শিরোনাম
২১ মার্চ, ২০২২ ১৬:৩৬

মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র

সংগৃহীত ছবি

অবশেষে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, গণহত্যার জন্য এবং ১০ লাখের মত রোহিঙ্গা মুসলমানকে বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য করার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। ২১ মার্চ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ইউএস হোলোক্যস্ট মেমরিয়্যাল মিউজিয়াম’ এ অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন এই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে রবিবার অপরাহ্নে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলিম জনগোষ্ঠির ওপর এমন নৃশংসতার ৫ বছর পার হলেও মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে। 

উল্লেখ্য, গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হবার পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আরো অর্থনৈতিক অবরোধ, অর্থ-সহায়তা আরো সীমিত এবং আরো কিছু শাস্তি আরোপ করা হবে। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত এসেছে মিয়ানমারের রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরই যুক্তরাষ্ট্রের আঙ্গিকে সরেজমিনে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে। 

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোবেল বিজয়ী ড. অং সান সুচি’র নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। এই পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত করার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করার কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এমনকি, স্বেচ্ছায় বসতভিটায় ফেরার মত কোন পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব হয়নি। মার্কিন প্রশাসনসহ জাতিসংঘ কেবলমাত্র গলাবাজি, চাপাবাজি আর বিবৃতির খৈ ফুটাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। নিজের নানাবিধ সমস্যা আর সংকট সত্বেও বাংলাদেশ বিরাটসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার অনন্য এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞজনরা উল্লেখ করছেন। কিন্তু বসতভিটায় ফিরে যাবার মত সত্যিকারের কোনো উদ্যোগ কোনো পক্ষ থেকেই গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে জটিল এক সমস্যায় আবর্তিত হচ্ছে বলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন। 

স্টেট ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা রবিবার নিশ্চিত করেছেন যে, ‘মিয়ানমারের সামরিক জান্তা গণহত্যা সংঘটিত করেছে’-এমন ঘোষণা দেবেন  পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা-নৃশংসতার ঘটনাবলিকে কানাডা, ফ্র্যাঞ্চ এবং তুরস্ক ‘গণহত্যা’ হিসেবে আগেই অভিহিত করেছে। এছাড়া, ওআইসির পক্ষ থেকে গাম্বিয়া ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে দেশটি জাতিসংঘের গণহত্যা সংক্রান্ত কনভেনশন লংঘন করেছে বলে উল্লেখ করেছে। 

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিধনের জঘন্য প্রয়াস প্রসঙ্গে ‘ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’র সাবেক চেয়ারওম্যান অনিরুমা ভারগভা বলেছেন, ‘এটা ঘটে যাওয়া নৃশংসতার স্বীকৃতি এবং অবিশ্বাস্য হলেও তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এমনকি, গণহত্যার জন্য যারা দায়ী তারা এখনও ক্ষমতায় রয়েছে।’

এমন এক সময়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা গণহত্যায় লিপ্ত রয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসন স্বীকার করলো, যখোন প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত থাকার কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অনিরুমা ভারগভা উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা আগেই নেয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো নৃশংসতা, বর্বরতা অনেক কমতো এবং রাশিয়াও ইউক্রেনে এমন অমানবিক-নিষ্ঠুর আচরণে লিপ্ত হবার সাহস দেখাতো না। 

এদিকে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিশ্চিহ্ন করার সময়ে ক্ষমতাসীন নেতা অং সান সু চিসহ শতাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি বর্তমান সামরিক জান্তা কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছেন। সু চি'র বিরুদ্ধে যে ১৭টি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে তার শাস্তি হতে পারে ১৭৩ বছরের জেল। 

 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর