাস, পতঙ্গ যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সৃষ্টি হয়। শ্বাসের মাধ্যমে অ্যালার্জেন্স শরীরে পৌঁছলে অ্যালার্জি হয়, এ অ্যালার্জি যখন ফুসফুসে প্রভাব ফেলে তখন দেখা দেয় অ্যাজমা। দেখা যায় শিশুরা সারা দিন ভালো থাকে, কিন্তু রাত হলে সর্দি, নাক বন্ধ হয়ে যায়। গলাব্যথা,মাংসপেশিতে ব্যথা, কাশি-হাঁচি-জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা, স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসে।

কেন হয় ঠান্ডা ও সর্দি : সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে ৪ থেকে ৬ বার এবং শিশুর বছরে ১০ থেকে ১২ বার সর্দিজ্বর হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু সর্দিজ্বর বা ঠান্ডা লাগার কারণ ভাইরাস সংক্রমণ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এ ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে  শিশুদের সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় এবং আক্রান্ত হয়। সর্দিজ্বর সংক্রমিত থাকা অবস্থায় নাসারন্ধ্রের ভিতরে মিউকাস লাইনিং অতিক্রম করে প্রবেশ করে সংক্রমণকারী জীবাণু। এর ফলে নাসারন্ধ্রের ভিতর অতিরিক্ত সর্দি জমা হয়, ডাক্তারি শাস্ত্র যেটিকে রাইনোরেয়াা বলে।

কীভাবে বুঝবেন : শিশুর সর্দি ও ঠান্ডার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে হলে এর কারণ অ্যালার্জি কি না বুঝতে কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ঠান্ডা সর্দি হলে দেখতে হবে এর সঙ্গে চোখ চুলকানো, অ্যাজমা, চোখ লাল হয় কি না, গায়ে চুলকানি, নাকে কোনো সমস্যা এবং পরিবারে কারও এ ধরনের অ্যালার্জি আছে কি না। পরিবারের কারও এ সমস্যা থাকলে বাচ্চার হতে পারে। মডিফায়েড স্কিন প্রিক টেস্ট করে দেখে নিতে হবে কি কারণে শিশুর এ সমস্যা হচ্ছে।

কারণ : অ্যালার্জেন্স শরীরের সংস্পর্শে এলে হিস্টামিস কেমিক্যাল নির্গত হয়। অতিমাত্রায় নিঃসৃত হলে তা থেকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হয়। ভাসমান ধূলিকণা, ঘরে জমে থাকা ধুলো, তেলাপোকা, বিভিন্ন ফুলের রেণু, পশুপাখির পশম, কটনডাস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের খাবার থেকে এবং  জিনঘটিত কারণে শিশুরা আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসা : দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে অ্যাজমা কিংবা অ্যালার্জিক ডার্সাটাইটিস হয়। যদি এক মাসের ওপরে সর্দি ও ঠান্ডা থেকে যায় তাহলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পারিবারিক ইতিহাস, শরীরে অন্য অসুখ হয়েছিল কি না ও কেমন পরিবেশে রোগী থাকে- সব কিছু জানাতে হবে। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসক নাকে ড্রপ ও অন্যান্য ওষুধ দেবেন। অ্যালার্জি ধরা পড়লে চিকিৎসক স্পেসিফিক ইমিউনোথেরাপি দেবেন। এতে তিন থেকে পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসা চলতে পারে।

প্রতিকার : বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুকে মাস্ক পরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা। যদি সম্ভব না হয় সঙ্গে ওয়েট টিস্যু নিয়ে বের হওয়া এবং কিছুক্ষণ পরপর শিশুর মুখ মুছে দিতে হবে। ঘরের কার্পেট, বিছানার তোশক পরিষ্কার রাখা। যদি ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জি হয়, তাহলে এসব স্থান পরিহার করা। কোনো খাবার থেকে অ্যালার্জি হলে সেই খাবার না খাওয়ানো। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টে হাতমুখ ও পা ধুয়ে দেওয়া। ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই ঠান্ডা বা সর্দির সময় শিশুকে বিশ্রাম দিলে বা ঘুম পারিয়ে রাখলে শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। প্রয়োজনে এ সময়ে প্রচুর তরল খাওয়ানো। প্রচুর পরিমাণ পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে পানিশূন্যতা রোধ করলে ঠান্ডা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।

-অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ,

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শান্তিনগর, ঢাকা