১০ জুন, ২০২৪ ১৬:৩৭

তপ্ত মরুর বুকে উটের খামারে প্রবাসীদের বেদুইন জীবন

আরব আমিরাত প্রতিনিধি:

তপ্ত মরুর বুকে উটের খামারে প্রবাসীদের বেদুইন জীবন

পরিবারের সচ্ছলতায় জীবিকায় তাগিদে প্রিয়জনের মায়া ত্যাগ করে বহু বাংলাদেশি পাড়ি জমান ভিন দেশে। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটান দেশের অর্থনীতিতে রাখেন অসামান্য ভূমিকা। তাদের নিদারুণ প্রবাস জীবনের খবর ক'জন রাখেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে মরু অঞ্চলে উটের খামারের করুণ জীবনের চিত্র সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির গভীরে গেলে কোথাও চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ বাড়ির মতো বেশ কিছু ক্যারাভ্যান। শহর থেকে আসা আমিরাতি খামার মালিকরা সপ্তাহের ব্যস্ততা ছাপিয়ে তপ্ত মরুর এই জায়গাগুলোতে বিশ্রাম করেন। ক্যারাভ্যানগুলোর সামনে পাইপের বেষ্টনি দিয়ে বিশাল জায়গা জুড়ে উটের খামার। বেয়াড়া আর বিশালাকৃতির উটদের জন্য আলাদা বেষ্টনি। উট শাবকদের জন্যেও বাড়তি সতর্কতা। রয়েছে আলাদা খোয়াড়। আর এদের খাবার পরিবেশন, দুধ দহন, মলমূত্র পরিস্কার, গোসল, যত্নআত্তি সবকিছুই করতে হয় এই বাংলাদেশিদের। শ্রমঘণ্টার ধরা বাধা নেই বরং সূর্যের উদয়-অস্ত জুড়ে চলে এমন কাজ। কখনোবা দিনরাত সমান কাটে তাদের।

কখনো গরমের উত্তাপ, কখনো তীব্র শীতের কাপুনি। মরুর প্রান্তরে বালিবেষ্টিত অঞ্চলে তবুও জীবন জীবিকার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন কিছু বাংলাদেশি। 

সিলেট কানাইঘাটের রিজুওয়ান আহমেদ দুই বছর ধরে উটের খামারে কাজ করছেন। ভোর ৪ টা থেকে কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমে উটের কাপড় পরিয়ে ৬ কিলোমিটার মরুভূমিতে চক্কর দিয়ে সকাল ৮ টায় এসে তাদের খাবার ও পানি পরিবেশন করে। এরপর তারা তাদের রুমে গিয়ে নিজের জন্য খানা তৈরি করে থাকেন। আবার দুপুর হতে কাজে ফিরতে হয় তাদের। তিনি বলেন, ক্রমাগত জীবন তাদের আরবের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা লাল বালিকে সঙ্গী করে তাদের জীবন পার হচ্ছে এসব উটের সাথেই।

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চট্টগ্রামের কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার আব্দুর রহমান কাজ করছেন আজমান রাহমানিয়া মরু অঞ্চলে। খুব সামান্য বেতনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। মাসে ৮০০ থেকে ১০০০ দিরহাম মিলে বাংলাদেশি টাকায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মিলে তাদের। এই মুরুর বুকে সঙ্গী হিসেবে রয়েছে তারা ১৩ জন। তার মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন পাঁচজন, ভিন দেশী আটজন। 

কেমন কাটে তাদের সাথে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তারা এখন আপনজন হয়ে গিয়েছে। নিজ দেশ আর ভিন দেশের মানুষের কোনো তফাত নেই। তিনি বলেন, উটের কাজ ছেড়ে যারা অন্য কাজে গিয়েছে তারা কিছুদিন পর আবার উটের কাজে ছুটে এসেছেন। তাদের অন্য কাজ ভালো লাগে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিলেট ও গোলাপগঞ্জের মেজবাহ উদ্দিন ও রুপন মিয়া এক আরবের খামারে উট-ছাগল-বকরির যত্ন পরিচর্যার কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন তারা৷ মাস শেষ কোনো ছুটি মিলে না তাদের। উট-ছাগলের পাশাপাশি তারা নিজেদের জন্য সবজি চাষ করে থাকেন। এই গরমের দিনে কিভাবে  কাজ করেন জানতে চাইলে তারা জানান, গরম তাদের জন্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তপ্ত মরুভূমিতে উটের খামারেই তাদের জীবিকার জায়গা। তাই তারা এই গরম অনুভব করেন না।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর