১৫ মার্চ, ২০২৪ ১১:১৮

টাইমস্ স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে বাংলা বর্ষবরণের মহড়া

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

টাইমস্ স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে বাংলা বর্ষবরণের মহড়া

‘আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা হামলাবাজ/আমাদের শান্তি সুখ করতে চায় লুটতরাজ।/জোট বাঁধো তৈরি হও যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ/তোলো আওয়াজ তোলো আওয়াজ/যুদ্ধ নয় যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ’, ‘মানুষ হ, মানুষ হ. আবার তোরা মানুষ হ, অনুকরণ খোলস ভেদী/কায়মনে বাঙালি হ’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট/রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী/ওরে ঔ তরুণ ঈশাণ/ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদী’ এবং ‘আগুণের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে’/ ইত্যাদি সব সঙ্গীতের আবহ বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে ছড়িয়ে বাঙালিরা নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। 

গত বছর নিউইয়র্ক সিটি তথা সমগ্র আমেরিকায় বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে বর্ষবরণের প্রথম অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতায় এবার ‘এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ আরো সুসংগঠিতভাবে, আরো বলিষ্ঠতার সাথে আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৯ মার্চ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃষ্টি এবং হিমেল হাওয়া সত্বেও জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিল্পীগণের সমাগমে। তবে ক্রমান্বয়ে এই মহড়ার স্থান ডাইভার্সিটি প্লাজায় (আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে) সরাতে হবে। কারণ এবারের আয়োজনের স্লোগান হচ্ছে ‘সহস্রকণ্ঠে ১৪৩১ বাংলা নতুন বছরকে বরণ’। এটি ছিল দ্বিতীয় মহড়া। সঙ্গীতে নেতৃত্ব দেবেন মহিতোষ তালুকদার তাপস। রোড আইল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। 

তাপসের নির্দেশনা ও পরিচালনায় সকল শিল্পী মুগ্ধ। কঠিন সব শব্দাবলীও আত্মস্থ করতে সক্ষম হচ্ছেন সঙ্গীতের মোহনায়। গাণ শেখানোর এই কঠিন মহড়াকে তাপস নানা কথায় প্রাণবন্ত করেই এগিয়ে নেন মহড়ার যাবতীয় কার্যক্রম। তবে সম্ভবত: নিজের মধ্যে নিজেকে নিবিষ্ট করে রাখায় স্বীকার করতে চাননি কলকাতায় বসবাসরত বাঙালিদের অসহায়ত্বের কথা। তারা ভারতে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মত নিগৃহিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বহুজাতিক সমাজ হয়েও নিউইয়র্কের মত জায়গায় যেভাবে প্রবাসীরা বাঙালিত্ব জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন, ততটা নেই কলকাতায়-এটা 

সেখানকার বিদগ্ধজনেরাই উল্লেখ করছেন। হিন্দির প্রতি আনুগত্য এতটাই বেড়েছে সেখানকার অলি-গলিতে আগের মত বাংলা সাইন চোখে পড়ে না। তেমনি অবস্থায় গত বছর অথবা সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় সঙ্গিত পরিবেশনের সময়ের আহমরি ভাবের প্রসঙ্গ বাংলাদেশের খাঁটি বাঙালি হিসেবে টিকে থাকতে আগ্রহীগণের সামনে উপস্থাপনে উচ্ছ্বাস না থাকাই শ্রেয় বলে অনেকের মন্তব্য। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বৈশাখ বরণে খাঁটি বাঙালির আমেজ উজ্জীবিত রাখতে তাপসের আন্তরিকতায়। সম্ভবত: এ কারণেই টাইমস স্কোয়ার আসন্ন বৈশাখ বরণের দিন নব-আনন্দে উদ্বেলিত হবে বাঙালি ছেলে-মেয়ে আর নারী-পুরুষের উচ্ছ্বল উপস্থিতিতে। 

দীর্ঘসময় মহড়ার এক পর্যায়ে নিউইয়র্ক অঞ্চলের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কাবেরি দাসের পরিচালনায় শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখ করার মত। আমেরিকায় জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের এই শিল্পীরা ‘তাকডুম, তাকডুম বাজায় বাংলাদেশের ঢোল’ এবং ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গান দুটি কণ্ঠে তোলে এবং কোরিওগ্রাফির মহড়া করেন। শেষে সাংবাদিকদের সামনে আয়োজক সংগঠন ‘এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’র  সভাপতি বিশ্বজিত সাহা বলেন, এ বছর টাইমস স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করার সর্বপ্রকার প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ববাঙালির ঐতিহাসিক এই আয়োজনে বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্তত দশটি দেশের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে। গত বছর টাইমস্ স্কয়ারে শতকণ্ঠে ১৪৩০ বাংলা বর্ষবরণ করে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বাঙালি সমাজ একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। এবার আরেকটি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি আমরা। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা কামনা করি। এসময় টাইম স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে বিশ্ব বাঙালির ১৪৩১ বাংলা বর্ষবরণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবরেণ্য শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম এক ভিডিও বার্তায় সকলকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগদানের আহ্বান জানান। এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সহ-সাধারণ সম্পাদক তানভীর কায়সারের পরিচালনায় মহড়া অনুষ্ঠানে বর্ষবরণ নিয়ে নিজ নিজ স্বপ্ন আর পরিকল্পনা আলোকে বক্তব্য রাখেন শিল্পী কাবেরী দাস, লুৎফুন নাহার লতা, মহিতোষ তালুকদার তাপস, কলামিস্ট সামছুদ্দিন আজাদ, গবেষক নুরুল বাতেন, প্রজন্ম একাত্তরের সভাপতি শিবলী ছাদেক প্রমুখ।

লুৎফুন নাহার লতা বলেন, বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস টাইমস্ স্কয়ারে তুলে ধরার জন্য এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বিশ্ব বাঙালির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গত বছর টাইমস্ স্কয়ারে শতকন্ঠে বাংলা বর্ষবরণ ছিল এককথায় ঐতিহাসিক। এবছর সহস্রকণ্ঠে বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আমার বিশ্বাস।

শিল্পী মহিতোষ তালুকদার তাপস বলেন, সহস্রকণ্ঠে বাংলা বর্ষবরণের নেতৃত্বে আমাকে রাখা হয়েছে, বিশ্ব বাঙ্গালীর দেওয়া এই গুরু দায়িত্ব সবাই মিলে সম্পন্ন করব সেই প্রত্যাশা। এবার শতাধিক শিশু-শিশোর নিয়ে টাইমস্ স্কয়ারে নতুন পরিবেশনা উপস্থাপন করা হবে, এতে পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অভিবাসী সমাজের নতুন প্রজন্ম উদ্ধুদ্ধ হবে বাংলা সংস্কৃতি চর্চায়।

এছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রকাশিতব্য স্মারকগ্রন্থের প্রধান সম্পাদক নুরুল বাতেন তার বক্তব্যে ‘দেশ-বিদেশে বাংলা বর্ষবরণ’ কে উপজীব্য করে এবছর স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হবে বলেন জানান। তার সাথে সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর