১৭ মে, ২০২৪ ১০:২০

নিউইয়র্কে ৪ দিনব্যাপী বইমেলা

নতুন প্রজন্মের কবি-লেখক-সাহিত্যিক-শিল্পীদের জন্যেও একটি দিন

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি:

নিউইয়র্কে ৪ দিনব্যাপী বইমেলা

২৪ মে থেকে ৪ দিনব্যাপী ‘নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা-২০২৪’র ৩৩তম আসরে কমিউনিটির প্রত্যাশার পরিপূরক বেশ কিছু পর্ব যুক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বইমেলা কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস জানান, ‘যত বই তত প্রাণ’ স্লোগানে এই মেলাকে গত বছরের অভিজ্ঞতায় প্রবাস প্রজন্মকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িত করার প্রয়াস রয়েছে। 

নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সেমন্তী ওয়াহেদের নেতৃত্বে আমেরিকা তথা প্রবাসে জন্মগ্রহণকারী অথবা বেড়ে উঠা কবি, সাহিত্যিক-লেখক-সাংবাদিক-শিল্পী-অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসবেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিশেষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হওয়া নতুন প্রজন্মের ৪ কবির কবিতা শুনবো, ৪ লেখকের বক্তব্য শুনবো, রান্না কীভাবে আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে উঠছে তা নিয়ে ৩ জন রন্ধন বিশেষজ্ঞ কথা বলবেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় ৩ জন ইনফ্লুয়েন্সার কথা বলবেন। মূলকথা হচ্ছে, তরুণদেরকে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত করা। তরুণ শিল্পীদের গান তো থাকবেই। তাছাড়া তরুণ শিল্পীরা দ্বৈতকন্ঠেও গাইবেন। সোমবার বিকেল ৩টা থেকে খোলামঞ্চে নতুন প্রজন্মের বিবিধ পরিবেশনা থাকবে। ওপেন মাইকে কবিতা আবৃত্তি করবে, পড়বে, গানস গাইবে, যা খুশি তাই করতে পারবে। শিশুমঞ্চে শনি ও রবিবার প্রোগ্রাম থাকবে।  

বইমেলা আয়োজনের সর্বশেষ প্রস্তুতি আলোকে ১৪ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মেলা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতাকারি এবং কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা জিএফবি গ্রুপের কর্ণধার গোলাম ফারুক ভুইয়া এই বইমেলাকে বিশেষ এক অবস্থানে উন্নীত করতে নিউইয়র্কের গণমাধ্যমকর্মীগণের নিরন্তর অবদানের জন্যে তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে আরো জানান যে, এই মেলার মধ্যদিয়ে লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার, যার অর্থমান তিন হাজার ডলার। এই পুরস্কার ইতিপূর্বে পেয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, শামসুজ্জামান খান, আসাদ চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, সেলিনা হোসেন প্রমুখ। আরেকটি পুরস্কার দেয়া হয় শ্রেষ্ঠ বইয়ের জন্যে এবং সেটির নাম হচ্ছে কবি শহীদ কাদরী স্মৃতি গ্রন্থ পুরস্কার’। যার মূল্যমান এবার বাড়িয়ে ৫০০ ডলার থেকে এক হাজার ডলার করা হয়েছে। তৃতীয় পুরস্কার ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’, এটি দেয়া হয় মেলায় অংশগ্রহণকারি স্টলসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্টলকে।  

মেলার কমিটির চেয়ারপার্সন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী জানান যে, এই মেলার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে একইভাবে মেলাকে ঘিরে প্রবাসে লেখালেখির হাতও শানিত হয়েছে। অত্যন্ত আনন্দের সাথে উল্লেখ করছি যে, এই বইমেলাকে নিয়ে প্রবাসী লেখকদের ২০টি বই প্রকাশিত হয়েছে-যা পাওয়া যাবে মেলায়। এছাড়া, এবারের মেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শনের কর্মসূচিও রয়েছে। প্রবাস প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জোরালোভাবে পৌছে দেয়ার অভিপ্রায়ে এ সংযোজন। 
উদ্যোক্তা সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র সিইও বিশ্বজিৎ সাহা এ সময় আরো যোগ করেন যে, বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা, জার্মানি, অষ্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখকগণের সদ্য প্রকাশিত ১০ হাজার বই নিয়ে মেলায় থাকবে ৪০টি স্টল। বাংলাদেশ ও কলকাতার পর বাংলা বইমেলার এটি হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম মেলা। 
এ সময় আরো জানানো হয় যে, জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ২৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় খোলামঞ্চে বৃন্দগান আর নৃত্যের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। পরদিন শনিবার সকাল ১১টা থেকে একইভাবে রাত ১১টা পর্যন্ত নানা কর্মসূচিতে মুখরিত থাকবে মেলা প্রাঙ্গন ও ভেতরের মূলমঞ্চ। এদিনের সেমিনারের বিষয় হচ্ছে ‘১৯৭১ এর জেনোসাইড কেন এখনো স্বীকৃত নয়’। ২৬ মে রবিবার অনুষ্ঠিত কর্মসূচির অন্যতম হচ্ছে ‘প্রবাসের সাহিত্য মূল্যহীন’ শীর্ষক সেমিনার। কথোপকথনে থাকবে ‘বাংলা নাটকের এদিন সেদিন। সমাপনী দিবসের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘কীভাবে পান্ডুলিপি প্রস্তুত করবেন’ শীর্ষক আলোচনা।  

সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে আরো ছিলেন বইমেলা কমিটির সাবেক আহবায়ক ফেরদৌস সাজেদীন, সউদ চৌধুরী এবং নাসিমুন্নাহার নিনি। এসময় বিতরণ করা এক তালিকায় আমন্ত্রিত লেখক/বুদ্ধিজীবীগণের নাম জানানো হয়। অতিথির মধ্যে রয়েছেন মুহম্মদ নূরুল হুদা (মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি), মোহাম্মদ ইমরান (বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন ডিসি), মো. নাজমুল হুদা (কনসাল-জেনারেল, নিউইয়র্ক), ডাঃ সারোয়ার আলী ( ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা), সারা যাকের (ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা), ড. আরেফিন সিদ্দিকী ( প্রাক্তন উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ফরিদুর রেজা সাগর (কথাসাহিত্যিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই), সৌমিত্র শেখর দে (উপাচার্য, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়)। অতিথির তালিকায় আরো আছেন ড. মিল্টন বিশ্বাস (অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), লুৎফর রহমান রিটন (একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার, কানাডা), সালমা বাণী (কথাসাহিত্যিক, কানাডা), সাইফুল্লাহ মহমুদ দুলাল (কবি, কানাডা), জসীম মল্লিক (লেখক, কানাডা), মাসরুর আরেফিন (কথাসাহিত্যিক ও সিইও, সিটি ব্যাংক, ঢাকা), শিহাব শাহরিয়ার (কবি ও ফোকলোর গবেষক), ওমর কায়সার (কবি ও শিশু সাহিত্যিক), কবি আসাদ মান্নান এবং সৈয়দ আল ফারুক, ফারুক আহমদ (সাহিত্য সম্পাদক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ), ড. প্রহ্লাদ রায় (অধ্যাপক, বিশ্ব ভারতী), রূপা মজুমদার (সম্পাদক, শুকতারা ও নবকল্লোল, কলকাতা), জাফর আহমদ রাশেদ (কবি ও প্রধান নির্বাহী, বাতিঘর), দীপঙ্কর দাস (বাতিঘর), মাহবুব আজিজ (বিভাগীয় সম্পাদক, দৈনিক সমকাল), কবি সজল আহমেদ, মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ (সম্পাদক- ঊষালোক)।
আমন্ত্রিত শিল্পী (গায়ক, অভিনেতা)’র মধ্যে আছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নিরুপমা রহমান (অস্ট্রেলিয়া, গবেষক ও কণ্ঠশিল্পী), আফজাল হোসেন (অভিনেতা ও পরিচালক), আহকাম উল্লাহ (আবৃত্তি শিল্পী), লিলি ইসলাম (সঙ্গীত শিল্পী), নাহিদ নাজিয়া (সঙ্গীত শিল্পী), আহমেদ হোসেন (আবৃত্তি শিল্পী, টরন্টো)। স্থানীয় শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন তাজুল ইমাম, শাহ মাহবুব, শবনম সায়েলা তনুকা, নাজু  আখন্দ, শাহীন হক, জাফর বিল্লাহ, বন্যা মির্জা, অনিন্দিতা কাজী, শিরীন বকুল, আলভান খান, জি এইচ আরজু, ফারুক আজম, আবীর আলমগীর, সাবিনা নীরু, মুমু আনসারী, ন্যাস নাসরীন, প্রিয়তা সায়রা ইমাম ও মেহেদী ইমাম।
মেলায় অংশগ্রহণকারী সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা, অন্য থিয়েটার (টরন্টো), জনকন্ঠে নজরুল (নিউজার্সি), বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন, সঙ্গীত পরিষদ, উদীচী, আড্ডা, বাফা, আনন্দধ্বনি, আশিস (আমরা শিশুদের সঙ্গে), ছড়াটে, সাহিত্য একাডেমি, রাইটার্স ক্লাব এবং লেখকের অঙ্গন।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর