১৭ মে, ২০২৪ ১৬:০৯

নিউইয়র্কে মুনীর চৌধুরী স্মরণে নাট্যসন্ধ্যা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র:


নিউইয়র্কে মুনীর চৌধুরী স্মরণে নাট্যসন্ধ্যা

প্রখ্যাত নাট্যকার-ভাষাবিজ্ঞানী, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী স্মরণে নিউইয়র্কে ১১-১২ মে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো ‘জমা খরচ ইজা’, ‘মুখরা রমনী বশীকরণ’ এবং ‘মিলিটারি’ নাটক। মুনীর চৌধুরী নাট্যসন্ধ্যায় এ আয়োজনে ছিল ‘বাংলা থিয়েটার’ ও ‘শিল্পাঙ্গন’ নামক দুটি সংগঠন। সহযোগিতা দেয় ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ তথা বাফা। 

জ্যামাইকা নাট্যমঞ্চে দুটি পূর্ণাঙ্গ এবং ‘মুখরা রমনী বশীকরণ’র অংশবিশেষের মঞ্চায়ন বিদগ্ধ দর্শক-শোতার প্রায় সকলেই বিমুগ্ধচিত্তে তা উপভোগ করেছেন। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির মতোই করোনা থেকে জেগে উঠার পরিক্রমায় ২০ ডলারের টিকিটে জীবনধর্মী এবং ইতিহাসভিত্তিক ৩ নাটক পরিবেশনার ঘটনাটিও প্রবাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে চাঙ্গা করতে অপরিসীম ভূমিকা রাখলো বলে অনেকের ধারণা। সমাপনী দিবসে হাওয়াই থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশের অনরারী কন্সাল জেনারেল জান রুমি। সাথে ছিলেন তার স্ত্রী বিথি রুমি। তারা উভয়েই আপ্লুত নাটক দেখে। অভিনন্দন জানিয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। নাট্যসন্ধ্যায় বিশেষ সহযোগিতাকারিগণের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া তন্ময় হয়ে নাটক দেখার পর বললেন, মাঝেমধ্যেই এমন আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে এই প্রবাসে। কাদের মিয়া বললেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রতিটি চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়ায় নাটকের মূল বক্তব্য দর্শকের কাছে আরো সহজবোধ্য হয়েছে। জীবন-জীবিকা নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও সংশ্লিষ্টদের এই অবদান কম্যুনিটিকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছি। 
কয়েক দশক আগে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে বেইলি রোডের নাট্যমঞ্চে এবং বিটিভিতে ‘জমা খরচ ইজা’ নাটকে অভিনয়কারি রেখা আহমেদকে এ সময় বিশেষ সম্মান জানানো হয়। উল্লেখ্য, সে সময় মুজিব বিন হকও (বর্তমানে নিউইয়র্কস্থ বাংলা থিয়েটারের কর্ণধার) অভিনয় করেছিলেন। একইসাথে এ প্রজন্মের অভিনেতা, নাট্য নির্মাতা তৌকির আহমেদকেও মঞ্চে ডেকে সম্মান জানানো হয়।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তর্পণে ‘মিলিটারি’ নাটকটি ছিল সময়োপযোগী। কারণ, এই প্রবাসে অনেক জ্ঞানপাপী এখনো গোলাম আজমের মত ঘাতকদের ‘ফেরেস্তার মত মানুষ’ হিসেবে অভিহিত করার দু:সাহস দেখায়। একাত্তরে পাক হায়েনার দোসর তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারিরা নানা বেশে এই প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে নিপতিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। সে সব বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে এমন নাটকের মঞ্চায়নের অবদান অপরিসীম বলে প্রবাসীরা মনে করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না প্রখ্যাত নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটকে ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি নানা কৌশলে জাগ্রত রেখে প্রকারান্তরে একাত্তরের ঘাতকদের বাঙালিরা যাতে ভুলে না যান সে চেষ্টা করে গেছেন। 
মিলিটারি নাটকে একাত্তরের সেই দুঃস্বপ্নের দিন, কার্ফিউতে জনজীবন স্থবির। তার ভেতর পাক সামরিক জান্তার নির্বিচারে বাঙালি হত্যা। সেখানে ব্যক্তিগত সুখ, দু:খ, প্রেম, ভালবাসা সব রূপান্তরিত হয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। নিরীহ বাঙালি এক অলৌকিক শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। রুখে দাঁড়ায় মিলিটারির গণহত্যা। সেই দুঃসাহসিক মুক্তিসংগ্রামের একটি কাব্যময় দৃশ্যের চিত্রায়ন করেছেন বরেণ্য নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। তিনি নিজেও সেই ভয়াবহ সময়ের ভেতর দিয়ে পরিভ্রমণ করেছেন এবং শাহাদৎ বরণ করেছেন। শহীদ হয়েছেন। একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টি দিয়েই তার প্রতি প্রবাসের ‘বাংলা থিয়েটার’র শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ছিল নাটকটির মঞ্চায়ন। মুনীর চৌধুরীর এ নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন আনোয়ার সেলিম। অভিনয় করেছেন শফিউল আলম, আনোয়ার সেলিম, লিটন ফিলিপ্স, মেহজাবিন মেহা, রাইওসি বিশ্বাস। 

ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, পারিবারিক সন্দেহ, অবিশ্বাস, ইত্যাদি মানবজীবনের চিরন্তন বৈশিষ্টকে রঙ্গরসের উপকরণে মুনীর চৌধুরী রূপায়ণ করেছেন  ‘জমা খরচ ইজা’ নাটকে। এ নাটকের মূল গল্প ও রসকে নিউইয়র্ক তথা প্রবাসের জীবন-সংগ্রামের সাথে বিশ্লেষণের অভিপ্রায়ে নব-নাট্যায়নের প্রয়াস চালানো হয়েছে। তবে তা মুনীর চৌধুরীর মূল নাট্যভাবনাকে সমুন্নত রেখেই। নাটকটির নির্দেশক মো. নজরুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। মূল নাটকের নাম ছিল ই অ্যান্ড ও সি। রচনা করেছিলেন ইলিয়ট ক্রুশে উইলিয়ামস। রূপান্তর করেছেন মুনীর চৌধুরী। এতে অভিনয় করেন সুলতানা খান, শাহরুখ তাসনীম, সোনিয়া, পান্না, শফিউল আলম, আহসান উল্লাহ, মো. নজরুল ইসলাম এবং শেখ তানভীর। প্রযোজনায় ছিল শিল্পাঙ্গন। 
এ আয়োজনে খ্যাতনামা অভিনেত্রী শিরীন বকুল নির্দেশিত খন্ডনাটক ‘মুখরা রমনী বশীকরণ’ও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘দ্য টেমিং অব দ্য শ্রু’ নাটকটির রচয়িতা হচ্ছেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। অনুবাদ করেছেন মুনীর চৌধুরী। অভিনয় করেন শিরীন বকুল এবং কামাল মোহাম্মদ।  

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর