১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:২৩
অভিবাসন ইস্যুতে বাইডেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা টেক্সাস গভর্নরের

দেখামাত্র গ্রেফতার ও বহিষ্কারের নতুন বিধি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

দেখামাত্র গ্রেফতার ও বহিষ্কারের নতুন বিধি

গ্রেগ অ্যাবোট

অভিবাসন ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুংকারের পরিপূরক একটি বিধি জারি করলেন টেক্সাসের রিপাবলিকান স্টেট গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট। এরফলে টেক্সাসে বেআইনীভাবে প্রবেশকারি অভিবাসীদের গুরুতর অপরাধী হিসেবে স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করবে এবং ইমিগ্রেশন কোর্টে কেউ সারেন্ডার করলে অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেও রেহাই পাবে না। জজ সংশ্লিষ্টদের পার্শ্ববর্তী মেক্সিকো-তে বহিষ্কারের নির্দেশ দেবেন। এর মধ্য দিয়ে টেক্সাসের গভর্নর সরাসরি যুদ্ধে নামলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তথা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

এ নির্দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন-সহ বেশ কটি মানবাধিকার সংস্থা আদালতে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। টেক্সাস স্টেট পার্লামেন্টের ডেমক্র্যাট সদস্যরাও বিরূপ ধারণা পোষণ করেছেন রিপাবলিকানদের যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থি প্রক্রিয়ায় হাঁটার জন্যে। 

উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর এসবি৪ নামক এই বিধি আদালতে আটকানো সম্ভব না হলে তা মার্চ থেকে কার্যকরী হবে। আরো উল্লেখ্য, জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হবার পরদিন থেকেই মানুষের স্রোত শুরু হয়েছে সেন্ট্রাল ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। এদের সিংহভাগই টেক্সাস সীমান্তে ঢুকেছে এবং প্রতিদিনই তা অব্যাহত রয়েছে। গিজগিজ করছে টেক্সাসের অলিগলি। এ অবস্থায় বিতশ্রদ্ধ টেক্সাসের গভর্নর গত ১৪ মাসে কমপক্ষে ৩ লাখ অভিবাসীকে বাসে ভরে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, বস্টন, লসএঞ্জেলেসসহ ডেমক্র্যাট-শাসিত সিটিসমূহে পাঠিয়েছেন। 

এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত অক্টোবরে ১৮৮৭৭৮ জনকে আটক করা হয় শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে। এ সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে ১৪% কম। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৪০৯৮৮। এর বাইরে আরো অনেকে সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়া এবং আরিজোনায় ঢুকে পড়েছে। সারা আমেরিকায় গত অর্থ বছর বেআইনীভাবে ঢুকে পড়েছে ২৪ লাখের অধিক অভিবাসী। সে সময়ে বহিষ্কারের সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ। এরফলে আগে থেকেই বেআইনীভাবে বসবাসকারি প্রায় সোয়া কোটির সাথে এসব অভিবাসী যোগ হয়েছে। জনসংখ্যাগতভাবে বিরাট একটি সমস্যা হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন অথবা সিনেট-কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যরা কোন আমলেই নিচ্ছেন না। এদেরকে অন্তত: ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করা হলেও তারা ভয়হীন চিত্তে কাজকর্ম করে দিনাতিপাতের সুযোগ পেতেন বলে অনেকে মনে করছেন। 

অভিবাসনের সমস্যাটি ছিল বাইডেনের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম একটি ইস্যু। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করতে আন্তরিক কোন উদ্যোগ না নেয়ায় হিসপ্যানিক ভোটারের সিংহভাগ হতাশ হয়েছেন। এশিয়ান ভোটারেরাও আগের মত জোর পাচ্ছেন না পুনরায় বাইডেনকে জয়ী করতে। নতুন প্রজন্মের ভোটারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে এসেছে। তেমনি একটি পরিস্থিতির মধ্যে টেক্সাসের গভর্নর কর্তৃক তার স্টেটে বেআইনীভাবে প্রবেশকারীদেরকে গুরুতর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার ঘোষণাটি সামনের নির্বাচনী ময়দানকে আরো উত্তপ্ত করতে পারে। 

উল্লেখ্য, টেক্সাসের গভর্নরের এই বিধি জারির ঘটনাটি ঘটলো দুদিন আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক ‘অবৈধ অভিবাসীরা আমেরিকাকে বিষাক্ত করে তুলছে’, পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে ঢালাওভাবে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নেবেন এবং সীমান্তের পুরো এলাকায় দেয়াল নির্মাণের কাজ আবারো শুরু করবেন-বলার পর। অর্থাৎ অভিবাসন বিরোধী প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত ট্রাম্পকে আরো উজ্জীবিত করবে বলে সুধীজনের আশংকা। মেক্সিকো বরাবর ১২৫৪ মাইল সীমান্ত রয়েছে টেক্সাসের। ঈগল পাস এবং ডেল রায়ো দিয়ে হাজার হাজার বিদেশী ঢুকছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাইডেনের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে সীমান্ত রক্ষী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের লোকজন এদের ঠেকাতে তেমন কোন ভূমিকায় নেই। স্টেট গভর্নরের নতুন বিধি কার্যকর হলে এমন অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। একইসাথে টেক্সাস সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ট্রাম্প আমলে। বাইডেন তা থামিয়ে দিয়েছেন। সেই অসমাপ্ত দেয়ালের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরুর জন্যে স্টেট গভর্নর তাৎক্ষণিকভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণাও দিয়েছেন। 
এ বিধিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি হিসেবে অভিহিত করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সিনিয়র স্টাফ এটর্নী ডেভিড ডনেটি বলেছেন, টেক্সাসের এককভাবে এমন কোন বিধি জারির এখতিয়ার নেই যে কাগজপত্রহীনদের গ্রেফতার ও বহিষ্কার করা যায়। আমরা ফেডারেল কোর্টে যাচ্ছি এই বিধিকে বৈআইনী ঘোষণার দাবিতে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর