১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০৮

জীবনের জয়গানে ডব্লিউইউএসটির বর্ণাঢ্য সমাবর্তন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

জীবনের জয়গানে ডব্লিউইউএসটির বর্ণাঢ্য সমাবর্তন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একমাত্র ইউনিভার্সিটি ‘ডব্লিউইউএসটি’(ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি  অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)’র ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষার্থীগণের মধ্যে সার্টিফিকেট ও সম্মাননা প্রদানের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হলো ২৯ জুন রাজশানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়া স্টেটের আলেক্সান্দ্রিয়া সিটির একটি মিলনায়তনে। 

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ইউএস কংগ্রেসম্যান এবং স্টেট সিনেটরসহ পেশাগতভাবে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত বিশিষ্টজনেরা নিজেদের আজকের অবস্থানে উন্নীত হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন। বলেছেন, লক্ষ্যের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে কঠোর অধ্যাবসায়ে আমেরিকান স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব এবং তেমন একটি সিঁড়ি অতিক্রমে সক্ষম হলেন বিশেষ কৃতিত্বের সাথে গ্র্যাজুয়েশনকারী শিক্ষার্থীরা। ২১৩ জন শিক্ষার্থী অর্জন করলেন তাদের ব্যাচেলরস ও মাস্টার্স ডিগ্রি। এর মধ্যে স্কুল অব আইটি থেকে গ্রাজুয়েট হলেন- ১৫৮ জন, আর স্কুল অব বিজনেস থেকে ৫৫ জন। বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডা, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরাও ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। 

গ্র্যাজুয়েশন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা তাদের মাথার ক্যাপের ওপরে বাঁধা টাসেলগুলো ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘুরিয়ে দেন। হাতে পাওয়া ডিগ্রির কপিটি উচ্চে তুলে ধরেন। এর মধ্য দিয়ে তারা জানিয়ে দেন, এটাই তাদের অর্জন। হলভর্তি দর্শকের তখন মুহুর্মুহু করতালি। 

ভার্জিনিয়াস্থ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ২০২৪ সালের সমাবর্তন উপলক্ষে দুপুর না গড়াতেই নব্য গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ক্যাম্পাস। অতিথিরা আসতে শুরু করেন তারও কিছুটা পরে। ততক্ষণে কালো গাউনের ওপর কেউ লাল ও নীল রঙের ব্যাচেলর'স হুড কেউবা কমলা ও লাল রঙা মাস্টার্স হুড পরে প্রস্তুত।

ঘড়ির কাঁটায় ২টা বাজতেই শুরু হলো আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের নেতৃত্বে লিডারশিপ প্রোসেশন শেষে অভ্যাগত অতিথি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ও শিক্ষকদের একটি দল মঞ্চে অবস্থান নেন। এরপর গ্র্যাজুয়েশন প্যারেড করে অডিটরিয়ামে ঢুকেন স্কুল অব আইটির শিক্ষার্থীরা। তারা গিয়ে বসলেন হলের ডান দিকের সারিতে। এরপরই অডিটরিয়ামে ঢুকলেন স্কুল অব বিজনেসের শিক্ষার্থীরা। তারা বসলেন বাম দিকের সারিতে।

আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হলো আনুষ্ঠানিকতা। যার অন্যতম ছিলো গ্র্যাজুয়েশন বক্তৃতামালা। কি-নোট স্পিকার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পররাষ্ট্র এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসম্যান গেরি কোনোলি। অন্যতম বক্তা ছিলেন ভার্জিনিয়া হাউজ অব ডেলিগেটসের সদস্য ক্যারেন কিজ-গামারা, জর্জিয়ার স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, ভার্জিনিয়ার স্টেট সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, চীনের এইচডিডি গ্রুপের পরিচালক ড. হুসেইন ভূঁইয়া, ফিনটেক ইকো সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এর কর্নধার ড. সাইফুল খন্দকার, ডব্লিউইউএসটির বোর্ড সদস্য সিদ্দিক শেখ, ডব্লিউইউএসটি স্কুল অব প্রফেশনালসের পরিচালক ও বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান ও অ্যাকসেনচুয়েটের সিইও ও বোর্ড সদস্য নাসিরুল হক এবং ভার্সিটির সিএফও ফারহানা হক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও বোর্ড চেয়ারম্যান আবুবকর হানিপ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন ঘোষণা করেন ও ধন্যবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক। 

কংগ্রেসম্যান গেরি কনোলি তার বক্তব্যে প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ও গ্র্যাজুয়েটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তোমাদের এই অর্জন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কমিউনিটির প্রতি অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে এই কংগ্রেসম্যান বলেন, তোমরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অংশিদার। নর্দার্ন ভার্জিনিয়া থেকে তোমরা গ্রাজুয়েট হয়েছো যেখানে বয়স্ক জনশক্তির দুই তৃতীয়াংশই ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী। আর ৩০ শতাংশের বেশিই রয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রিধারী। যে পরিসংখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের গড় পরিসংখ্যানের দ্বিগুণ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-প্রকৌশল ও গণিতে ডিগ্রি অর্জনের সময়োপযোগিতার কথা তুলে ধরে কংগ্রেসম্যান গেরি বলেন, প্রযুক্তিজ্ঞান ও দক্ষতাকে ব্যবহার করেই জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার, অপতথ্য ও সাইবার অপরাধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। “প্রযুক্তিকে আমরা ভালো কাজের জন্যই ব্যবহার নিশ্চিত করবো, খারাপ উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার প্রতিহত করবো,” বলেন গেরি কনোলি।

ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে গুরুত্বারোপ করেন খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশলের ওপর। শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক বৈশিষ্টাবলী দিয়ে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন।

"আজ আপনারা কেবল গ্র্যাজুয়েট হলেন তা নয়, একইসঙ্গে আপনারা অর্জন করলেন নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী দক্ষতা ও পরির্তনের কৌশল, যা আপনাদের ভবিষ্যত চলার পথ প্রশস্ত করবে," বলেন আবুবকর হানিপ।

শিক্ষার্থীদের কাছে জীবনের সংগ্রামের দিনগুলোকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যক্তিগত গল্প শোনান এই বাংলাদেশি আমেরিকান প্রযুক্তি শিক্ষা-উদ্যোক্তা। হানিপ জানান, দক্ষতা উন্নয়নে তার উদ্যোগ থেকে সুফল নিয়ে ২৫ হাজার মানুষ ও তাদের পরিবার আজ যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় তথা গোটাবিশ্বে তাদের জীবন মানে পরিবর্তন আনতে পেরেছেন।

ক্যারেন কিজ-গামারা তার বাল্যবেলার গল্প শোনান। কিভাবে তার বাবা তাকে শিখিয়েছিলেন সিট-আপের কৌশল। যার মধ্য দিয়ে জীবনময় শিক্ষার মূল্য তিনি উপলব্দি করেছেন। গ্র্যাজুয়েটিং শিক্ষার্থীদের তিনি আহ্বান জানান, প্রতিদিনই তারা যেনো নতুন কোনো অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন এবং কমিউনিটির উন্নয়নে অবদান রাখেন।

এবারের ‘ক্লাস অব ২০২৪’ এ দুই ভ্যালেডিক্টোরিয়ান শিক্ষার্থী ছিলেন কার্লোস ইসরায়েল মোরেন হারনান্দেজ ও জেনিফার আফরোজ চৌধুরী। স্কুল অব আইটি এবং স্কুল অব বিজনেস এর এই দুই সেরা শিক্ষার্থী তাদের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগের কথা উল্লেখ করে এর ফ্যাকাল্টি ও প্রশাসনের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। পরে শিক্ষার্থীদের হাতে একে একে তুলে দেওয়া হয় তাদের ডিগ্রি। স্কুল অব আইটির ডিরেক্টর অধ্যাপক অ্যাপোসটোলস এলিওপোলস এবং স্কুল অব বিজনেস এর ডিরেক্টর ড. মার্ক রবিনসন নিজ নিজ স্কুলের গ্রাজুয়েটদের হাতে এই ডিগ্রি তুলে দেন।

এরপর মাইক্রোফোন হাতে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন ঘোষণা করেন এবং সকলকে ধন্যবাদ জানান। নৈশভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর