শিরোনাম
১ নভেম্বর, ২০২৩ ২২:৫৮
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন প্রবাসীরা

বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী আরেফির নেপথ্য কাহিনী

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী  আরেফির নেপথ্য কাহিনী

মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফি

৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির পক্ষে বিবৃতি, বিজেপির নেতার সাথে তারেক রহমানের টেলি-সংলাপের ভুয়া নাটকের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফি (বেল্লাল) ২৮ অক্টোবর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার সরকার অপসারণে উদ্ভট মন্তব্য করেন। এরপরই তাকে গ্রেফতারের সংবাদটি এখন আমেরিকায় ‘টক অব টাউন’-এ পরিণত হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ম্যারিল্যান্ড স্টেটের দামাস্কাস সিটির নিকেলবী ড্রাইভের বাসাটিও এখন তালাবদ্ধ। ৫৮ বছর বয়েসী আরেফি থাকতেন এই বাসায়। ১০/১১ বছর আগে এক পুত্র এবং এক কন্যাসহ স্ত্রী তাকে ত্যাগ করেন। সেই থেকেই আরেফি একাকী থাকেন।

তার পরিচিতজনেরা জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়ে পাবনায় এক নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তবে এ সংবাদের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। ২-৩ বছর আগে ম্যারিল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের এক নারীর সাথেও প্রায় দেখা গেছে বলে সেখানকার প্রবাসীরা জানিয়েছেন। 

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, আরেফি বিভিন্ন পরিচয়ে ৪-৫টি ফেসবুক আইডি ওপেন করেছেন। সে সবে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। একটিতে বলা হয়েছে, তিনি ক্যাপিটল হিলে (কংগ্রেস ভবন) কাজ করেন। আদতে এটি মিথ্যা। ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় রয়েছে, সেটিও সত্য নয়। ম্যারিল্যান্ড স্টেট ডেমক্র্যাটিক পার্টির নির্বাহী কমিটির মেম্বার আনিস আহমেদ এ প্রসঙ্গে এ সংবাদদাতাকে বলেন, আরেফি কখনও কোনো ফোরামে ছিলেন না। আরেফি বাস করছেন মন্টগোমারি কাউন্টিতে, সেই কমিটির সাথেও আমি দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছি। কখনও তাকে দেখিনি।

আনিস আহমেদ উল্লেখ করেন, আরেফিকে সাম্প্রতিক সময়ে কম্যুনিটির কোনো অনুষ্ঠানাদিতেও দেখিনি। ম্যারিল্যান্ড স্টেট বিএনপির সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাজল ৩০ অক্টোবর এ সংবাদাতাকে জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত ম্যারিল্যান্ডে বাস করছি এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। কখনও আরেফি নামক লোকটিকে বিএনপির সাথে দেখিনি। তবে কী কারণে এবং কারা তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে এমন মিথ্যাচার করিয়েছে সেটি আমরা জানি না।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে মোহাম্মদ কাজলের মতো ওয়াশিংটন ডিসি বিএনপির সভাপতি হাফিজ খান সোহায়েলও  অস্বীকার করেন এবং জানান যে, আরেফি নামক কোনো ব্যক্তি বিএনপির কোনো ফোরামে কখনও ছিলেন না। তাকে আমরা সেভাবে চিনিও না। সোহায়েল অবশ্য উল্লেখ করেছেন, সে সরকারের এজেন্ট হতে পারে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থারও এজেন্ট হতে পারে। বিএনপির কেউ না। 

স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের অন্যতম আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী বক্তব্যকালে এই আরেফি প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, একটি দল কতটুকু দেউলিয়া হলে, কতটুকু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে এ ধরনের কাজ করতে পারে। বিএনপি এর আগেও এ ধরনের আজগুবি প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছিল কিন্তু তা বেশিক্ষণ টেকেনি। মিথ্যার বেসাতিই শুধু নয়, মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষরও জাল করেছিল বিএনপি। জাল স্বাক্ষরের সেই বিবৃতিতে বিএনপির পক্ষে যতসব অবান্তর কথা রটানো হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানের সাথে তারেক রহমানের টেলি সংলাপ হয়েছে এবং তারেকের নেতৃত্বে বিএনপিকে ভারত ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে ওই টেলি-সংলাপে শোনানো হয়।

বিজেপি প্রধান সাথে সাথে তা অস্বীকার করেছিলেন। নিজাম চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন, এক সময় তারেক রহমান প্রচার করেছিলেন যে তার সাথে নাকি স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তাগণের সাথে কথা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে সেটিও ছিল এবারের মতই ভুয়া। নিজাম চৌধুরী বলেন, আজ যে আমেরিকার সরকার স্যাঙ্কশন দিয়েছে সেটি শুরু হয়েছে ১০ বছর আগে তারেক রহমানকে একজন ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে। এবং তার ভিসা বাতিল করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, তারেক রহমান শুধু বাংলাদেশের জন্যেই নয়, সারাবিশ্বের জন্যেই ভয়ংকর ব্যক্তি। 

জানা গেছে, আরেফি ২০১৬ সাল থেকেই ম্যারিল্যান্ডের বিগ লট স্টোরে কাজ করছিলেন সহকারি ম্যানেজার হিসেবে। এর আগে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সোয়া বছর কাজ করেছেন একটি স্টোরের ম্যানেজার হিসেবে। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এক বছর ৯ মাস নিউজার্সি স্টেটের প্যারামুস সিটির একটি স্টোরের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন আরেফি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন  ভিয়েনায় ১৫ মাস আরেফি কাজ করেছেন মাইকেল আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটের স্টোর ম্যানেজার হিসেবে। 

অনুসন্ধানকালে আরও জানা গেছে, গত বছর আরেফি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ কন্স্যুলেট থেকে তার আমেরিকান পাসপোর্টে এনভিআর সংগ্রহ করেছেন। সে অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশে গেছেন। অবিভক্ত ঢাকার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইশরাক হোসেন এবং সাবেক জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর সাথে আরেফির সম্পর্ক নিয়ে এখনও কেউ মুখ খোলেননি। নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে এ দু’জনের বিশেষ একটি অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আরেফি-কে নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের নাটক করে।

সচেতন প্রবাসীরা মন্তব্য করেছেন, আগের মতো এবারও মিথ্যাচার আর জালিয়াতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। হাজারটা মিথ্যা দিয়েও যেমন একটি সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না, তেমনি মিথ্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার আরেকটি কৌশলও ব্যর্থ হলো। এটি মূলত বুমেরাং হয়েছে বিএনপির রাজনীতির জন্যে। প্রবাসীরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আরেফি এবং তাকে এই মিথ্যা পরিচয়ে পরিচিত করানোর জন্যে আটক সারওয়ার্দী ও ইশরাকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য। 

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর