শিরোনাম
৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:৪০

'সীমিত জনবল সত্ত্বেও দৈনিক আড়াই শতাধিক প্রবাসী সেবা পাচ্ছেন'

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

'সীমিত জনবল সত্ত্বেও দৈনিক আড়াই শতাধিক প্রবাসী সেবা পাচ্ছেন'

কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ইমেজ মহিমান্বিত রাখতে গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়ে নবনিযুক্ত কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বললেন, মিডিয়া আমার প্রতিপক্ষ নয়, স্টেক হোল্ডার তথা অংশিজন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ‘থ্রি পি’ থিউরি ফলো করি। প্রথম ‘পি’ হচ্ছে আমার পিপুল অর্থাৎ কম্যুনিটি। তাই কম্যুনিটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক রচনায় বিশ্বাসী আমি। দ্বিতীয় ‘পি’ হচ্ছে প্রটোকল। ডিপ্লম্যাটিক মিশনে কাজ করলে ডিগনিটরিজরা আসবেন। তাদেরকে অভ্যর্থনা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হয়। তৃতীয় ‘পি’ হচ্ছে প্রেস। মিডিয়ার সাথে সব সময় একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখতে হবে। 

কারণ, মিডিয়া আমার প্রতিপক্ষ নয়। মিডিয়া আমার অংশিজন। সেজন্যে মিডিয়ার সাথে আমার পার্টনারশিপ এবং কন্সট্রাক্টিভ রিলেশন থাকবে। এই তিন পি যদি আমরা ফলো করি তাহলে কন্স্যুলেটের কাজে আরো গতি আসবে। কাজ ভালো হবে এবং মানসম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যেই আমি আমার সহকর্মীগণের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলেছি। 

নাজমুল হুদা বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং কালচারাল কূটনীতিও প্রাধান্য পাবে আমার কার্যকালিন সময়ে। তবে সবকিছুই করবো ওয়াশিংটন ডিসিস্থ দূতাবাসের দিক-নির্দেশনা এবং সমন্বয়ে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় একটি প্রশস্ত, যুগোপযোগী ভবনে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস স্থানান্তরে গণমাধ্যমকর্মীগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নাজমুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সাথে সঙ্গতি রেখে নিউইয়র্ক কন্স্যুলেট অফিসেরও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কন্সাল জেনারেল বললেন, শিগগিরই তিনি ভালো একটি বাড়িতে কন্স্যুলেট অফিস স্থানান্তরের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সচেষ্ট থাকবেন। 

বিদেশীরা ভিসা নিতে এসে এমন জীর্ণ ভবনে কন্স্যুলেট দেখে হতাশ হন বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কন্স্যুলেটের এক কর্মকর্তা জানান। এ সংবাদদাতার কৌতুহলের পরিপ্রেক্ষিতে কন্সাল জেনারেল বললেন, এমনি জরাজীর্ণ এবং খুবই ক্ষুদ্র পরিসরের ভবণে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতি কর্মদিবসে গড়ে আড়াই শতাধিক প্রবাসীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে ডাকযোগে সার্ভিস। এছাড়া দৈনিক টেলিফোন রিসিভ করা হচ্ছে ৫ শতাধিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এনভিআর  (নো ভিসা রিক্যুয়ার্ড) প্রদান করা হয় আবেদন গ্রহণের দিনেই। তিনি জানান, জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১০ মিশনে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৪০ মিশনের মধ্যে নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটও রয়েছে, যখন প্রবাসীরা এখান থেকেই এনডিআই পাবেন। 

নিউইয়র্ক কনস্যুলেট অফিসে কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদার আহ্বানে ৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্কস্থ প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ মিডিয়া ব্যক্তিত্বগণের সাথে নানা ইস্যুতে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কনস্যুলেটের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল এস এন নাজমুল হাসান, ফার্স্ট সেক্রেটারি (কন্স্যুলেট) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী, কাউন্সেলর এবং হেড অব চ্যান্সেরি ইসরাত জাহান এবং আসিফ আহমেদও ছিলেন। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে যোগদানের পর মিডিয়ার সাথে এটাই কন্সাল জেনারেলের আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ। 

কনসাল জেনারেল হিসেবে তিনি তাঁর লক্ষ্য, কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগ সমূহের ব্যাপারে সবাইকে অবহিত করেন। তিনি কনস্যুলেটের সেবার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে কনস্যুলেট জেনারেলের আন্তরিকতা ও নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার কথা ব্যক্ত করেন। এরপর তিনি বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায়, সমাজ ও দেশ গঠনে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন। 

মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা এ ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি যোগ করেন, সকলের প্রচেষ্টায়, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে যা ২০২৬ সালে পূর্ণরূপে স্বীকৃতি পাবে। তিনি ২০০৮-০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান/ক্রমউন্নয়নশীল অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। তিনি মিডিয়া ব্যক্তিত্বের এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিষয়সমূহ জনগণের সামনে, বিশের দরবারে তুলে ধরার আহ্বান জানান। কনসাল জেনারেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত মিডিয়া ব্যক্তিত্বগণকে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আয়নার সাথে তুলনা করে বলেন, তারা ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের অশেষ কল্যাণ সাধন করেন। 
স্বাগতিক দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, অর্থনৈতিক কূটনীতি, জনবান্ধব কূটনীতিকে কনসাল জেনারেল তার নিউইয়র্ক মিশনের মূল লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেন। বাংলাদেশের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যোগসূত্র রক্ষায়, প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রচার ও প্রসারে কনস্যুলেট জেনারেলের নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় সকল প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের বিষয়, সার্বজনীন পেনশন স্কীমসহ বিভিন্ন বিষয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেন। 
নিউইয়র্কে সোনালী ব্যাংক/বাংলাদেশের যেকোন রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ শাখা খোলার বিষয়ে প্রবাসীদের দাবি সরকারকে অবহিত করবেন মর্মেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। 

উপস্থিত সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বগণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি কনস্যুলেট জেনারেলের চলমান সেবা ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য তারা কনসাল জেনারেলকে ধন্যবাদ জানান। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর