৬ মে, ২০২৩ ১৯:৩৬

ঘাতক রাশেদ চৌধুরীর ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের ঠেলাঠেলির শেষ কোথায়?

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ঘাতক রাশেদ চৌধুরীর ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের ঠেলাঠেলির শেষ কোথায়?

দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরী

বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে ট্রাম্পের একেবারেই শেষ সময়ে  কার্যকর একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও বাইডেন প্রশাসন শুধু রেফার করার নীতি অবলম্বন করছে। সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাথে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠকের সময় কোন প্রশ্ন না নেয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ সংবাদদাতা লিখিত আকারে দুটি প্রশ্ন সাবমিট করেছিলেন। 

দুদিন পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে একজন কর্মকর্তা ই-মেইলে বিচার বিভাগে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এরপর বিচার বিভাগের মুখপাত্র এ সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন যে, তারা এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিদেশি পলাতক ক্রিমিনালদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারের দায়িত্ব পালন করছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তথা ‘আইস’। এটা বিচার বিভাগের কাজ নয়। এরপর ২৭ এপ্রিল আইসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা উল্লেখ করেন যে, রাশেদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের কোন নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। অথবা তাকে বহিষ্কার করতে হবে-তেমন কোন তথ্যও জানা নেই। 

উল্লেখ্য, গত এক দশকে রাশেদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগে সোপর্দ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে বহুবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন যতবার মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ততবারই আদালতের দেয়া দণ্ডের কপি বিচার বিভাগ অথবা স্টেট ডিপার্টমেন্টে হস্তান্তর করা হয়। এমনকি, বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ঢাকা সফরের সময়েও একই অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি আমেরিকানরাও সুযোগ পেলেই প্রসঙ্গটির অবতারণা করেন প্রশাসন ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রেস রিলিজ পাওয়া যাচ্ছে বিদেশি ক্রিমিনালদের গ্রেফতার ও বহিষ্কার সম্পর্কে। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় নাকি রাশেদ চৌধুরী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আল-বদর আশরাফুজ্জামান খানকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারছে না। এ ব্যাপারটি নিয়েও গত বছরের অক্টোবরে ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি আর শারম্যানের সঙ্গে। এরপরের অগ্রগতি সম্পর্কে আর কিছু জানা যায়নি। 

জানা গেছে, দণ্ডিত ঘাতক রাশেদ চৌধুরী ক্যালিফোর্নিয়া এবং আশরাফুজ্জামান নিউইয়র্কে সপরিবারে বাস করছেন। তারা উভয়েই রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন এবং সেই ধারায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও হয়েছেন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, এসাইলামের আবেদনে যদি কোন তথ্য গোপন করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সিটিজেনশিপ কেড়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা যায়। তেমন বিষয়ে খতিয়ে দেখতে সাবেক এটর্নী জেনারেল বিল বার রাশেদ চৌধুরীর ফাইল তলব করেছিলেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে যাওয়ায় সেই পদক্ষেপটি চাপা পড়ে গেছে। বাইডেন প্রশাসনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সম্পর্ক রয়েছে-এমন কয়েকজন রাশেদ চৌধুরীকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেই ট্রাম্প আমলের নির্দেশটি আর আলোর মুখ দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশি আমেরিকানের ৯০% হচ্ছেন ডেমক্র্যাট। বাইডেন-কমলাকে তারা ভোট দিয়েছেন গত নির্বাচনে। 

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশেদ চৌধুরী এবং আলবদর আশরাফুজ্জামানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হোয়াইট হাউজে লবিং জোরদার করতে হবে। তবে রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্বাধীন লবিং ফার্ম দিয়ে ডেমক্র্যাট-আমলে কোন লাভ হবে না। যা ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমলের পদক্ষেপ চাপা পড়ায়। 

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের সঙ্গে আলাপ করলে ৪ মে এ সংবাদদাতাকে তিনি জানান, ডেমক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জিম মোর‌্যানের নেতৃত্বে একটি টিম বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করছে। আমাদের চেষ্টায় কোন ত্রুটি নেই। ৪ মে বৃহস্প্রতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার এক মতবিনিময় সভায় ঘাতক রাশেদ চৌধুরী এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে দণ্ডিত আল-বদর আশরাফুজ্জামানকে বাংলাদেশে সোপর্দ করা নিয়ে টালবাহানার জন্যে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করা হয়। একদিকে তারা মানবাধিকারের কথা বলে, আরেকদিকে দণ্ডিত ঘাতকদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। 

ফাউন্ডেশনের কম্যুনিকেশন্স ডাইরেক্টর এবং সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এ আলোচনায় অংশ নিয়ে জানান, স্ববিরোধী আচরণে লিপ্ত বাইডেন প্রশাসন। ইতিপূর্বে আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে স্মারকলিপি দিয়েছি। দণ্ডিত দুই ঘাতকের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি-যা খুবই দুঃখজনক। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর