
দেশের সব নাগরিকের যাবতীয় তথ্য সমন্বয় করে ‘ইউনিক আইডি’ কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এই ইউনিক কার্ড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সম্পূর্ণ আলাদা কর্তৃপক্ষের অধীনে তৈরি করার পক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই কার্ড হলে একটি একক আইডিতেই ভোটার তথ্য, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্টসহ একজন নাগরিকের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ২২ ধরনের তথ্য সংরক্ষিত হবে। তখন এসব কাজের জন্য আলাদা করে নিবন্ধন বা বিভিন্ন দফতরে দৌড়ানোর প্রয়োজন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠন করা ৬ সদস্যের কমিটি। গত ৫ নভেম্বর কমিটির প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এনআইডির কাজটি করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। বিশেষজ্ঞদের মতামত, আইনকানুন পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দেশে কীভাবে কাজটি করা হয়, তা পর্যবেক্ষণ করে এই কমিটি গত ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে ইউনিক আইডি তৈরির কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এনআইডির কাজ কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্য কোনো দফতরের কাজ নয়। ইসির কাজ মূলত দেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ভোটার তালিকা করা। এটি করতে গিয়ে আইনানুযায়ী এনআইডির কাজটিও করছে তারা। কিন্তু নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য নিবন্ধনের কাজ আলাদা একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে হওয়া উচিত। বর্তমানে নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য নিবন্ধনের কাজ পৃথক মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন হওয়ায় নাগরিকদের অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটি কর্তৃপক্ষের অধীন একক আইডি নম্বরে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য নিবন্ধন করলে সবার জন্য ভালো হবে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীন আলাদা একটি কার্যালয়ের মাধ্যমে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’ কাজ চলছে। এটি আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
কমিটি তাদের প্রতিবেদনে পৃথক কর্তৃপক্ষের নাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ না করলেও বলেছে, এটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হতে পারে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আলাদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই এ কাজ হয় বলেও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এটি করা গেলে কাজ যেমন সহজ হতো, তেমনি আলাদা নিবন্ধনের জটিলতাও দূর হতো।